বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

যেখানে ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না

প্রশিক্ষণের নামে চীনে ১১ লাখ উইঘুর মুসলিম বন্দিশিবিরে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

একেবারে চোখ এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। কয়েক বিঘা কৃষিজমির ওপর বিশাল ক্যাম্পাস। একটু নজর বুলালেই যা সবার চোখের সামনে চলে আসে। বলছি, চীনের লোপু এক নম্বর কাউন্টি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কথা। মূল ভবন কাঠামোর বাইরের চারপাশ ঘিরে রেখেছে কাঁটাতারযুক্ত সাদা পাথরের দেয়াল। পয়েন্টে পয়েন্টে নজরদারি ক্যামেরা। বেশ কয়েকজন প্রহরী লম্বা লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছেন। রয়েছে টহলরত পুলিশের গাড়ি। আশপাশের বেশিরভাগ গ্রামের চেয়েও বড় এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র- প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার বর্গমিটার হবে। পাশঘেঁষে চলে গেছে মহাসড়ক। ভবনজুড়ে বড় ব্যানার সাঁটানো। যাতে লেখা- ‘নৃতাত্তি¡ক ঐক্যের’ রক্ষাকবচ। সড়কের পাশে আধাডজন লোক দাঁড়ানো। সবার নজর ভবনের দিকে। দেখতে কারাগারের মতো স্থাপনাটি কিসের কিংবা এখানে তারা কেন-ই-বা অপেক্ষা করছেন- তা নিয়ে কথা বলতে নারাজ সবাই। অস্ফুট স্বরে এক বৃদ্ধা বললেন- আমরা জানি না। ভাইকে দেখতে এসেছেন আরেকজন। কিন্তু এই তথ্যটুকুর বাইরে একটি কথাও তার মুখ ফসকে বের হলো না। দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আসা এক তরুণী বললেন- বাবাকে দেখতে এসেছেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে তার মা মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেন তাকে। তারা কথা বলতে অনিচ্ছুক। মুখ থেকে টু শব্দটিও বের করতে রাজি না। কারণ এটি সচরাচর কোনো কারাগার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস না। এটি এমন এক ক্যাম্প, যেখানে বিপুলসংখ্যক মুসলিম সংখ্যালঘু অন্তরীণ রয়েছেন। মূলত ইচ্ছার বিরুদ্ধে উইঘুরদের এ ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। মাসের পর মাস কিংবা কয়েক বছর ধরে এখান থেকে তারা বের হতে পারছেন না। ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের আড়ালে বিনাবিচারে বন্দি রাখা হয়েছে তাদের। গবেষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দক্ষিণ জিনজিয়াংয়ে লোপু এক নম্বর কাউন্টি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে ধরপাকড়ের শিকার মুসলমানদের আটকে রাখা হয়। উইঘুরদের জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বড় বড় শহর থেকে দূরত্বের কারণেই এমনটি ঘটছে। আদিল আওয়াত নামে একজন বলেন, হোটান শহর নিয়ে আমরা এতটুকুই বলব- কেউ যদি লোপু বন্দিশিবিরে একবার ঢোকে, সে কখনও বের হতে পারবে না। মরুদ্যান শহর হোটানের বাসিন্দা আদিল এখন প্রবাসীর জীবনযাপন করছেন। ক্যাম্পটিতে গত ডিসেম্বরে সরাসরি প্রবেশাধিকার চেয়েছিল জাতিসংঘ। এর আগে সংস্থাটির একটি প্যানেল বলছে, ১১ লাখ উইঘুর, কাজাখ, হুই ও অন্যান্য নৃতাত্তি¡ক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে ক্যাম্পে আটকে রাখার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন তাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু বেইজিং অনেকটা আগ্রাসীভাবেই নিজের নীতির পক্ষে সাফাই গাইছে। ক্যাম্পগুলোকে অনুকূল হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে তারা। ১৯৯০ ও ২০০০ দশকে যে জিনজিয়াংয়ে সহিংসতার বিস্ফোরণ ঘটেছিল, সরকারের চেষ্টায় তা এখন শান্তিপূর্ণ বলে তুলে ধরছে চীন। কিন্তু লোপুর বাস্তবতা পুরোদস্তুর ভিন্ন। এলাকাটি লোপু কাউন্টি নামেই পরিচিত। সেখানে সাবেক এবং বর্তমান অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে ও গণতথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান। পত্রিকাটি বলছে, জিনজিয়াংয়ের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এ এলাকায় সরকারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বন্দিশিবিরের বিস্তৃতি দীর্ঘ করছে। নজরদারি ও পুলিশি টহলও বাড়ছে। ভয়ভীতি, বলপ্রয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রণোদনার মাধ্যমে তাতে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। গার্ডিয়ান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Ibrahim Kholil ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:৪২ এএম says : 0
আল্লাহ তুমি হেফাজত কর মুসলমানদের
Total Reply(0)
chanchal ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:৫৫ এএম says : 0
এগুলো তো দেখবে না বিশ্ববাসী। মুসলমানদের নির্যাতনের বেলায় তারা চুপ।
Total Reply(0)
jack ali ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৬ পিএম says : 0
All 57 so called Muslm countries Munafiq Leaders are responsible for muslim atrocities around the World======May Allah [SWT] destroy Chinese Government---Ameen'''
Total Reply(0)
মোঃ শরীফুজ্জামান ২২ জানুয়ারি, ২০১৯, ৫:৪৪ পিএম says : 0
আমাদের দেশের প্রধান মন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ করি, চিনের এই অমানবিক নীতির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট তা তোলে ধরে নিপিড়িত মুসলিমদের পাশে দাড়াতে।
Total Reply(0)
মোঃ সপন ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:০২ এএম says : 0
আল্লাহ কাফেরদের হেদায়েত দান করুন আর না হয় ধ্বংস করে দিন আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন