শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সাভার ও আশুলিয়ায় ১০ মামলা গ্রেফতার ৩০

মজুরী বৈষম্য আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:১৭ এএম, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯

সাভারের আশুলিয়ায় মজুরী বৈষম্যের অভিযোগে টানা আটদিনের কর্মবিরতি, বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধের পর শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনায় গত কয়েক দিনে কারখানা কতৃপক্ষ সাভার ও আশুলিয়া থানায় পৃথক ১০টি মামলায় প্রায় এক হাজারের অধিক জনকে আসামি করা হয়েছে। এঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ৩০জনকে। এছাড়া শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় বিভিন্ন কারখানা থেকে এক হাজারের বেশি শ্রমিককে সাময়ীক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে দাবী শ্রমিক সংগঠনের।
মামলা সূত্রে জানা যায়, কারখানায় ভাঙচুরসহ মারপিট, ক্ষতি সাধন, চুরি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারী) ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩শ’ শ্রমিকের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মেট্রো নিটিং এন্ড ডাইং মিলস লিমিটেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম। গত শুক্রবার (১১ জানুয়ারী) এ.আর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ আজিজ বাদি হয়ে ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আড়াইশ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিন একই অভিযোগে নিট এশিয়া লিমিটেড কারখানার প্রধান ব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আনোয়ারুল ইসলাম বাদি হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
গত শনিবার (১২ জানুয়ায়ী) অরবিট এ্যাপারেলস লিমিটেড এর শফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। একই দিন মাহমুদ ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার এইচআর বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ শাহ আলম বাদি হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
গত রোববার (১৩ জানুয়ারী) হা-মীম গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তৈরী পোশাক কারখানার ভিতরে ভাংচুর, লুটপাট, মারধর ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে একইদিন ২৪ জন শ্রমিকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন জে.কে গ্রুপের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারিক হাসান। একই অভিযোগে সাভারের হরিণধরা এলাকার ডার্ড গ্রুপের দ্বীপ্ত এ্যাপারেলস কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল আউয়াল বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় দুটি পোশাক কারখানা মামলা দায়ের করেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন সময় ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
অন্যদিকে টানা আট দিনের শ্রমিক অসন্তোসের পর প্রশাসনের কঠোর ভূমিকায় মঙ্গলবার থেকে তৈরী পোশাক শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও বিভিন্ন কারখানায় ঝুলছে সাময়ীক শ্রমিক বরখাস্তের নোটিশ।
তবে গামের্ন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, আশুলিয়ার বুড়ির বাজার, জিরাবো ও কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার এ.আর জিন্স পডিউসার লিমিটেড, এফ জি এস ডেনিমিন ওয়ার লিমিটেড ও বার্ড গ্রুপ, নীট এসিয়াসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকদের ছবিসম্বলিত সামীয়ক বরখাস্তের তালিকা কারখানার মূল ফটকে ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে এক হাজারের বেশি শ্রমিককে সামীয়ক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোন দাবী আদায় হয়? তাই শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করে থাকে। শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় যারা নাশকতাকারী এবং ভাঙচুরের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কিন্তু কোন নিরপরাধ শ্রমিক যেন ছাটাইয়ের শিকার না হয় সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে গতকাল বুধবার বিকালে আশুলিয়া জামগড়ায় সম্প্রতি শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সাভার-আশুলিয়া শ্রমিকরা সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া নিরীহ শ্রমিকরা কেউ হয়রানি শিকার হবে না। তাই সাধারণ শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়া কারণ নেই। শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনায় দুষ্কৃতকারিদের বিরুদ্ধে ১০ মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পযন্ত ২৫ থেকে ৩০ জন অপরাধীদের গ্রেফতার হয়েছে।
এই ঘটনা নিয়ে কোন কারখানা থেকে শ্রমিক ছাটাই হলে, সংশ্লিষ্ট কারখানা ও সরকারের উধ্বর্তন মহলকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাসের কথাও তিনি জানান। এছাড়া সরকার বিরোধী মহল এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো ও আন্দোলনের নামে হামলা-ভাঙচুর করেছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে হচ্ছে।
এসময় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সানা শামিনুর রহমান শামীম, ঢাকা জেলার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমানসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন