মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

চক্রবৃদ্ধি সুদ তুলে দেয়ার ইতিবাচক উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আগামী বাজেটে ব্যাংক ঋণে চক্রবৃদ্ধি সুদহার থাকছে না। এ ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, বিশ্বের কোথাও ব্যাংক ঋণে চক্রবৃদ্ধি সুদ নেই। সবাই সরল সুদ নেয়। আমরাও আগামী বাজেটের পর থেকে ব্যাংক ঋণের সরল সুদ হার বাস্তবায়ন করবো। গত সোমবার শেরে বাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের ফলে গ্রাহকদের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বর্তমান ব্যাংক ঋণে তিন মাস, চার মাস ও ছয় মাসে সুদের হিসাব করা হয়। সুদের উপরে আবারও সুদ বসানো হয়। আগামী বাজেট থেকে এটা তুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। সুদের হিসাব আর চক্রবৃদ্ধি হারে হবে না, সরল হারে হবে। আমরা অর্থমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন ও সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। তার এই উদ্যোগ এবং কার্যকর হলে অর্থনীতির গতি যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি ব্যাংকিং খাতে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।
ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে অনেকে তা পরিশোধ না করে ব্যাংক খেলাপী হচ্ছেন। এক্ষেত্রে অনেকে ইচ্ছা করে শোধ না করে জনগণের অর্থ মেরে দেয়ার যেমন প্রবণতা রয়েছে, তেমনি অনেকে সামর্থ্য হারিয়ে খেলাপী হচ্ছেন। এর অন্যতম একটি কারণ ঋণের স্বাভাবিক সুদের উপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বসানো। দেখা যায়, যে ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে ঋণ নেন, এক সময় লোকসানের মুখোমুখি হয়ে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েন। তার অপরিশোধিত ঋণের উপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়তে থাকায় ঋণের বোঝা ভারি হয়ে উঠে এবং এক পর্যায়ে তা পরিশোধ করতে পারে না। এ অবস্থায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে তাকে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়। দেশে এমন অসংখ্য সাধারণ ঋণ গ্রহীতা রয়েছে। অন্যদিকে একশ্রেণীর অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাব বিস্তার করে শত শত কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ঋণ খেলাপী হয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপী হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ঋণ খেলাপী হয়ে জনগণের অর্থ লোপাট করে দেয়ার এটি একটি কৌশল হিসেবে তারা নিয়েছে। তারা মনে করে, তাদের প্রভাব ও ক্ষমতার খুঁটির জোরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। অনেক ক্ষেত্রে তাই দেখা গেছে। যারা সাধারণ ও ছোট-খাটো ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা তারা ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে অনেক সময় লোকসানের মুখোমুখি হয়ে ঋণ পরিশোধে সক্ষম হন না। পরিশোধ করতে না পারায় ঋণের সুদের উপর চক্রবৃদ্ধি হার সুদ তাদের অক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে এই চক্রবৃদ্ধি সুদ বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে রয়েছে। বলা বাহুল্য, বিশ্বের কোথাও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সরল সুদের উপর চক্রবৃদ্ধি সুদ দেয়ার বিধান নেই। মানুষ সরল সুদে ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিষয়টি যথার্থই উপলব্ধি করেছেন এবং চক্রবৃদ্ধি সুদ তুলে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা তার উদ্যোগকে অভিনন্দন জানাই। বলা বাহুল্য, অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কার কাজে হাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যাংকমুখী করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে অডিটের ব্যবস্থা করছেন। ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। দেশের পিছিয়ে থাকা অঞ্চলে ক্রপ ইনস্যুরেন্স করার ব্যবস্থা করছেন। যারা ঋণ খেলাপী তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় টাকা আদায়ের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে তারা যদি ক্ষমা চেয়ে স্বাভাবিকভাবে টাকা ফেরত দেয়, তবে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে। অর্থমন্ত্রীর এসব ইতিবাচক উদ্যোগ কার্যকর হলে ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন খাত গতি লাভ করবে।
মহান আল্লাহ সুদকে হারাম এবং ব্যবসাকে হালাল করেছেন। মুসলমান বিশ্বের অনেক দেশেই সুদের কারবার রয়েছে। আমাদের দেশেও ব্যাংকিং খাতসহ ব্যক্তি পর্যায়ে সুদের বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। সুদের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে সরকারি ব্যাংকসহ বেসরকারি অনেক ব্যাংক তাদের আর্থিক খরচসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালায়। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে সুদের এ প্রক্রিয়া কাম্য না হলেও সিস্টেমের কারণে তা চলছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে এবং এতে মানুষের ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছে। আমাদের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ রয়েছেন যারা সুদের কারণে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন না। অনেকে সুদী সিস্টেমের কারণে নিরুপায় হয়ে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সুদ আবার চক্রবৃদ্ধি হারে দিতে হয়। অর্থমন্ত্রী এই চক্রবৃদ্ধি সুদের বিষয়টি অবলোপন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। আমরা আশা করি, তিনি পর্যায়ক্রমে সুদের বিকল্প হিসেবে এমন একটি ব্যবস্থার উদ্যোগ নেবেন যাতে সুদের কোনো ব্যবস্থা না থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদরাও অকপটে স্বীকার করে বলেছেন, মুসলমানদের জন্য ইসলামভিত্তিক অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাই উত্তম। আমরা জানি, অর্থমন্ত্রী একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। তাই এ বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তবে প্রাথমিকভাবে চক্রবৃদ্ধি সুদের বিষয়টি কার্যকর হলে সাধারণ মানুষ যারা ঋণ নেয় তারা উপকৃত হবেন। চক্রবৃদ্ধি সুদের জাতাকলে তাদের পিষ্ট হতে হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উদ্যোগ নিতে তারা আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন