শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, ভুলতা ফ্লাইওভার উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সড়ক-মহাসড়কে বাস-ট্রাকসহ সবধরনের গাড়িচালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে ক্যামেরা, লেজারসহ প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। এর ফলে সড়কে দুর্ঘটনা কমে যাবে। সাধারণ মানুষকে তিনি ট্রাফিক আইন মেনে চলার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতার চার লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভার এবং লতিফপুর রেলওয়ে ওভারপাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। চালক ও পথচারীরা সড়কে নিয়ম মেনে না চলায় আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় দোষ হচ্ছে তারা ট্রাফিক আইন মানেন না। দয়া করে আপনারা রাস্তার নিয়মগুলো মেনে চলবেন। তাহলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। সড়ক দুর্ঘটনা হলে কার দোষে তা হয়েছে, তা সঠিকভাবে তদন্ত করে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
চালকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা গাড়ি চালানোর সময় রাস্তায় একটা অশুভ প্রতিযোগিতা করে, এই অশুভ প্রতিযোগিতার ফলে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। একটা গাড়ি পাস করে গেলে সেই গাড়ি ধরতে হবে! তিনি বলেন, একজন চালক যখন বাস বা ট্রাক চালায় তখন তাকে মনে রাখতে হবে, বাসে অনেক যাত্রী আছে, যাত্রীর জীবনটাও মূল্যবান, যে ড্রাইভার তারও জীবনের মূল্য আছে। সেটা তাদের মনে থাকে না।
চালক-হেলপারদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি। হেলপারদের দিয়ে গাড়ি না চালানোর নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় চালকরা ক্লান্ত হয়ে হেলপারদের দেয় এটাও খুব অন্যায় কাজ। হেলপারদেরও লাইসেন্স আছে কি না সেটাও দেখতে হবে।
চালকদের যথাযথ বিশ্রাম ও খাবার গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাস-ট্রাক বা গাড়িচালক, তারা বিশ্রাম পেল কি না? তারা সময়মতো খাবার পাচ্ছে কি না এ বিষয়টিও দেখা উচিত। ড্রাইভারদেরও যে বিশ্রাম, খাবারে সময় প্রয়োজন এ বিষয়টি অনেকে খেয়াল করেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, এত দুর্ঘটনা, এত কিছু ঘটে তারপরও কেন যেন মানুষের ধৈর্যের খুব অভাব। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তা পার হবে অথবা ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস দিয়ে রাস্তা পার হবে সেটা কেউ করতে চান না।
এ সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনার পাশাপাশি এ ঘটনায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বেঁচে যাওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে এ ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য সন্ত্রাসী’ ও ‘জঙ্গীবাদী ঘটনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এ ধরনের ঘটনা বন্ধে বিশ্ববাসীকে একযোগে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমাদের ক্রিকেট খোলোয়াড়দের ঐ মসজিদেই নামাজ পড়তে যাবার কথা। আর তারা গিয়েছিলও কিন্তু ওখানে একজন আহত মহিলা তাদেরকে মসজিদের মধ্যে ঢুকতে দেয়নি। তারা কোনমতে জীবন নিয়ে ফিরে আসে। এজন্য আল্লাহতায়ালার কাছে আমি শুকরিয়া আদায় করি। শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে বিশ্বের অন্য কোন দেশে খেলতে পাঠাবার আগে আয়োজক দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তবেই দল পাঠানো হবে। কারণ আমাদের দেশে যারা খেলতে আসে তাদেরকে আমরা সবসময় যথাযথভাবে নিরাপত্তা দিয়ে থাকি।
পরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় চারলেন ফ্লাইওভার এবং লতিফপুর রেলওয়ে ওভারপাস এলাকায় থাকা কর্মকর্তা ও উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় এলাকার ব্যাবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রী, কুষ্ঠরোগী, মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রতিনিধিরা কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এসব প্রকল্প উদ্বোধনে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক অংশ গ্রহণ করেন।
এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেন, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এসবের মধ্যে অন্যতম মেগা প্রকল্প রূপগঞ্জের ভুলতা ফ্লাইওভার। ভুলতা ফ্লাইওভার রূপগঞ্জের উন্নয়নের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সারা রূপগঞ্জবাসী আজ আনন্দিত। ফ্লাইওভারটি চালু হওয়ায় রূপগঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়নের পাশাপাশি বাণিজ্যও বাড়বে। সময় কমবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের।
রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী মহিলালীগের সভাপতি ও তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ভুঁইয়া, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কলামিষ্ট লায়ন মীর আব্দুল আলীম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আল আমিন দুলাল, রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসানসহ আরো অনেকে।
আপনার মাঝে মায়ের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই
গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেছেন, ছোটবেলায় আমি মাকে হারিয়েছি। আপনার মাঝে আমি আমার মায়ের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই। তখন প্রধানমন্ত্রী তাকে পাশে বসান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন নুর।
ডাকসু ভিপির বক্তব্য দেয়ার পর আমন্ত্রিত নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডাকসু নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ হয়, এটা সবসময় বলেছি। ছাত্রছাত্রীরা যা চাইবে, তাই হবে। ভোট কে কত পেল, সেটা বড় নয়। যারা জয়লাভ করেছে সবার কিন্তু এই বিবেচনা রাখতে হবে কে ভোট দিল কে দিল না সেটা বিষয় নয়।
নির্বাচনে ভিপি পদে হেরে যাওয়া শোভনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোটে হারার পর শোভন আমার কাছে এসেছে। আমি শোভনকে বলেছি, ভোটে হেরেছ, এবার যাও তাকে (নুর) অভিনন্দন জানাও। সে তাই করেছে। আমি এজন্য শোভনকে ধন্যবাদ জানাই। সে রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার দাদা এমপি ছিলেন, বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান। সে তার রাজনৈতিক উদারতা দেখিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব খুঁজছি। সেটা ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হলে ভালো। আমরা স্কুলজীবন থেকেই শুরু করেছি ছোটবেলা থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা থাকুক।
এর আগে বক্তব্য রাখেন ডাকসু সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য রাখেন। শনিবার বেলা ২টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আসতে শুরু করেন ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিতরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি বাসে তারা গণভবনে পৌঁছান। সবার শেষে বেলা ৩টার দিকে একটি প্রাইভেটকারে গণভবনে পৌঁছান ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Md Masud Rana ১৭ মার্চ, ২০১৯, ৪:৩৪ এএম says : 0
Really Sk Hasina is Magical Lady.
Total Reply(0)
Shariar Emon ১৭ মার্চ, ২০১৯, ৪:৩৬ এএম says : 0
নুর তোমাকে স্বাগতম। তুমি তোমার নীতি ও আদর্শের জায়গায় ঠিক থেকে এগিয়ে যাও এবং ভালো কাজের মাধ্যমে সকলকে বুঝিয়ে দাও যে তুমিই সকলের সেই প্রানের নুর।
Total Reply(0)
Nil Akash ১৭ মার্চ, ২০১৯, ৪:৩৬ এএম says : 0
গনভবন এমন একটি মেশিন, যার একদিক দিয়ে মানুষ ঢুকলে অন্যদিক দিয়ে আওয়ামিলীগ হয়ে বের হয়
Total Reply(0)
এম আলীম ১৭ মার্চ, ২০১৯, ৪:৩৮ এএম says : 0
আইরন লেডী শেখ হাসিনা কে হাজারো ছালাম,,তিনি প্রমান করছেন ঘোর শত্রুকেও বন্ধু বানানো যায়।
Total Reply(0)
Naznin Mustafa ১৭ মার্চ, ২০১৯, ৪:৫৪ এএম says : 0
নুরের মাধ্যমেই হয়তো ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ্।
Total Reply(0)
Naznin Mustafa ১৭ মার্চ, ২০১৯, ৪:৫৭ এএম says : 0
চালকদের ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
Total Reply(0)
Yasin ১৭ মার্চ, ২০১৯, ৪:৫৮ এএম says : 0
asa kori sobai PM er ai order mene cholben
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ১৭ মার্চ, ২০১৯, ১১:১৯ পিএম says : 0
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন বিশ্ব নেত্রী সেটা তিনি আবার প্রমাণ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অশান্ত পরিবেশকে শান্ত করার মাধ্যমে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের (মুক্তিযোদ্ধা) অর্জিত লাল সবুজের সালাম জানাই। আল্লাহ্‌ নেত্রী হাসিনাকে দীর্ঘায়ু ও সুসাস্থ দান করুন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন