বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

খাকানদের ইসলাম প্রচারের বিস্ময়কর কাহিনী

খালেদ সাইইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

এতদঞ্চলের মুসলমানদের জুমার খোৎবায় খাকান ইবনে খাকানদের জন্য দোয়া করার প্রথা প্রচলিত ছিল। আধুনিক কালে অনেকটা অপ্রয়োজনীয় ঐতিহ্য হিসেবে এটি জুমার খুৎবা থেকে অপসৃত হলেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে ইতিহাসগ্রন্থগুলো প্রায় নীরব।
তবে আধুনিক লেখকদের মধ্যে কেউ কেউ খাকান ইবনে খাকানদের সম্পর্কে এমনসব তথ্যসমূহ উদঘাটন করেছেন, যাতে পর্দার অন্তরালে লুকায়িত অনেক বিস্ময়কর অজানা কথা দুনিয়ার সামনে উদ্ভাসিত হয়েছে।
উমাইয়া খলিফা আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে বিখ্যাত সেনাপতি কোতায়বা ইবনে মুসলিমের বাহিনী ৭০৬ খ্রিষ্টাব্দে সমগ্র তুর্কিস্তানে মুসলিম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘ সাত বছর অব্যাহত অভিযানের পর ৭১৫ খ্রিষ্টাব্দে সমগ্র তুর্কিস্তানে মুসলিম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। সমরখন্দের প্রথম মসজিদ কোতায়বা ইবনে মুসলিম প্রতিষ্ঠিত করেন।
এ সময় তুর্কিস্তানে খাকান বংশের রাজত্ব ছিল। বলা হয়ে থাকে, তখন চীনের সম্রাটগণ ও খাকান বংশের লোকেরা ‘ইলখানি’ বা ‘কারখানি’ বংশ নামে প্রচলিত ছিল। ঊমাইয়া খলিফাদের বদৌলতেই আরব ও তুর্কিস্তানের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব ও গভীর ভালোবাসা স্থাপিত হয়েছিল। এ গভীর ভালোবাসা ও সুসম্পর্কের কারণে খাকানরা তাদের প্রাচীন উরখানি লিপি পরিত্যাগ করে আরবি লিপির অনুসরণ করতে থাকে এবং আরবি লিপিকেই তাদের দেশে প্রচলন করে। খাকানিদের যুগেই তুর্কিস্তানে ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হয়। আরবি তাদের জাতীয় ভাষা না হওয়া সত্তেও তারা সরকারি দফতর-আদালতে আরবি ভাষাকেই প্রাধান্য দিতে থাকে।
তুর্কিস্তানের বিখ্যাত ইলখানি বংশে জন্মগ্রহণ করেন বোগরা খান। ইস্তুক আবদুল করিম নামে পরিচিত বোরাখানই এ বংশে সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন বলে জানা যায়। তুর্কিস্তানে ইসলামের প্রচার-প্রসারে তার অবদান ছিল বিরাট ও ব্যাপক। অবশ্য তার রাজত্ব সম্পর্কে নানা উপাখ্যান প্রচলিত। তার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে কথিত আছে যে, ইবনে সামানির প্রচারের ফলে বোগরাখান ইসলাম গ্রহণ করেন এবং এর পরই তুর্কি দলগুলো দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। সেখানে ইসলাম রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে, এমনকি ধর্মীয় অনুভূতি ও চিন্তা-চেতনার দিকেও ইসলাম একটি সুদৃঢ় শক্তিতে পরিণত হয়।
বোগরাখান ছিলেন একজন বিখ্যাত মোজাহেদ, সম্ভ্রান্ত বংশের কৃতীসন্তান, যোগ্য শাসনকর্তা এবং তার পৌত্রগণই খাকান উপাধিতে ভূষিত। কথিত আছে, হিজরি ৯৬০ সালের ৩ মার্চ তারিখে তুর্কিস্তানে দুই লাখ লোক একই দিনে ইসলাম গ্রহণ করে। অপর বর্ণনায় এ ঘটনা ঘটে তাশখন্দ ও অন্য একটি এলাকায়।
মিসরের বিখ্যাত লেখক ড. আবদুর রহমান কাজী তার রচিত ‘আল মুসলিমুনা ফিল আলামিল ইয়াওম’ নামক গ্রন্থে দুই লাখ পরিবার উল্লেখ করেছেন। যদি তাই হয়, তা হলে এ সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। মক্কা বিজয়ের পর এত বিপুল সংখ্যক লোকের একই দিনে ইসলাম গ্রহণের এটি প্রথম এবং বিস্ময়কর ঘটনা। সম্ভবত খাকানদের নাম খোৎবায় স্থান লাভ করার মূলে রয়েছে ইসলাম প্রসারে তাদের এসব অতুলনীয় অবদান। শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রতি তাদের আসক্তি ও অকৃত্রিম ভালোবাসার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল ও বিস্ময়কর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Fahim Adnan ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
শুকরিয়া। ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারলাম।
Total Reply(0)
Fahim Adnan ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
হে আল্লাহ মুসলমানদের এই ক্রান্তিলগ্নে আবারও সেনাপতি কোতায়বা ইবনে মুসলিমের মতো মহাবীর পাঠাও।
Total Reply(0)
তানভীর আহমাদ ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
নিয়মিত ইসলামি ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করায় ইনকিলাব কর্তৃপক্ষকে ধ্যনবাদ জনাচ্ছি। আমরা নিয়মিত এই ধরনের লেখা চাই।
Total Reply(0)
বিপ্লব হোসেন মোল্লা ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
উমাইয়া শাসকদের অবদান ‍মুসলমানরা কখনও ভুলবে না। ইনশায়াল্লাহ তারা তাদের প্রতিদান পরকালে তো পাবেই।
Total Reply(0)
বিপ্লব হোসেন মোল্লা ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
উমাইয়া শাসকদের অবদান ‍মুসলমানরা কখনও ভুলবে না। ইনশায়াল্লাহ তারা তাদের প্রতিদান পরকালে তো পাবেই।
Total Reply(0)
হাসিবুর রহমান ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
হ্যাঁ শ্রদ্ধেও শায়েখ ঠিকই বলেছেন, ‘‘খাকানিদের যুগেই তুর্কিস্তানে ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হয়। আরবি তাদের জাতীয় ভাষা না হওয়া সত্তেও তারা সরকারি দফতর-আদালতে আরবি ভাষাকেই প্রাধান্য দিতে থাকে। ’’
Total Reply(0)
Muhammad Zillur Rahman ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ৫:১৪ এএম says : 0
আল্লাহ পাক তাঁদেরকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন। এ অঞ্চলকে তাঁদের উসিলায় হিফাজত করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন