বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ঈমান ও ইসলামের বিপরীত হলো কুফর-৩

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

উপর্যুক্ত বিষয়টিকে আরো খোলাসা করার জন্য যা কিছু বলা আবশ্যক তা হলো, ফুকাহায়ে কেরামের উক্তি হচ্ছে এই যে, যদি কোনো ব্যক্তির একটি বাক্যে ১০০টি অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যার মধ্যে ৯৯টি অর্থ কুফরি বলে প্রমাণিত হয়, কিন্তু একটি মাত্র অর্থ কুফরি বলে সাব্যস্ত হয় না, তবে তাকে কাফের বলা যাবে না।
এর তাৎপর্য হলো, যদি কোনো ব্যক্তি এ ধরনের একাধিক অর্থের সম্ভাবনাময় বাক্য বলে এবং তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়ার পূর্বেই ইন্তেকাল করে, তবে তাকে কাফের আখ্যা দেয়া ঠিক হবে না। কেননা, সে ওই অর্থটি গ্রহণ করেই বাক্যটি বলে থাকতে পারে, যাতে কুফরির সম্ভাবনা নেই। আর যদি সে তার বাক্যের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার সুযোগ পায়, আর এমন ব্যাখ্যাই অবলম্বন করে, যাতে দ্বীনের সুস্পষ্ট অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ের অস্বীকৃতি প্রতীয়মান হয়, তাহলে সে অবশ্য কাফের বলে বিবেচিত হবে অথবা ফিকাহবিদদের উপরোক্ত সিদ্ধান্ত এমন ব্যক্তির ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে, যার উক্তি অস্পষ্ট।
সন্দেহপূর্ণ বাক্যটি ছাড়া কুফরির সহযোগী রূপে অন্য কোনো কথা বা ইঙ্গিত বর্তমান না থাকে কিংবা জরুরিয়াতে দ্বীনের কোনো বিষয়ের অস্বীকৃতি পাওয়া না যায়, তাহলে সে ব্যক্তি কাফের বলে বিবেচিত হবে না। পক্ষান্তরে তার কোনো কাজ ও কথায় কুফরির স্পষ্ট প্রমাণ মিললে অথবা জরুরিয়াতে দ্বীনের কোনো বিষয়ের ওপর এনকার ও অস্বীকৃতি বর্তমান থাকলে সে নিশ্চিত রূপেই কাফের বিবেচিত হবে।
এ প্রসঙ্গে খুলামাহসহ অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত আছে যে, যখন কারো একটি কর্মকান্ডে একাধিক এমন দিক বিদ্যমান থাকে যা কুফরির হুকুম বহন করে, আর একটি মাত্র দিক এমন পাওয়া যায়, যা কুফরিকে প্রতিহত করে তাহলে এই মুসলমানের প্রতি ‘হুসনে জন’। অর্থাৎ সুধারণা রাখা উচিত। নীতি ও সংবিধানের ভিত্তিতে মুফতির জন্য ওই দিকটি বা অর্থটি গ্রহণ করা উচিত, যা কুফরিকে প্রতিহত করে।
ফতুয়ায়ে বাযযাযিয়াতে এ কথাটিও উল্লেখ আছে যে, তবে যদি তার ইচ্ছা ও আচরণে কুফরির দিকটি স্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে অন্য কোনো অর্থ গ্রহণ করা কাজে আসবে না। (বাহরোর রাযিক: খন্ড ৫, পৃ. ২৫)। আর যাখিরা কিতাবের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি ওই উক্তিকারী ব্যক্তি সে কথাটি এমন অর্থ গ্রহণের নিয়তে বলে থাকে, যাতে কুফরি প্রমাণিত হয় না, তবে সে মুসলিম বলে গণ্য হবে।
যদি কুফরির হুকুম আরোপকারী অর্থের নিয়তেই সে কথা বলে থাকে, তবে মুফতির ফতোয়া তার কল্যাণ বয়ে আনবে না, বরং তাকে উল্লিখিত উক্তি হতে প্রত্যাবর্তনসহ তাওবার নির্দেশ দেয়া হবে এবং তার বিবাহ নবায়নের হুকুম প্রদান করা হবে। (শরহে ফিকহে আকবার: পৃ. ১৯২)।
আর যে ব্যক্তি কোরআন-হাদিসের প্রমাণিত শরয়ী বিধিমালা হতে অনৈসলামিক বিধিমালাকে উত্তম জ্ঞান করে, সে ইসলামী গন্ডির বহির্ভূত বলে বিবেচিত হবে। যেমন কেউ যদি বলে, চোরের শাস্তি এক মাস বন্দী জীবনযাপন অথবা ব্যভিচারের শাস্তি দশটি বেত্রাঘাত, ইসলামের আইন অপেক্ষা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত, তবে সে ইসলামী সীমারেখা হতে বের হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বা যারা আল্লাহপাকের অবতীর্ণ বিধানমতো হুকুম করে না, তারাই কাফের।’ (সূরা মায়েদা: আয়াত ৪৪)। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছু দ্বীন হিসেবে অন্বেষণ করে, তা আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে না। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত ৮৫)। এই নিরিখে এমন ব্যক্তি, যে কামনা করে যে, আল্লাহপাক যিনা, অবৈধ হত্যা বা জুলুমকে হারাম না করুক, অথবা এমন বস্তু ভক্ষণ বৈধ জ্ঞান করে যা কখনো হালাল নয়, তবে তার ওপর কুফরির হুকুম আরোপিত হবে।
জাওয়াহের কিতাবে উল্লেখ আছে, উম্মতের সর্বসম্মত মতে হারাম বস্তুর হারাম হওয়াকে যে ব্যক্তি অস্বীকার করে অথবা তার হারাম হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। অর্থাৎ তার হারাম ও হালালকে সমপর্যায়ের মনে করে, যেমন রক্তপান করা, যিনা করা, সমমৈথুনে লিপ্ত হওয়া, সুদ গ্রহণ করা ইত্যাদি, অথবা সগিরা বা কবিরা সব গুনাহকে হালাল মনে করে, তবে সে কুফরিতে লিপ্ত বলে গণ্য হবে। (শরহে ফিকহে আকবার: পৃ. ১৮৭-১৮৮)।
স্মর্তব্য যে, ইসলামী বিধি অনুযায়ী বিচার সম্পাদনকারীকে শুধু ইসলামী বিধানের কারণে লাঞ্ছনা, অবমাননা ও হাসি-বিদ্রুপের লক্ষ্যস্থলে পরিণত করা কুফরি গুনাহ। তবে হ্যাঁ, যদি এর দ্বারা কোনো ব্যক্তির বিদ্রুপ উদ্দেশ্য হয়, ইসলামী বিধিবিধানের বিদ্রুপ না হয়, তবে একে কুফর বলে গণ্য করা হবে না। (নিবরাস: পৃ. ৩৩৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন