শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

অনেক হয়েছে, এবার ক্ষান্ত দেন : রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় একটি বছর সম্পূর্ণ জবরদস্তি করে জেলে আটকে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
তিনি বলেন, বেগম জিয়া জামিন পেয়েছেন। তারপরও হরেক কিসিমের টালবাহানা করে তাকে কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহ্বান করে বলেন, অনেক হয়েছে এবার ক্ষান্ত দেন। একজন গুরুতর অসুস্থ বয়স্ক নেত্রীর ওপর আর জুলুম করবেন না। একটি বছর কারারুদ্ধ করে রেখে অত্যাচার করছেন। এবার মুক্তি দিন। ইতিহাস পড়ুন, ইতিহাস বড় নির্মম। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। গতকাল (বুধবার) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, এক মামলায় জামিন নিলে অন্য আরেকটি মামলায় জামিন বাতিল করা হয়েছে, হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ আবার জামিন স্থগিত করেছে, পরে আপিল বিভাগ জামিন দিলে নি¤œ আদালত আরেকটি মামলায় জামিন আটকে দিয়েছে, এমনি করে পার হয়ে গেছে একটি বছর। যেসব মামলায় অন্যরা জামিনে রয়েছেন সেখানে বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। এমনকি প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বেগম জিয়াকে চিকিৎসা সেবা পর্যন্ত দিতে সুযোগ দিচ্ছে না সরকার। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেগম জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সম্পূর্ণ চিকিৎসা না দিয়ে তাঁকে আবার কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে সরকারের নির্দেশে।
স্বাধীন সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, একতরফা নির্বাচন করার জন্য বিরোধী কন্ঠকে স্তব্ধ করতে বিগত সময় ধরে সরকার একের পর এক ‘¯েøভ ল’ তৈরী করেছে। এই দাসত্বের আইনগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে শুধুমাত্র স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে নির্মূল করার জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় দেশকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দেয়া, প্রশাসন, বিচার, নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়া এবং ৩০ ডিসেম্বর ভ‚য়া ভোটের নির্বাচন অনুষ্ঠান একই সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সরকার। দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে কারা দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে তা কি দেশের মানুষকে ভোলানো সম্ভব হয়েছে? খালেদা জিয়াকে এক বছর স্যাঁতসেতে অন্ধকার পরিবেশে একটি পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। অথচ তিনি প্রচন্ড অসুস্থ। চোখেও প্রচন্ড ব্যথা, তাঁর পা ফুলে গেছে। কিন্তু তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। কিছুদিন যাবত নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের নিচ তলায় ছোট একটি কক্ষে অস্থায়ী ক্যাংগারু আদালত সাজিয়ে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানে টেনে এনে জোর করে বিভিন্ন ভুয়া মামলায় শুনানি করা হচ্ছে। কতটা নৃশংস, কতটা নিষ্ঠুর, কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ, কতটা হিংস্র আর বিষাক্ত মানসিকতার হলে ৭৩ বছরের একজন মহিয়সী নারীকে এভাবে জিঘাংসা চরিতার্থ করতে কতটা উন্মত্ত হওয়া যায়, সেই চিত্রটাই দেশবাসী লক্ষ্য করছে। ক্ষমতার অন্ধলিপ্সায় ন্যুনতম মনুষ্যত্বটুকুও সরকার হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপি নেতা বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে একজন সম্মানিত বয়স্কা জনপ্রিয় নেত্রীকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জ্বলে-পুড়ে এমনভাবে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার দেয়ার কোন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে নেই। বেগম জিয়ার অপরাধ মাত্র একটাই-সেটা হলো জনগণের মাধ্য তাঁর অপরিসীম ও অভাবনীয় জনপ্রিয়তা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, খায়রুল কবির খোকন,
শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, লায়ন আসলাম চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মীর সরফত আলী সপু, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, একরামুল হক বিপ্লব, মামুনুর রশিদ মামুন, শেখ মোহাম্মাদ শামীম, হযরত আলী, মোঃ আবুল হাশেম বকর, মিয়া নুর উদ্দিন অপু, মনোয়ার হোসেনসহ দেশব্যাপী হাজার হাজার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, কে এম নুরুল হুদা বলেছেন-সংসদ নির্বাচনের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে। সিইসি’র বক্তব্য দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার গভীর নীলনকশা। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের রাতেই নির্বাচন সম্পন্ন করে এখন একই ধরণের নির্বাচন আগামীতেও হবে বলে সিইসি যে বক্তব্য রেখেছেন তা জাতির সঙ্গে আবারও একটি প্রতারণা করারই ইঙ্গিত দিলেন।
কাদের সাহেব কি বলেন: মহাজোটের শরিক দল জাসদের একাংশের নেতারা একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির যে কথা বলেছেন, সেই বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের জবাব চেয়েছেন রিজভী। তিনি বলেন, ২৯ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতি হয়ে গেল, লুটপাট হয়ে গেল। এখন এই কথা মহাজোট সরকারের শরিক দল জাসদও বলছে যে, ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতি হয়ে গেছে, ব্যালট বাক্স প‚র্ণ করা হয়েছে। এখন কী বলবেন ওবায়দুল কাদের সাহেব?
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু ও আবদুল আউয়াল খান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন