বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কাশ্মীরে ঘরে ঘরে তল্লাশি অস্ত্র হাতে নিলেই গুলি

হিন্দুদের হামলা এড়াতে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে ২ সহস্রাধিক মুসলিম

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সামরিক পথে কাশ্মির সংকট সমাধানের প্রচেষ্টায় কোনও সফলতা না এলেও বলপ্রয়োগের নীতি থেকে সরছে না ভারত। মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে কাশ্মিরবাসীকে। এদিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে এস ঢিলোঁ এক সংবাদ সম্মেলনে হুমকি দিয়েছেন, কাশ্মিরে কেউ অস্ত্র হাতে তুলে নিলেই তাকে গুলি খেতে হবে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় বেসামরিকদের হস্তক্ষেপ না করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। জেনারেল ঢিলোঁ তার মন্তব্যের মধ্য দিয়ে মূলত ক’দিন আগে করা সেনাপ্রধানের মন্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনিও সেনা অভিযানে বাধা দিলে কঠোর পরিণতি বরণ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। অভিভাবকদের আহŸান জানিয়েছিলেন, তরুণদের সঠিক পথে ফেরাতে। খবরে বলা হয়, পুলওয়ামারে আত্মঘাতী হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর ৪৪ জওয়ান নিহত হওয়ার পর জম্মু ও কাশ্মীরজুড়ে আতঙ্ক বেড়েই চলছে। এ পর্যন্ত ৭জন স্বাধীনতাকামী প্রাণ হারিয়েছে বলে জানা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী ঘরে ঘরে চালাচ্ছে তল্লাশি। আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ। এতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অবস্থিত অঞ্চলটি ফের প্রাণঘাতী পরিস্থিতির দিকে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক টলোমলো অবস্থায়। নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন স্থানে কাশ্মীরি ছাত্রদের জড়ো করে হামলা করা হচ্ছে। দমন-নিপীড়নের অভিযোগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমালোচনা করলে স্থানীয় তরুণদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগে মামলা করা হচ্ছে। পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিকদের তুমুল ভর্ৎসনা করছেন ভারতীয়রা। বিশেষ করে বলিউড অভিনেতারা এতে যোগ দিয়েছেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটিতে সা¤প্রতিক সহিংসতা ভারতজুড়ে উগ্র দেশপ্রেম উসকে দিয়েছে। সর্বত্র তিন রঙা পতাকার ছড়াছড়ি। সাউথ এশিয়ান মনিটর জানায়, টানা তৃতীয় দিনের মতো জম্মুর পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। উগ্র হিন্দুদের হামলার আশঙ্কায় জম্মু ও কাশ্মীরের (আইএইচকে) বার্থিন্দি এলাকার একটি মসজিদে আশ্রয় নেয় দুই হাজারের বেশি মুসলমান। কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের (কেএমএস) মতে, বাথিন্দির বাসিন্দা নুমান মঞ্জুর জানিয়েছেন, “বাথিন্দির মক্কা মসজিদে এ মুহূর্তে দুই হাজারের মানুষ আশ্রয় নিয়েছে এবং আরও মানুষ সেদিকে যাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে কাশ্মীর যাওয়ার পথে আটকা পড়া যাত্রী এবং জম্মু জেলার স্পর্শকাতর এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা”। কাশ্মীরের গান্দেরবাল জেলার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, “প্রায় ৭০০ জনের একটি গ্রæপের সাথে আছি আমি। আমরা ১৫-১৬টি বাস নিয়ে আজমির শরীফ গিয়েছিলাম। কয়েকদিন আগে আমরা ফিরে এসেছি। কিন্তু জম্মু-শ্রীনগর সড়ক বন্ধ করে দেয়ায় আমরা নরওয়ালে আটকা পড়েছি”। তিনি আরও বলেন, “শুক্রবার একদল হিন্দু সন্ত্রাসী এসে আমাদের দিকে পাথর ছুড়ে মারে। তারা আমাদের বাসগুলোর ক্ষতি করে এবং আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে। সহিংসতার আশঙ্কায় আমরা গত রাতে বাথিন্দিতে এসেছি”। বাথিন্দির আরেক বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, “এই মুহূর্তে মক্কা মসজিদে দুই হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও মানুষ এখানে আসছে”। ভারতীয়রা বলছেন, তারা প্রতিশোধ নিতে চান। কাশ্মীরের ভারতনিয়ন্ত্রিত অংশে বিদ্রোহীদের সমর্থনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে চিরবৈরী পাকিস্তানের। সা¤প্রতিক সহিংসতায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে ভারতের হাতে খুবই কম সুযোগ রয়েছে। জনগণও এমনটি দেখছে। কাশ্মীর হামলার ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। কিন্তু যেখানে দুই দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ আছে, সেখানে পাল্টা আঘাতে ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক গতিবিধিও খুব স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে। আফগানিস্তানের দীর্ঘ ১৭ বছরের যুদ্ধ থেকে সরে আসতে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সহায়তা চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সেখানে পাকিস্তানের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। মোদি চাচ্ছেন না, এমন একটি সময়ে তার দুর্বলতা প্রকাশিত হয়ে যাক। কাশ্মীরে সক্রিয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে ভারতের বিরুদ্ধে নিজের ছায়াশক্তি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে পাকিস্তান। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানের কাছ থেকেই অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছেন।ধ নিউ ইয়র্ক টাইমস, এসএএম, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন