বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফিরতে পারবেনা বহিষ্কৃতরা দুই ধাপে ১১০ জন বহিষ্কার

নির্বাচনে কঠোর অবস্থানেই বিএনপি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ডাকাতি ও প্রহসন দাবি করে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। এই নির্বাচনে ভোট চুরি ও পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সে অনুয়ায়ি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী না দিয়ে বর্জনও করেছে। নির্বাচনের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে এবার বেশ কঠোর অবস্থানে দলটি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারাই উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রথম দুইধাপের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিএনপির ১১০জন নেতা বহিষ্কৃত হয়েছেন। অন্যবার নির্বাচনের পর আবেদনের প্রেক্ষিতে দলে ফেরানো হলেও এবার সেই সুযোগ থাকছে বলেও বার্তা দেয়া হয়েছে তাদেরকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যারা মনে করছে নির্বাচনের পর আবার তাদেরকে স্বপদে ফিরিয়ে নেয়া হবে তাদের জন্য দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। তিনি বলেন, এর আগের পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশ এক নয়। সুলতান মনসুর নির্বাচিত হওয়ার পরও তাকে দল ও ঐক্যফ্রন্ট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং গণশত্রু হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই নির্বাচিত হলেই দলে ফিরতে পারবে এমন ধারণা পোষণকারীরা এখান থেকেই শিক্ষা নিতে পারেন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগের রাতে ভোট ডাকাতির জঘন্যতম উদাহরণ সৃষ্টি করেছে সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন। ওই নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা বলে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। তাই সেই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই আর কোন নির্বাচনে যাচ্ছে না রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। গত ২৪ জানুয়ারি দলটির স্থায়ী কমিটির সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বিএনপি সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। দলের সে সিদ্ধান্ত সকল সাংগঠনিক জেলাগুলোকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে বিএনপির দপ্তর থেকে। একইসাথে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দল হিসেবে বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে। এই নির্বাচনে বিএনপির কোন নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবে না। কেউ যদি এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে অংশগ্রহণ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মূলদলের পাশাপাশি বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোও তাদের নেতাকর্মীদের একই বার্তা দিয়েছে। মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, মহিলা দল আগামী উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। যদি সংগঠনের কেউ উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএনপির এই সিদ্ধান্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুরোপুরিভাবেই কার্যকর হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় ভোটারদের অনীহাও ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্বাচন কমিশন ও প্রার্থীদের আহ্বান সত্তে¡ও সামান্য সংখ্যক কিছু ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন। যা নিয়ে নির্বাচন কমিশনও বিব্রত হয়েছে। আর এটিকেই সফলতা হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করায় একইভাবে ভোটারবিহীন কেন্দ্রের চিত্র ফের দেখা যাবে। যেটি দেশে-বিদেশে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত ও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তাই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারাই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। এ পর্যন্ত প্রথম দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১১০জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও অনেকের নাম কেন্দ্রে জমা পড়েছে। তাদেরও বহিষ্কার করা হবে। বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ ফেব্রæয়ারি বহিষ্কার করা হয়েছে ৯ জনকে, ২৮ ফেব্রæয়ারি ১০ জন, ১ মার্চ ১ জন, ৩ মার্চ ৮৩ জন, ৫ মার্চ ৮জন এবং ৭ মার্চ ১জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এদের প্রায় সবাই উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ১৪ দলের শরিকেরা নিজেরাই স্বীকার করেছে ২৯ ডিসেম্বর মাঝ রাতেই একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট হয়ে গেছে। যেখানে নির্বাচন কমিশন, অংশগ্রহণকারী দলগুলো বলছে দেশে নির্বাচন নাই। একদলীয় শাসন চলছে, সেখানে তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন হয় না। তাই বিএনপি এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপরও দলের কিছু লোক রয়েছে যারা নির্বাচন এলেই অংশগ্রহণ করতে চায়। দল এবার তাদের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর। এখন পর্যন্ত যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, নির্বাচনের পরিবর্তে দলকে সুসংগঠিত করা এবং দলের প্রতি অনুগত নন এমন নেতাদের নেতৃত্ব থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই আলোকে অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপিতেও পুনর্গঠনের আলোচনা হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তা প্রমাণিত। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেই স্বীকার করেছেন যে ভোটের আগের রাতেই ভোট হয়ে যায়। তাই আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। যারাই এই সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে এজন্য তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Akram Hossain ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
Good BNP
Total Reply(0)
Md.Ali Haider ১০ মার্চ, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
জিতলে আবার ফিরিয়ে নেয়া হবে না তো?
Total Reply(0)
তাসলিমা বেগম ১০ মার্চ, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
বিএনপির এরা দাড়ায় কেন সেটাই তো বুঝিনা, এরা কি কোনদিন পাস করতে পারবে? এরা কি জানে না, ভোট কিভাবে হয়।
Total Reply(0)
তাজ মানিক ১০ মার্চ, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
বি,এন,পি বহিস্কার বিষয়টা ভালো বুঝে।
Total Reply(0)
M LR Deshi ১০ মার্চ, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
এগুলো হচ্ছে দুষ্কৃতির দরুন । কিভাবে একটি দলকে দুর্বল করা যায় এই নিয়ে ভোট ডাকাতি সরকারের ঘুম হারাম হয়ে গেছে ।
Total Reply(0)
Mantu sarder ১০ মার্চ, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 1
বিএনপি নেতাকর্মীরা যারা উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন তাদের সাধুবাদ জানাই এবং অভিনন্দন জানাই । আসলে বিএনপি'র কিছু সিনিয়র নেতা কর্মী আজ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নষ্ট করার জন্য উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না । একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজয়ের কারনে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে ভয় পাচ্ছে । তারা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে উপজেলা নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা তাদের ভোট দেবে না ।
Total Reply(0)
সাবিহা সুবা ১০ মার্চ, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
বিএনপির অবস্থা এমন হবে যে তাদের আর কোন নেতা কেই খুঁজে পাও্যা যাবে না এই দেশে। তারা দেশের মানুষের জন্যে কিছু করে নাই ক্ষমতায় থাকা কালে। তারা দেশের মানুষের টাকা চোরি করেছে , দুর্নীতি করেছে নিজেদের স্বার্থের জন্যে। তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছু পাইনি। তারা শুধু নিজেদের কে নিয়ে ভেবেছে, নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবেছে।
Total Reply(0)
Ponkaj Kumar Mondol ১০ মার্চ, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
বিএনপি আর কত নাটক করবে সেটা আমরা সাধারণ জনগণ ভেবে পাচ্ছিনা। আপনারা এত কিছু কেন করছেন ? সাধারণ জনগণ আপনাদের দুর্নীতিবাজ দলকে কখনো চাই না এটা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেছে । তাই এত নাটক করেও কোনো লাভ হবে না।
Total Reply(0)
Alif Sheikh ১০ মার্চ, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
বিএনপি দল তাদের দলের নেতাদেরকে বহিষ্কার করল না মিষ্টি খাওয়ালো তাতে জনগণের কিছুই আসে যায় না । কারণ বিএনপি দল জনগণের কাছ থেকে কখনোই আর সমর্থন পাবে না। কারণ ক্ষমতায় থেকে বিএনপি দল তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তাই তারা যতই নাটক করুক না কেন জনগণ তাদের কথায় আর ভুলবে না ।
Total Reply(0)
Abcar Kamal Barfi ১০ মার্চ, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
আমার ত মনে হয়,এরা বহিষ্কার হবে জেনেও নির্বাচনে গিয়েছে, এইছাড়া ত আর কোন উপায় ছিলনা।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১০ মার্চ, ২০১৯, ১০:৫২ এএম says : 0
ভোট চুরি চুন্নি করিয়া যাহারা ক্ষমতায় আছে ওরা জাতীয় বেঈমান,ওরা ঘৃণিত। বিএনপি যে কাজ করিতেছে চুর চুন্নি ধরার আমি বিএনপিকে অন্তরের অন্তস্থল হইতে ধন্যবাদ জানাই। ভোট চুন্নি, চুর ধরা খাইছে। সাব্বাস বিএনপি। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন