রুটিন মাফিক ক্লাসেই সু-শিক্ষার মাধ্যমে দেশের মাদরাসাগুলো সমাজে আলোকিত মানুষ তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেছেন, কোরআন ও হাদিসের আলোকে মাদরাসাগুলোর ক্লাসেই সু-শিক্ষা দেয়া হয়। সুশিক্ষা ছাড়া সমাজে ভাল মানুষ তৈরি হয় না। বর্তমান সরকারের সময় দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে তা ধরে রাখতে সমাজে-নের্তৃত্বে সুশিক্ষিত-ভালো মানুষের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। দেশের মাদরাসাগুলোর ক্লাসের পাঠ্যেই নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক সুশিক্ষার মাধ্যমে দেশে আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করছে। কোনো জাতির শিক্ষায় যদি ইমানি দায়িত্ব না থাকে; শিক্ষালয়ে যদি নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত পাঠ্য থাকে সেটা জাতির জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইয়াবা-মাদকের ছড়াছড়ি তারই প্রতিফলন। কিন্তু চরিত্রগঠন ও নৈতিকতার শিক্ষার মাধ্যমে মাদরাসাগুলো সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গতকাল ফরিদপুরে কবি জসীম উদ্দীন হলে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আঞ্চলিক প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, দেশের শহর-বন্দর-গ্রামগঞ্জে বছরে তিন লক্ষাধিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আলেম-ওলামারা লাখ লাখ মানুষকে দ্বীনের এবং ইমানী শিক্ষা দেন। কোরআন-হাসিদের আলোকে আলেমদের ওই বয়ান থেকে মানুষ সৎ পথে চলার অনুপ্রেরণা পায়। নতুন প্রজন্মকে আগামীর আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এবতেদায়ী থেকে কামিল মাদরাসা পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ করে আলোকিত মানুষ গড়ার পথকে সুগম করতে হবে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের উদ্যোগে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মোঃ শামসুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আলহাজ্ব হযরত মাওলানা সাব্বির আহমেদ মোমতাজি, ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোঃ আবু ইউছুফ মৃধা, ফরিদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোঃ আনিসুর রহমান, রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল এরশাদ মোঃ সিরাজুম মুনীর, মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মোঃ শাহাদাৎ হুসাইন, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মোঃ আব্দুল কাইয়ুম মিয়া, শরিয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা তাছলিম উদ্দিন প্রমূখ। সম্মেলন পরিচালনা করেন ইকামাতেদ্বীন মডেল কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মোঃ কামাল হোসেন ও চন্দ্রপাড়া সুলতানিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা গিয়াস উদ্দিন।
বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা আঞ্চলিক এই সম্মেলনে আসা আলেম-ওলামা ও শিক্ষকদের মুখে মুখে ছিল মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রাহ.) নাম। প্রায় প্রত্যেক বক্তাই দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে বসানোর জন্য জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাবেক সভাপতি প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আব্দুল মান্নান (রহঃ) এর নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তারা প্রধান অতিথি এ এম এম বাহাউদ্দীনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার বাবা মাওলানা আব্দুল মান্নান (রাহ.) যদি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের হাল না ধরতেন তাহলে হয়তো মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবনভর অবহেলায় পড়ে থাকতে হতো। মাওলানা মান্নানের ইন্তিকালে মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়; সে শূণ্যতা পুরণ করেছেন তাঁরই সুযোগ্য পুত্র জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এএমএম বাহাউদ্দীন এমন মন্তব্য করেন তারা।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন শিক্ষকদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ সংগঠন কখনো কোন রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করেনি। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মহোদয়কে মাদরাসা শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবীর বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, মাদরাসাগুলো কখনোই জঙ্গবাদ সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি; দেবে না। বরং ইসলাম বিদ্বেষী কিছু মানুষ দেশী-বিদেশী ইন্দনে মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে এতোদিন অপপ্রচার করেছে। বিদেশী ষড়যন্ত্রে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের ইন্ধনে দেশীয় কতিপয় আলেম তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে। তাদের মদদে দেশে জঙ্গীবাদ সন্ত্রাসবাদ মাথা তুলে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও প্রকৃত আলেম সমাজ তা রুখে দিয়েছে। এখন ওই সব ইন্ধনদাতা দেশগুলোও গুটিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কখনো দেশে জঙ্গীবাদ সন্ত্রাববাদের উত্থান হতে দেবে না। ইসলামের নাম করে কিছু অঘটনের পর বিদেশীরা যখন জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের প্রচারণা শুরু করে; তখন আমরাই প্রথম জঙ্গী বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছি। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ব্যনারে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে সভা সমাবেশ-মিছিল করেছি। সারাদেশের মাদরাসা শিক্ষক, পীর মাশায়েখ, আলেম সমাজ জঙ্গীবাদ বিরোধী অবস্থানে থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
সম্মেলনে মহাসচিব আলহাজ্ব হযরত মাওলানা সাব্বির আহমেদ মোমতাজি বলেন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রচেষ্টায় মাদ্রসা শিক্ষকদের বেতন কাঠামো তৈরি হয়েছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেনীতে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবী আলেম ওলামাদের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ হয় বলে অপপ্রচার চালানো চেষ্টা করে। কিন্তু প্রমাণ করতে পারেনি কোন মাদরাসার শিক্ষকরা জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মাদ্রাসা শিক্ষকদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। অথচ এই সংগঠনের ঐক্য ভাংতে কেউ কেউ অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে বর্তমানে সাত হাজার ছয়শ ৩২টি এবতেদায়ী মাদ্রসা রয়েছে। সরকার এবদেদায়ী মাদ্রাসার উন্নয়নে আন্তরিক। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের সহযোগীতায়, দেশের বিভিন্ন দুর্যোগেও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সহযোগীতা করে যাচ্ছে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন, বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার সভাপতি ও সমন্বয়ক আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মো. আবু ইউছুফ মৃধা বলেন, জঙ্গীবাদ করে অন্যরা আর তার দায় দেয়া হয় দাড়ি ও টুপিওয়ালাদের উপরে। এগুলো সব আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। মাদ্রাসার কোন শিক্ষক জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ত তা প্রমান করতে পারেনি কেউ। এই আলেম সমাজ জঙ্গীবাদীদের প্রতিহত করেছে। আগামীতেও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃত্বে আলেম সমাজ জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করবে। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন