শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে তো দূরে রাখলেন, এবার মুক্তি দিন -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:০৯ পিএম

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রচণ্ড স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বেগম জিয়া একা চলতে পারেন না। আদালতে বা হাসপাতালে আনতে গেলে হুইল চেয়ারই ভরসা। তারপরও টেনে হিঁচড়ে জবরদস্তি করে আনা হচ্ছে শেখ হাসিনার নির্দেশিত ক্যাংগারু কোর্টে। তাঁর অসুস্থতা দিনে দিনে বাড়লেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। বিএনপির এই নেতা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, দুই কোটি টাকার সাজানো মিথ্যা মামলায়-যার সাথে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই, তাঁকে জেলখানা নামের ইঁদুর-তেলাপোকা ও পোকা মাকড়ে উপদ্রুত স্যাঁতসেতে অন্ধকার ঘরে আর আটকে রাখবেন না।মিথ্যা মামলায় এক বছর তো কারারুদ্ধ করে রাখা অন্যায়, অবিচার ও জুলুম। মিথ্যা দন্ড দিয়ে তাঁকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার সাধ পূর্ণ করলেন - এবার মুক্তি দিন।
রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ বছর। প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ অসুস্থ শরীর। পুরনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচন্ড ব্যথা, পা ফুলে গেছে। নির্যাতন সহ্য করতে গিয়ে তাঁর পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। তাঁকে বিশেষায়িত হাসপাতালের সুবিধা ও ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকেও বঞ্চিত করেছে শেখ হাসিনা। তাঁর আর্থারাইটিসের ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার, হাত নড়াচড়া করতে পারেন না। রিস্ট জয়েন্ট ফুলে গেছে, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসের জন্য কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা, এই ব্যথা হাত পর্যন্ত রেডিয়েট করে। হিপ-জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচন্ড। ফলে শরীর অনেক অসুস্থ, তিনি পা তুলে ঠিক মতো হাঁটতেও পারেন না। তাঁর এই রকম শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও অমানবিকভাবে কারাগারের ভিতরে স্থাপিত ছোট্ট অপরিসর কক্ষের ক্যাংগারু আদালতে ঘন ঘন হাজির করা হচ্ছে। মূলত: বেগম জিয়াকে আদালতে হাজির করার নামে টানা হেঁচড়া করে নির্যাতন করা হচ্ছে। চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকলেও তিলেতিলে শেষ করে দেয়ার জিঘাংসা চরিতার্থ করে চলেছে সরকার।
তিনি বলেন, আইনজীবীরা বলছেন, কারামুক্ত হতে চারটি মামলায় জামিন পেতে হবে। এই অবৈধ সরকারের হাত যেহেতু আইনের হাতের চেয়ে লম্বা, তাই সব নির্ভর করছে মিডনাইট ইলেকশনের প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী-আপনি দেয়ালের ভাষা পড়ুন। চারদিকের মানুষ চোখে মুখে কি বলছে বোঝার চেষ্টা করুন। পৃথিবীটা ক্ষণিকের। কিন্তু কর্মফল অনন্তকালের। এখনো সময় আছে। এক বছরে বহু নির্যাতন বহু কষ্ট দিয়েছেন বেগম জিয়াকে। চিকিৎসার সুযোগটুকুও দেননি। এবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কেউ যখন শোনে দুই কোটি টাকার সাজানো মিথ্যা মামলার অজুহাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে তখন তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। অনেকে এটাকে স্রেফ ক্ষমতার হিতাহিত জ্ঞানহীন নির্মম রসিকতা মনে করে।
তিনি বলেন, হলমার্ক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বিচার না করে দুই কোটি টাকার তথাকথিত প্রমানহীন ও সংশ্লিষ্টতাহীন দুর্নীতির বিচারে দশ বছর সাজা দেয়া হলো। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যাতে কেউ মামলা করতে না পারেন সেজন্য জাতীয় সংসদে ইনডিমনেটি বিল পাস করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নের নামে মেগা মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ এবং দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি কি দুর্নীতি নয় ? খালেদা জিয়ার কারাদন্ডে যে মন্ত্রীরা উৎফুল্ল তারা আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখেন কখনো ? যারা লাখো কোটি টাকা পাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, উল্টা তারাই জাতির দন্ডমুন্ডের কর্তা সেজেছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের সকলেই জানেন, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া ছাড়াও শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলাগুলো সচল রাখা হয়েছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক এগারোর সরকার ১৫টি মামলা করেছে। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তখন তাঁর মাথার উপর ১৫টি দুর্নীতির মামলা ছিল। কিন্তু সেগুলোকে আদালতের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আর বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের মামলাগুলোকে চলমান রেখে এখন সাজা দেয়া হচ্ছে আইন আদালতকে কব্জা করে। মূল উদ্দেশ্য তাঁদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
কিন্তু এখন শেখ হাসিনার নির্মম প্রতিহিংসার জুলুমের কারনে বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন দেশনেত্রী থেকে হয়েছেন ‘গণতন্ত্রের মা।’ মুখে মুখে শ্লোগান ‘আমার নেত্রী আমার মা’। অপরদিকে জনগণের কাছে শেখ হাসিনা আজ গণবিচ্ছিন্ন একনায়কে পরিণত হয়েছেন। শেখ হাসিনা আইন-আদালত-প্রশাসন-পুলিশ-বিচার বিভাগ-নির্বাচন কমিশনসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুকুমের দাস বানিয়েছেন। আর শেখ হাসিনা নিজেকে বলছেন-গণতন্ত্রের পুজারী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন