শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মৃত্যুমুখে গঙ্গানির্ভর সব নদী

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

চোখের সামনে নদী খাল হচ্ছে, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে, কিছু বলতেও পারছি না, সইতেও পারছি না, ভারতের কারণে দিনে দিনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে গঙ্গানির্ভর সব নদ-নদী। শুষ্ক মৌসুম এলে নদ-নদীর অবস্থা কতটা শোচনীয় তা সবার চোখে ধরা পড়ে’-কথাগুলো বললেন পদ্মার শাখা কুমার নদীপাড়ের বাসিন্দা ঝিনাইদহের শৈলকুপার উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সলেমান বিশ্বাস। গাড়াগঞ্জের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একসময়ের প্রমত্তা কুমার নদীর অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের কথা,‘একসময় নদীর পাড় পর্যন্ত পানি থৈ থৈ করতো। ছিল জোয়ার ভাটা। এখন পানি পাওয়া যায় না তলানিতেও। কি যে হলো আস্তে আস্তে নদী মরে যাচ্ছে। নদ-নদীর চেহারা দেখলে যে কারো মায়া হবে, কষ্ট লাগবে। কষ্ট লাগে না কেবল ভারতের। ভাটির দেশ বাংলাদেশকে ভারত পরিকল্পিতভাবে মরুভ‚মি বানাচ্ছে। তবুও কোন প্রতিবাদ নেই’। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বললেন নদীপাড়ের লোকজন আরো বললেন, জোরালোভাবে লেখালেখি করেন, বারবার লেখেন, মানুষকে প্রকৃত চিত্র জানান। শুধু কুমার নদ নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমের সব নদ-নদীর অবস্থা শোচনীয়। নদ-নদীতে এখন আর পানির খেলা নেই, নদী এক‚ল ভাঙে ওক‚ল গড়ে এই তো নদীর খেলা, সেই গান কারো মুখে উচ্চারিত হয় না। ‘কেউ কোনদিন ঘর বেধ না নদীর ধারে-আমির কে সে এক পলকে পথের ফকির করে’ সেটিও মিথ্যা হয়ে গেছে। এখন নদীর ধারে এক শতক জমি কিনলে ১০/২০ শতক ফ্রি পাওয়া যায় নদীর জমি।
ঝিনাইদহ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্যাসেল ব্রিজ পার হওয়ার সময় দেখা গেছে, নবগঙ্গার বেহাল অবস্থা। নদীতে আগের মতো ঝাঁপিয়ে দিয়ে গোসল করার প্রতিযোগিতা চলে না। কুষ্টিয়া লালন শাহ সেতু ও পাশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নীচে পানিশূন্য অবস্থা। আসলেই পদ্মা দিয়ে পানি আসছে চুইয়ে। গঙ্গানির্ভর সিংহভাগ নদ-নদী দিনে দিনে পরিণত হয়েছে মরা খালে। নদীদেহ নিথর হয়ে পড়ে আছে। কোন প্রাণ নেই। কোন কোন নদী মারাত্মক অস্তিত্ব সঙ্কটে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীর হৃদপিন্ড পদ্মা এখন স্পন্দনহীন। পায়ে হেঁটে এখন বিশাল পদ্মা পার হওয়ার অবস্থা দাঁড়িয়েছে। মাঝখান দিয়ে সরু খাল ও নালার মতো কোনরকমে চুইয়ে পানি প্রবাহ হচ্ছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মো. সাইবুর রহমান মোল্যা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়া বা নাব্য হারানোর কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশের উপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মা ও গড়াইয়ের শাখা নদ-নদী মাথাভাঙ্গা, গড়াই, ভৈরব, আপার ভৈরব, কুমার, মধুমতি, ফটকি, বেতাই, চিত্রা, নবগঙ্গা ও অভিন্ন ইছামতি ও কোদলাসহ সব নদী কার্যত খালে পরিণত হয়েছে। নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদী পানিশূন্য হওয়ার জন্য মূলত দায়ী ফারাক্কা। ফারাক্কার ধাক্কায় কাহিল হয়ে পড়েছে পদ্মা ও পদ্মার সব শাখা নদ-নদী। মরণফাঁদ ফারাক্কার কারণে প্রতিমুহূর্তে খেসারত দিতে হচ্ছে নানাভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে। মানুষের জীবন, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, জীব-বৈচিত্র, বনজ, মৎস্যসম্পদ ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন