মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ঈমান ও ইসলামের বিপরীত হলো কুফর-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

আমরা পূর্ববর্তী আলোচনায় কুফরের চারটি শ্রেণীর বিষয়ে বিশদ বর্ণনা উপস্থাপন করেছি। বর্তমান নিবন্ধে অবিশষ্টগুলোর কথা তুলে ধরা হলো।
ঙ. কুফরে যিন্দিকাহ: প্রকাশ্যভাবে সকল জরুরিয়াতে দ্বীনকে মেনে নেয়। বাহ্যত তাদেরকে মুসলমান বলেও মনে হয়। কিন্তু তারা দ্বীনের সুস্পষ্ট অত্যাবশ্যকীয় কিছু বিষয়ের এমন অর্থ ও ব্যাখ্যা দেয়, যা দ্বীনের সর্বজনস্বীকৃত অকাট্য প্রমাণিত বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। যেমন- কাদিয়ানীরা জরুরিয়াতে দ্বীনের অনেক বিষয়ের ওপর এমন ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে, যা বিশুদ্ধ ও অকাট্য প্রমাণিত বিষয়ের বিপরীত হয়। এ কারণে সকল যিন্দিক কাফের শ্রেণীভুক্ত।
এদের সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি কিতাবের এক অংশের প্রতি কুফরি করো?’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৮৫)। মোট কথা, যদি কেউ ভেতরে ও বাহিরে তথা মনে ও মুখে জরুরিয়াতে দ্বীনের কিছু কিছু বিষয়ের এমন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, যা সাহাবা ও তাবেয়িদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পরিপন্থী এবং ওই মতের বিপরীত যার ওপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এরূপ ব্যক্তিকে যিন্দিক বলে।
উদাহরণস্বরূপ কেউ কোরআনকে আল্লাহর সত্য বাণী বলে বিশ্বাস করে, তাতে উল্লিখিত জান্নাত-জাহান্নামকে হক বলে বিশ্বাস করে, কিন্তু জান্নাত-জাহান্নামের ভিন্নতর অর্থ করে। সে বলে, জান্নাত হলো মানসিক প্রশান্তি উপকরণ প্রাচুর্য, যা প্রশংসিত যোগ্যতার মাধ্যমে লাভ করা যায় আর জাহান্নাম হলো নিন্দনীয় ক্ষমতাবলে অর্জিত লজ্জা ও সামাজিক সঙ্কোচন। বস্তবে প্রতিষ্ঠিত জান্নাত-জাহান্নামের কোনো অস্তিত্বই নেই। (ফয়জুল বারী : খন্ড ১, পৃ. ৭১)।
চ. কুফরে নি’মাত: এটা ‘শুকরে নিমাতে’র বিপরীত শব্দ। যার অর্থ অকৃতজ্ঞতা, কৃতঘ্ন হওয়া। (লিসানুল আরব: খন্ড ৫, পৃ. ১৬৯)। আর ঈমানের বিপরীত কুফর হলো, যে বিষয়ে ঈমান বা আন্তরিক বিশ্বাস থাকা দরকার, সেখানে ঈমান না থাকা। (শরহুল মাকাসেদ: খন্ড ৩: পৃ. ৪৭৫)। জেনে রাখা উচিত, আহলে কিবলা দ্বীনি বিষয়ের সংঘর্ষমুক্ত অর্থকারীদেরকে কাফের বলা যাবে না।
তবে আহলে কিবলা বলতে শুধু কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ আদায়কারীদেরকেই বোঝায় না। বরং আহলে কিবলা বলতে ওই জনগোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা জরুরিয়াতে দ্বীনকে স্বীকার ও মান্য করে। কোনো বিষয়ের প্রতি অস্বীকৃতি জানায় না। আর সংঘর্ষমুক্ত অর্থ বলতে বোঝায়, দ্বীনি কোনো বিষয়ের এমন ব্যাখ্যা করা, যার দ্বারা জরুরিয়াতে দ্বীন বা দ্বীনের অকাট্য বিষয় প্রমাণিত হয় এবং সর্বজনস্বীকৃত বিষয়ের প্রতি আক্রমণ আনে না। এজাতীয় অর্থগ্রহণকারীকে কাফের বলা যাবে না। আর যদি অপব্যাখ্যাকারী অপব্যাখ্যার মাধ্যমে অকাট্য প্রমাণিত বিষয়কে অস্বীকার করে, তবে অবশ্যই সে কাফের।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস করো আর কিছু অংশ অস্বীকার করো। তোমাদের মধ্যে যে এ ধরনের আচরণ করবে, সে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় নিপতিত হবে, আর কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত হবে। আল্লাহপাক তোমাদের কার্যাবলি হতে উদাসীন নন।’ (সূরা বাকারা: আয়াত ৮৫)।
নাজরানবাসী মুবাহালার ঘটনায় প্রমাণিত বিষয়াবলিতে প্রমাণিত একটি বিষয় হলো এই যে, কোনো কাফের যদি মৌখিকভাবে হযরত মুহাম্মদ সা:-এর নবুওয়াতকে স্বীকার করে, তবে তাতেই সে ইসলামে প্রবিষ্ট বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ না সে ইসলামের আহকামকে জরুরিভাবে গ্রহণ করে। ফাতহুল বারী: খন্ড ৮, পৃ. ১১৯)। সুতরাং আহলে কিবলার যে ব্যক্তি জগতের অবিনশ্বরতা, হাশর-নাশরের অসম্ভাব্যতা ইত্যাদি বিশ্বাস রেখে সারা জীবন আনুগত্যের ওপর অতিবাহিত করে; তবে তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে কোনো মতবিরোধ নেই।
অনুরূপভাবে কুফরির প্রমাণ বহনকারী কোনো বিষয় তার দ্বারা প্রকাশ পেলে সে নির্ঘাত কাফের বলে পর্যবসিত হবে। (শরহুল মাকাসিদ: খন্ড ৩, পৃ. ৪৬১)। জানা আবশ্যক যে, আহলে কিবলা বলতে তাদেরকেই বোঝায়, যারা জরুরিয়াতে দ্বীন (দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয় স্বতঃসিদ্ধ পালনীয় বিষয়) যেমন জগতের নশ্বরতা, দৈহিকভাবে পুনরুত্থান, সব কুল্লি ও যুজয়ী (সামগ্রিক ও আংশিক বা বৃহৎ ও ক্ষুদ্র) বিষয় আল্লাহ অবগত আছেন এবং অনুরূপ মাসয়ালাসমূহের সত্যতার ব্যাপারে একমত।
সুতরাং যে ব্যক্তি সারা জীবন আনুগত্য ও ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করল, কিন্তু বিশ্বাস করল যে, ইহজগৎ অবিনশ্বর বা হাশর অনুষ্ঠিত হবে না বা আল্লাহ পাক সামগ্রিক ও আংশিকভাবে সব বিষয় অবগত নন, তবে সে আহলুল কিবলা হিসেবে গণ্য হবে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে, আহলুল কিবলা কোনো ব্যক্তির ওপর কুফরির হুকুম আরোপ করা যাবে না। এ কথার অর্থ হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত তার থেকে কোনো কুফরি নিদর্শন প্রকাশিত না হয় অথবা কুফরি বিষয় সংঘটিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কাফের বলা যাবে না। সুতরাং কুফরির নিদর্শন প্রকাশ পেলে বা কুফরি কর্ম সংঘটিত হলে তাকে কাফের বলতে কোনো বাধা নেই। (শরহে ফিকহে আকবার: পৃ. ১৫৪)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
আবদুল মতিন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের সবাইকে সকল প্রকার কুফর-শিরক ও বিদ’আত থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।
Total Reply(0)
Mahbub ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
মানুষকে পরিপূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হতে হলে অবশ্যই ইসলাম, কুফর ও শিরকের ব্যাপারে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকা জরুরি। এই বিষয়গুলো তুলে ধরায় লেখককে ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
Pabel ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা সবাইকে কুফর এবং শিরকমুক্ত জীবন যাপন করে তাঁর ঘোষিত একান্ত ক্ষমা এবং দয়া লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
খালেদ আহমদ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
শিরক বিদআত ও কুফরি কালচার আমাদের সমাজকে কলুষিত করে ফেলেছে। তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে তাওহিদ ও রিসালতের অনুপম আদর্শ পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে।
Total Reply(0)
হুসাম উদ্দিন চৌধুরী ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
আসুন আমরা সকলে আল্লাহর হুকুম ও রাসুল স. এর আদর্শকে বুকে ধারণ করে জীবন গড়ি। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ব্যতিরেকে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। সমাজের সর্বস্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
Total Reply(1)
DR. Jahangir Miah ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:২৪ এএম says : 4
In the name of Allah, Most Gracious, Most Merciful.Assalamu Alaikum Wa RahmatullahI would greatly appreciate it if you could let me know whether I’m wrong.In my work and your humble opinion needed. I hope what I have requested is possible. Dear Brothers and Sisters,“Khushoo‟ in prayer happens when a person empties his heart for it prayer and his/her deeds for the sake of Allah S.T, and focuses on it to the exclusion of all else, and prefers it to everything else. Only then does he find comfort and joy in it, as the Prophet S.A said: „… and my joy has been made in Salaah.‟” - Tafseer Ibn Katheer, 5/456. The hadith is in Musnad Ahmad, 3/128 and Saheeh al-Jaami‟, 3124. Allah has mentioned Al-khaashi‟eena wa‟l-khaashi‟aat -men and women who are humble before their Lord, and described this quality as one of the qualities of those who are chosen. He tells us that He has prepared for them forgiveness and a great reward (i.e., Paradise). Al-Ahzaab 33:35. One of the benefits of “khushoo‟ is that it makes prayer easier for a person. Allah tells us -interpretation of the meaning: “And seek help in patience and Al-Salaah (the prayer), and truly it is extremely heavy and hard except for Al-khaashi‟oon [i.e., the true believers, those who obey Allah with full submission, fear much from His Punishment, and believe in His Promise and in His Warnings]” Al-Baqarah 2:45. The meaning is that the burden of prayer is heavy indeed, except for those who have khushoo‟. -Tafseer Ibn Katheer, 1/125. Khushoo‟ is very important, but it is something that is easily lost and is rarely seen, especially in our own times, which are the last times. The ProphetS.A (peace and blessings of Allah S.A said: “The first thing to be lifted up (taken away) from my Ummah will be khushoo‟, until you will see no one who has khushoo‟.” -Al-Haythami said in al-Majma‟, 2/136: It was reported by Al-Tabaraani in Al-Kabeer, and its isnaad is hasan. Can See also Saheeh Al-Targheeb, no. 543. He said it is Saheeh. The Prophet (peace and blessings of Allah be upon him) said: “Remember death in your prayer, for the man who remembers death during his prayer is bound to pray properly, and pray the prayer of a man who does not think that he will pray any other prayer.” (Al-Silsilat al-Sahihah by al-Albaani, 1421. It was reported from al-Suyooti that al-Haafiz ibn Hajar classed this hadith as hasan). Prayer is the supper pain killer with the “Khushoo‟ O, Allah S.T. “Guide Us to the Straight Path”Kindest RegardsServant of Allah
Fahad ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
We have to learn about Islam properly. Those articles will help us to learn
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন