বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সত্য চিরকাল সমুদ্ভাসিত প্রেক্ষিত কাদিয়ানিয়াত

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম। এই ধর্মীয় জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণতা প্রদান করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত। সৃষ্টজগতের সকল অঙ্গনে শান্তি ও স্বস্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের কাজ। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি সঙ্ঘাত, বিশৃঙ্খলা ইসলাম পছন্দ করে না। এই নীতি ও আদর্শই প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.।
তার পরে কোনো ব্যক্তি নবুওয়াতের সম্মানিত পদমর্যাদায় ভূষিত হতে পারবে না। তার পর যে ব্যক্তি, দল-সম্প্রদায় নবী হওয়ার দাবি উত্থাপন করবে বা মেনে চলবে, সে সরাসরি কাফের ও জিন্দিক বলে পরিগণিত হবে। মহান রাব্বুল আলামিন আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী; আল্লাহপাক সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৪০)। এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, রিসালাত ও নবুওয়াতের সিলসিলা রাসূলুল্লাহ সা.-এর মাধ্যমে পরিসমাপ্ত হয়েছে। তার পরে সৃষ্টিজগতের আর কোনো নবী ও রাসূলের আগমন ঘটবে না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর : খন্ড ৩, পৃ. ৩৯৪)।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ঊনবিংশ শতকের শেষ দশকে অর্থাৎ ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে দাবি করে যে, সে প্রতিশ্রুত মাসীহ (ঈসা আ.)। এর আট বছর পর ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে সে দাবি করে, সে জিল্লি নবী, বরুজি নবী। এর এক বছর ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে স্বয়ং সম্পূর্ণ শরীয়াতি নবী হওয়ার দাবি উত্থাপন করে। (আয়নায়ে কায়িনাত : পৃ. ২১২)।
উল্লিখিত মিথ্যা, ভিত্তিহীন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা গোলাম আহমদ একজন কাফের, মুরতাদ ও জিন্দিক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাকে নবী বলে স্বীকারকারী এবং তার অনুসারীগণও কাফের, মুরতাদ ও জিন্দিক হিসেবে পরিচিত ও চিহ্নিত হয়েছে। (আল শিফা লিল কাজী আয়াজ : খন্ড ২, পৃ. ২৪৬-২৪৭; আল মাজমু শারহুল মুহাযযাব : খন্ড ১৯, পৃ. ২৩৩)।
লক্ষ করলে দেখা যায়, মির্জার অনুসারীগণ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যথা : ক. কাদিয়ানী গ্রুপ। খ. লাহোরী গ্রুপ।
কাদিয়ানী গ্রুপ মির্জাকে তার সকল দাবিতে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করে। তবে লাহোরী গ্রুপের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ করা যায়। মোট কথা, যেসব লোক ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে কাদিয়ানী হয়েছে, তাদেরকে মুরতাদ, ধর্মচ্যুত, ধর্মত্যাগী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। আর যারা জন্মগতভাবেই কাদিয়ানী, তাদেরকে জিন্দিক বলে আখ্যায়িত করতে হবে। (মিনহাজুস সুন্নাহ : খন্ড ২, পৃ. ২৩০)।
কাদিয়ানী ও লাহোরী গ্রুপের মধ্যে তাদের মূল দ্ব›দ্ব কাদিয়ানী নেতা হাকীম নূরুদ্দীনের মৃত্যুর পর নেতৃত্ব বা খেলাফতের মসনদ নিয়ে সৃষ্টি হয়। কাদিয়ানী গ্রুপ ও খান্দানের লোকেরা মির্জা মাহমুদকে খেলাফতের আসনে সমাসীন করে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে লাহোরী গ্রুপ মুহাম্মদ আলী লাহোরীকে তাদের খলিফা নির্বাচনের পক্ষাপাতী ছিল। এই মতবিরোধ ছাড়া উভয় গ্রুপের লোকেরা মির্জা কাদিয়ানীকে তার দাবিতে সত্যবাদী বলে জানত। অর্থাৎ তাকে নবী মানার ব্যাপারে সবাই একমত ছিল। যদিও লাহোরী গ্রুপের কোনো কোনো সদস্য মুখে বলে যে, আমরা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী বলে মানি না। (যেমন- তারা মাঝে মধ্যে এরূপ উক্তি করে থাকে)।
তবে, তার উত্তরে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে: ক. তাদের উক্তি বাস্তবতার পরিপন্থী, ভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। খ. তাদের ওই কথা সাময়িকভাবে স্বীকার করে নিলেও বলা যায়, তারা তো কাদিয়ানীকে মুজাদ্দিদ, মাহদী ও আল্লাহর নির্দেশপ্রাপ্ত ধন্য ব্যক্তি বলে অবশ্যই স্বীকার করে ও মান্য করে। আল কোরআনের বিধান মোতাবেক কোনো মিথ্যা, ভন্ড নবীর দাবিদারকে শুধু মুসলমান বলে কেউ বিশ্বাস করলে সে কাফের হয়ে যায়। সুতরাং কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের দুই গ্রুপের সবাই যে কাফের ও মুরতাদ, ইসলাম থেকে বিচ্যুত, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। (ইকফারুল মুলহিদীন : পৃ. ১৪)।
স্মরণ রাখা দরকার যে, ঈমন ও ইসলামের বিপরীত হলো ‘কুফর’। কুফরের আভিধানগত অর্থ ঢেকে রাখা, আচ্ছাদিত করা, গোপন করা, অকৃতজ্ঞতা জানানো ও অস্বীকার করা। ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় কুফর হলো জরুরিয়াতে দ্বীন তথা দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয়, সুস্পষ্ট, সর্বজনবিদিত বিষয়াবলি অথবা তন্মধ্য হতে কোনো একটি বিষয় অস্বীকার করা। কাদিয়ানীরা জরুরিয়াতে দ্বীনের অনেক বিষয়ের ওপর এমন সব ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে, যা বিশুদ্ধ ও অকাট্য প্রমাণাতীত বিষয়ের বিপরীত হয়। এ কারণে তাদের সবাই জিন্দিক ও কাফের শ্রেণীভুক্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
সত্য হক ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
ইসলাম বিশেষ কোনো জাতি বা জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর নাম নয়। হিন্দু ধর্মের মতো (যদি তাকে ‘ধর্ম’ বলা চলে) শুধু কিছু সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান অথবা বিশেষ কোনো উপাসনারীতির নামও নয় ইসলাম। হিন্দুদের ধর্মজগত সম্পর্কে যাদের কিছু অবগতি আছে, তারা জানেন, এ ধর্মে আকিদা-বিশ্বাসের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। যারা বেদ-উপনিষদ ইত্যাদিকে ঐশী গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করে তারা যেমন হিন্দু, যারা অস্বীকার করে তারাও হিন্দু! সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী মূর্তিপূজকেরা হিন্দু, মুর্তিপূজার সমালোচক আর্যরাও হিন্দু! একদিকে দেবদেবী ও ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা হিন্দু, আবার এগুলিকে অস্বীকারকারী নিরেট বস্ত্তবাদীরাও হিন্দু! সময়ের প্রসিদ্ধ রাজনৈতিক লীডার পন্ডিত জওহরলাল নেহরু নিজের সম্পর্কে এক জায়গায় লিখেছেন, ‘হিন্দু ধর্মটা বড় বেকায়দার জিনিস। কিছুতেই এর পিছু ছাড়া সম্ভব হয় না। আমি ভগবান মানি না, তবু হিন্দু। কোনো ধর্মেই আমি বিশ্বাস করি না, তবুও আমি হিন্দু! কি আশ্চর্যের কথা!’ কিন্তু ইসলামধর্ম এর ব্যতিক্রম। মুসলমান হওয়ার জন্য অবশ্যই সুস্পষ্ট কিছু আকীদা-বিশ্বাস গ্রহণ করা এবং সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা মেনে চলা একান্ত অপরিহার্য। এ-ছাড়া কেউ কখনো মুসলমান হতে পারবে না, কোনো নবীর সন্তান হলেও না।
Total Reply(0)
মোঃ নাজীব ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
ইসলামের এমন কোনো বিষয়ও অস্বীকার করা চলবে না, যা সন্দেহাতীতভাবে যুগপরম্পরায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং উম্মতের সাধারণ দ্বীনদার শ্রেণীও যে সকল বিষয়কে নবীজীর শিক্ষা বলে জানে। ওলামায়ে কেরামের পরিভাষায় এ ধরণের বিষয়কে ‘জরুরিয়াতে দ্বীন’ বলা হয়। যেমন, আল্লাহ একমাত্র মাবুদ, তার কোনো শরীক নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল। কেয়ামত ও আখেরাত সত্য। কোরআন আল্লাহ তাআলার নাযিল করা কিতাব। পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ। পবিত্র মক্কা নগরীর কাবাঘর হলো মুসলমানদের কেবলা ইত্যাদি। এগুলো এমন বিষয়, ইসলাম ও তার নবী সম্পর্কে যার সামান্য জানাশোনা আছে, সে-ই নিশ্চিতভাবে জানে যে, নবীজী উম্মতকে এসকল জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন। এতে সন্দেহ পোষণের কোনো অবকাশ নেই। তো মুসলমান হওয়ার জন্য এজাতীয় বিষয়ের অস্বীকার থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। কেননা এ ধরনের বিষয় অস্বীকার করার অর্থ হলো সরাসরি নবীজীর তালীম ও হেদায়াতকে অস্বীকার করা। যার পর ইসলামের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই আর থাকে না।
Total Reply(0)
নাফিজ খান রেজা ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সমস্ত বিষয় অকাট্যভাবে প্রমাণিত, যুগ-পরম্পরায় প্রতিষ্ঠিত এবং একজন সাধারণ মুসলমানের নিকটও যে বিষয়গুলি অজানা নয়, তেমন একটি বিষয় হলো খতমে নবুওতের আকীদা। অর্থাৎ আমাদের নবীজীর পর আর কোনো নবী নেই। নতুন করে কোনো নবী আর আসবে না। নবুওতের ধারা নবীজীর উপর এসে চিরতরে সমাপ্ত হয়ে গেছে -এই আকীদা।
Total Reply(0)
মুফতি নুরুল ইসলাম ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
কাদিয়ানী সম্প্রদায় প্রায় এক শতাব্দী যাবত মুসলিম পরিচয় ব্যবহার করতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ধোকা, প্রতারণা ও নির্জলা মিথ্যাচারের মাধ্যমে এ বাস্তবতাকে আড়াল করতে চাচ্ছে যে, ইসলামের নামে তারা একটি নতুন ধর্মমতের অনুসরণ করছে এবং তার প্রচারণা চালিয়ে সমাজে অশান্তি ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে পৃথিবীর প্রায় সকল মুসলিম রাষ্ট্রে, সরকারীভাবে কাদিয়ানীদেরকে সংখ্যালঘু অমুসলিম সম্প্রদায় বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানে। এজন্য তারা বিশেষভাবে আন্তরিক মোবারকবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ পাকিস্তানেই হলো কাদিয়ানীদের মূল আস্তানা। ওখান থেকে এ সম্প্রদায়ের বিশ্বব্যাপী আন্দোলন ও প্রতিপালনের কাজ পরিচালিত হতো। সুতরাং এ-ফেতনার উৎসমুখ বন্ধ করে দেওয়ার বড় দ্বীনী দায়িত্ব ছিলো পাকিস্তান সরকারের উপর এবং বিশ্ববাসী বিশেষত মুসলমানদেরকে জানিয়ে দেওয়া একান্ত কর্তব্য ছিলো যে, ইসলামের নাম ব্যবহার করে কাদিয়ানী সম্প্রদায় যে মতবাদ প্রচার করছে, প্রকৃতপক্ষে ইসলামের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এই নেক কাজে মুসলিম বিশ্ব সংস্থা ‘রাবেতায়ে আলমে ইসলামী’র অবদানও অনেক বড়। তারা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবীটাকে আন্তর্জাতিক দাবী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। ফলে পাকিস্তানসহ অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য এই দাবী আমলে নেওয়া সহজ হয়েছে।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর সুদুরপ্রসারী নীলনকশায় কাদিয়ানী মতবাদের জন্ম। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ইংরেজদের ফর্মুলা অনুযায়ী মিথ্যা নবুওয়তের দাবি করে। তার অনুসারীদের কাদিয়ানী সম্প্রদায় বলা হয়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন নস্যাৎ করা এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্যের বীজ বপন করাই হচ্ছে কাদিয়ানী মতবাদের উদ্দেশ্য।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন