মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইনু-মেনন বাকস্বাধীনতা চান

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নৌকায় চড়ে সংসদে গেলেও মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার যাতনায় ভুগছেন দুই বাম নেতা হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন। মন্ত্রিত্ব করার সময় বাকস্বাধীনতার প্রয়োজন না পড়লেও এখন দুই নেতা বাকস্বাধীনতা চান। তারা এখন নির্বাচনে কারচুপির বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ এবং প্রশাসনে দলবাজি বন্ধ করে সুশাসনের দাবি করছেন।
দুই নেতার অভিমত, তারা নৌকায় চড়ে পথের দিশা পেয়েছেন; তবে তাদের ভাষায় বিএনপি-জামায়াতের মতোই পুরনো বামরা (সিপিবি-বাসদ-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ৮ দলের সমন্বয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট) পথ হারিয়ে ফেলেছে। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দুই নেতা এভাবেই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগের রাতে ভোট সম্পর্কে ইনু বলেছেন, ওই নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত ভোটে আসবে না এমন প্রচারণা ছিল। ভোট হবে না নির্বাচনের মাধ্যমে একটি অস্বাভাবিক সরকার হবে। একটি ভূতের সরকার হবে। মন্ত্রী হওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবির করে ব্যর্থ হয়ে এখন রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আমার মন্ত্রী হওয়ার খায়েশ নেই। মর্যাদার যে জায়গা সেটা মন্ত্রী নয়; আমরা বাকস্বাধীনতা ও সংগঠন করার অধিকার চাই। ৩০ ডিসেম্বর আগের রাতে ভোটের বাক্স ভর্তি করা নির্বাচনে বিজয়ী এমপি মেনন উপজেলা নির্বাচন সম্পর্কে বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে শুধু ভোট কারচুপিই নয়, আমাদের কর্মীদের দাঁড়াতেই দেয়নি। তিনি স্থানীয় এই নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীদের পেশি শক্তির বর্ণনা তুলে ধরেন।
রাশেদ খান মেনন কার্যত মুম্বাইয়ের হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের কৌশল গ্রহণ করেছেন। বিগত বছরগুলোতে হিন্দি সিনেমার নায়িকারা মিডিয়ার খবরে থাকার চেষ্টায় নিজেরাই নিজেদের স্ক্যান্ডাল ছড়াতেন। মিডিয়ায় নাম থাকলে সিনেমার কাটতি বাড়ে; নায়িকাও বেশি বেশি সিনেমার অফার পান। সুবিধাবাদী রাজনীতির কারণে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় রাশেদ খান মেনন হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের সেই পথ অনুসরণ করেছেন। তিনি মিডিয়ায় থাকার জন্য হঠাৎ করে কাদিয়ানীদের পক্ষ্যে বক্তব্য দিয়ে দেশের আলেম-ওলামাদের ক্ষেপিয়ে তুলেছেন। প্রতিদিন আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা মেননের বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল করছেন; তার বিচারের দাবি করছেন। এতে বেশ মিডিয়া কভারেজ পাচ্ছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি প্রতিদিন মিডিয়ায় থাকছেন।
মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় সরকারকে একহাত নিয়েছেন মেনন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ উন্নয়ন বৈষম্য দূর করা। চীনের চেয়েও দেশে বর্তমানে অতি ধনী বেড়েছে। শীর্ষ ৫ শতাংশ ধনীর সম্পদ ১২১ গুণ বেড়েছে; অন্যদিকে সবচেয়ে গরিবের ৫ ভাগ সম্পদ ক্রমান্বয়ে কমে এক ভাগে নেমে এসেছে। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও বছরে ৮ লাখ বেকার বৃদ্ধি সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতির জন্য বিরাট হুমকি। দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা চ্যালেঞ্জ। ওপর থেকে দুর্নীতি দমন করার পরামর্শ দিয়ে সউদী আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক চুক্তির প্রসঙ্গে বলেছেন, ইয়ামেন সীমান্তে মাইন সরানো বহির্বিশ্বে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করবে। যদিও ১০ বছরে মেনন নিজের সম্পত্তি ৪ গুণ এবং স্ত্রীর সম্পত্তি ২২ গুণ বৃদ্ধি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।
মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় জাসদের একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনুও সরকারকে তুলোধুনো করেছেন ওই সাক্ষাৎকারে। নির্বাচন ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় সরকার ও ক্ষমতার অপব্যবহার, ত্রুটি-বিচ্যুতি, দুর্নীতি, দলবাজি, ক্ষমতাবাজির বিরুদ্ধে সমাজের অভ্যন্তরে যে প্রতিবাদ আছে তা বুদবুদের মতো প্রকাশ পাচ্ছে, তার প্রমাণ ডাকসু নির্বাচনে নূরুল হক নূরের বিজয়। তবে আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। আপনি যদি মনে করেন একজন ইনু বা মেনন বীরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ভূমিকা রাখবে বা বিরোধী দল জন্ম দেবে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। সামনে এজেন্ডা তিনটি- বৈষম্য কমাও, দুর্নীতি ধ্বংস করো এবং দলবাজি বন্ধ করে সুশাসন দাও। বিএনপি-জামায়াতের মতোই পুরনো বাম দলগুলোও এখন পথ হারানোর পথে।
সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সুসম্পর্ক প্রসঙ্গে ইনু বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনোই হেফাজত বা তেঁতুল হুজুরের সঙ্গে সমঝোতা করেনি। করলে জাসদ সভাপতি হিসেবে ১৪ দলীয় জোটে থাকব কি থাকব না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতাম।
’৯০-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রথম এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলের অভিযোগে মামলা করা ইনু বলেন, আমি এরশাদের প্রশংসা করব। কারণ, সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে সই করে এরশাদ সংবিধানের আনুগত্য মেনেছেন। এ জন্য তার প্রশংসা করছি। তবে আমি এরশাদের বিচার চাই। কে বৈধ আর কে অবৈধ প্রেসিডেন্ট, সে সম্পর্কে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত আছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভুল সংশোধনের দাবি জানিয়ে সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্রের মুখোমুখি করা যাবে না। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পত্রিকা চালানো নয়। সম্প্রচার কমিশন ও প্রেস কাউন্সিলের শক্তি বৃদ্ধি পাক; তারাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বোঝাপাড়া করবে। রাষ্ট্র বা তার অঙ্গ সকাল-বিকেল ফোন করে কোনটা ছাপাবে কোনটা ছাপাবে না, এ রকম দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয়। নির্ভয়ে সমালোচনার গ্যারান্টি রাষ্ট্রকে দিতে হবে। সংবাদকর্মীরা রাষ্ট্র বা সরকারের প্রতিপক্ষ নয়, গণতন্ত্রের বন্ধু। রাজনৈতিক কর্মীর ভুল সহ্য করতে পারলে সংবাদকর্মীদের ভুল সহ্য করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরো ছয় মাস-এক বছর চলার পর ত্রুটিবিচ্যুতি ভেসে উঠবে; আইনে গলদ থাকলে তা সংশোধন করতে হবে। রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুর এই ‘ছবক’ দেশবাসী কিভাবে গ্রহণ করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (17)
Delower Hossain Khan ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
এরকম কিছু রাজনতিবিদদের জন্যিই আজকে দেশের এই করুণ অবস্থা।
Total Reply(0)
কবির হোসাইন ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:২৮ এএম says : 0
এনারাই একসময় আদর্শের কথা বলতেন। আবার যখন ক্ষমতা পেলেন সব বির্সজন দিলেন । আবার এখন ভালো ভালো কথা বলছেন।
Total Reply(0)
গোলাম মোর্শেদ ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:২৯ এএম says : 0
সব রাজনীতিবিদরা কেন জানি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ হয়ে যাচ্ছেন।
Total Reply(0)
বুলবুল আহমেদ ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:৩০ এএম says : 0
ওনাদের লজ্জা শরম বলতে কিছু আছে কিনা তা নিয়ে আমার ব্যাপ সন্দেহ আছে
Total Reply(0)
হাবিবুর রহমান ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:৩০ এএম says : 0
মন্ত্রী থাকলে সব ঠিক না থাকলেই যত দোষ!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
Total Reply(0)
mostafa ১৯ মার্চ, ২০১৯, ৭:২৯ এএম says : 0
মন্ত্রী থাকলে সব ঠিক না থাকলেই যত দোষ!
Total Reply(0)
Wazi Ullah ১৯ মার্চ, ২০১৯, ৮:১০ এএম says : 0
ইনু ভাই...বিগত দশ বছরে কি কি বলেছেন..মানুষ ভুলে যায় নি. আজ কেন এভাবে বলছেন ..নিউরো..সার্জেন্ট দেখান...তাহলে হয়তো সুস্থ হবেন.
Total Reply(0)
Md. Jasim Uddin ১৯ মার্চ, ২০১৯, ৯:৩৮ এএম says : 0
কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয় না। গিরগিটির মতো সুযোগ বুঝে এরা রুপ পাল্টায়। বাক স্বাধীনতা বলতে এরা কি চায়? ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলা? অন্য কোন ব্যাপারে তাদের শরীরে তো এত চুলকানী দেখি না। এদের জেনে রাখা ভাল, এদেশ মুসলমানের। এদেশে এখনও ৯০% লোক ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। ইসলাম এমন শান্তির ধর্ম যা, নবীজী (সা.) এবং তাঁর খোলাফায়েরাশেদীনগন বাস্তবে দেখিয়েছেন। পৃথীবিতে ইসলাম এর চেয়ে উত্তম আদর্শ আর কোথায় আছে ইনু-মিনুকে দেখাতে বলেন? আসলে যাদের ধর্ম নাই তাদের নীতি আদর্শ বলতে কিছুই নাই।
Total Reply(0)
Kamrul Huda ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১০:০৪ এএম says : 0
বিএনপি বিষয়ক মন্ত্রানালয় গঠন করে ইনু মেননকে দ্বায়িত্ব দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাক স্বাধীনতা ফিরে আসবে।
Total Reply(0)
Ahmedul Haque Morshed ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১০:০৬ এএম says : 0
আপনারা নিজ নিজ দলীয় প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদে আগে বিজয়ী হোন ।তার পর বড় বড় কথা বলবেন!
Total Reply(0)
মো. মাহমুদুল আলম ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১০:২৬ এএম says : 0
দু,জনেই ......, চেয়ারকে পেয়ার করে।
Total Reply(0)
Md. Mizanur Rahman ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১০:২৬ এএম says : 0
Both are political garbage. Through them in to dustbin.
Total Reply(0)
জাকির হুসাইন ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১১:৪৩ এএম says : 0
যাদের নূন্যতম ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হওয়ার যোগ্যতা নেই। এখন এই সব মোনাফেক ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হয়েছে।
Total Reply(0)
Delowar hossain ২০ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৫ এএম says : 0
বিগত ১০ টি বছর মাতালের মত বকবক করেছেন ক্ষমতা পেয়ে এখন তো ক্ষমতা হারিয়ে পাগল হয়েগেলেন,আপনাদের কে জনগণ চিনে আপনারে যে রাম বাম রা এমন।
Total Reply(0)
mostafa siddiqui ২০ মার্চ, ২০১৯, ১১:৪৯ এএম says : 0
আহারে কষ্ট, এখন মন্ত্রীত্ব ও নাই, কথা বলার স্বাধীনতা ও নাই!! ===================================== ইসলামের বিরুদ্ধে ইহুদী, খ্রীষ্টানদের চক্রান্ত বাস্তবায়নে ধর্মীয় বিদ্ধেষ ছড়ানোর নাম কি বাকস্বাধীনতা ? ইনু-মেনন বাক স্বাধীনতা চাইলে,আমরাও মাইর স্বাধীনতা চাই, যাতে এসব নাস্তিকগুলোকে আচ্ছা করে ধোলাই করতে পারি।
Total Reply(0)
আশরাফুল ইসলাম ২৩ মার্চ, ২০১৯, ৯:৩২ পিএম says : 0
এদের একজনকে রাষ্ট্রপতি আর একজনকে সরাষ্ট্রমন্ত্রী দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে
Total Reply(0)
Monawar ১৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:২৮ পিএম says : 0
10 bosor age kothay chila chadura
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন