শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আন্দোলন চায় তৃণমূল

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দ্রুত আন্দোলন কর্মসূচি চায় তৃণমূল নেতারা। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দলের চেয়ারপার্সন কারাবন্দি। তার মুক্তির দাবিতে দলটি এখন পর্যন্ত কোনো জোরালো আন্দোলন করতে পারছে না। মানববন্ধন কর্মসূচি বা হলের ভেতর প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অথবা সাংবাদ সম্মেলন পর্যন্তই খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন সীমাবদ্ধ। দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তির দাবিতে রাজপথে জোরালো আন্দোলন করতে না পারাটা কেন্দ্রীয় নেতাদের চরম ব্যর্থতা বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতারা। তাদের এখন একটাই দাবি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন।
তৃণমূল নেতারা মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনকে মুক্ত করতে হলে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজপথের লড়াই ছাড়া শুধুমাত্র আইনি লাড়াইয়ের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে চেয়ারপার্সনের মুক্তি আন্দোলনের কর্মসূচি দ্রুত ঘোষণার দাবি করছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই এ নিয়ে তৃণমূল নেতাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তির দাবিতে কেন আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে না এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল নেতাদের রোষানলেও পড়ছেন। গতমাসে রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসের এক আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দলের তৃণমূল নেতাদের রোষানলে পড়েন। তৃণমূল নেতাদের কথা, শুধুমাত্র সেমিনার, আলোচনা সভায় বক্তৃতা না করে দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তির লক্ষে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি দিন। তা না হলে দলের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। আন্দোলন করে দলের চেয়ারপার্সনকে কারামুক্ত করতে না পারলে আপনাদের পদে থাকার কোন অধিকার নেই।
খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের বিষয়ে কুমিল্লা জেলার নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, বিগত নির্বাচনে আমাদের প্রতি জনসমর্থন ছিল প্রায় শতভাগ। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা এই বিপুল জনসমর্থন কাজে লাগাতে পারেননি। কেন পারেননি তা জানা দরকার। নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসাবে নেয়ার কথা বলা হলেও এত বড় ভোট ডাকাতির পরও কেন সামান্যতম আন্দোলনও করা হলো না? চেয়ারপার্সন দীর্ঘদিন যাবত জেলে তার মুক্তির দাবিতে কেন কোন জোরালো কর্মসূচি নেই? এসব প্রশ্ন এখন সারাদেশের নেতা-কর্মী সমর্থকদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই খুব দ্রুত চেয়াপার্সনের মুক্তির দাবিতে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। তা না হলে ব্যর্থতার দায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সারাদেশের নেতাকর্মীদের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর এখনও হতাশা কাটেনি বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের। হামলা-মামলায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জীবন অনেকটাই দুর্বিষহ। তারপরও দলের নেত্রীর মুক্তির জন্য তারা রাজপথে নামতে প্রস্তুত। চেয়ারপার্সনের মুক্তির জন্য কেন আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া ও চেয়ারপার্সনের মুক্তির কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের মধ্যে জাগছে নানা প্রশ্ন। দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তি ছাড়া কেন নির্বাচনে অংশ নেয়া হলো, আন্দোলনের অংশ হিসাবে নির্বাচনে যাওয়া হলে ফল প্রত্যাখ্যানের পর কঠোর কোনো আন্দোলন কর্মসূচি কেন ঘোষণা হয়নি? এসব প্রশ্নের কোন সদোত্তর পাচ্ছে না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে গিয়ে তাদের মধ্যে একটা উপলব্ধি হয়েছে যে নির্বাচন এবং আন্দোলন এ দুটোর ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। চেয়ারপার্সনের মুক্তি ছাড়া, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না করে নির্বাচনে যাওয়াটা কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন। নির্বাচনে চরমভাবে পরাজয়ের পরও কেন জোরালো কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হলো না তার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের তারা দোষারোপ করছেন।
নির্বাচনে ভোট ডাকাতির বিষয়ে সম্প্রতি আয়োজিত গণশুনাননিতে তৃণমূলের নেতারা এ বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেখানে তারা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কঠোর কর্মসূচিরও দাবি জানান। এ বিষয়ে শেরপুর জেলার নেতা মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আমাদের নানা প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে। নির্বাচনের সময় কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশগুলো এসেছে-১০ ডিসেম্বরের পরে কোনো নেতাকর্মী গ্রেফতার হবে না, সুন্দরভাবে প্রচারণা চালাতে পারব। ১০ তারিখ শেষ হলো, গ্রেফতার আরও বেড়ে গেল। তখন নির্দেশ এলো সেনাবাহিনী নামলে পরিস্থিতি ভালো হবে, আমরা সুন্দর নির্বাচন করতে পারব। সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো। তারপর কেন্দ্র থেকে জানানো হলো ৩০ ডিসেম্বর সুন্দরভাবে ভোট হবে। কেন্দ্রের নির্দেশগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, আমরা নির্বাকদৃষ্টিতে দেখলাম কেন্দ্র যা বলছে তার বিপরীত কর্মকান্ড মাঠে দেখেছি। আমরা আশা করেছিলাম, কেন্দ্র জেলাওয়ারি না হলেও তিনশ’ প্রার্থী নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে ন্যূনতম এক ঘণ্টার হলেও অনশন কর্মসূচি দেবে। তা করা হলে দেশবাসী এবং সারা বিশ্ব বিষয়টি দেখত। তাও হলো না। ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে তা থেকে সরে আসা হলো। তিনি বলেন, আমরা যে ন্যূনতম প্রতিবাদ করলাম না, ন্যূনতম কোনো প্রতীকী প্রতিবাদও করলাম না- এটা তৃণমূলের সব নেতাকর্মীরই প্রশ্ন। সবার জিজ্ঞাসা, ভোটের আগের দিন ২৯ ডিসেম্বরের রাতের ঘটনা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানোর পর কেন কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়নি? এত প্রশ্নে মধ্যে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন আমাদের প্রাণ প্রিয় নেত্রী এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি। তাকে মুক্তির জন্য কেন কোনো কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে না। তৃণমূলের সবাই নেত্রীর মুক্তির জন্য দুর্বার আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির নেতা লুৎফর রহমান কাজল বলেন, বিএনপি বর্তমানে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যেভাবেই হোক নির্বাচনে পরাজয়ের পর নেতাকর্মীরা একেবারেই হতাশ। এর মধ্যে দলের চেয়ারপার্সন কারাবন্দি। তাই দলকে চাঙ্গা করতে হলে এই মুহূর্তে চেয়ারপার্সনের মুক্তির কোনো বিকল্প নেই। চেয়ারপার্সনের মুক্তির আন্দোলনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামলে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আবার চাঙ্গা হবে। দলের পনর্গঠনও স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যাবে।
দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তি আন্দোলনের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, চেয়ারপার্সনের মুক্তির আন্দোলন এখন সারাদেশের নেতাকর্মীদের দাবি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা কর্মসূচি শুরু করেছি। এ মাসের শুরুতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছি। আমাদের আইনজীবী ফোরামও কর্মসূচি পালন করেছে। এ আন্দোলন ধীরে ধীরে জোরদার হবে। আমরা আবার বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করব।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের চেয়ারর্পাসন বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তার মুক্তির দাবিতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। পাশাপাশি আমাদের আইনী লড়াইও অব্যাহত আছে। তবে এই ভোট ডাকাত স্বৈরাচারী সরকারের সময় আইনী প্রক্রিয়ায় কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে হবে। এ লক্ষে খুব শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। ইতোমধ্যে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকায় এ মাসেই একটি সমাবেশ করার কথা ভাবা হচ্ছে। এর বাইরে প্রত্যেক জেলায় জোটগতভাবে সভা-সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
টিটু ১৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
আসলেই বিএনপির কিছু নেতারা সুবিধাবাদি ত্যাগ শিকার না করলে ফল পাবে কি ভা। এমনিতে তো সব শেস হয়ে যাচ্ছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন