শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা ব্রিজ

আর কত প্রাণ ঝরলে ফুটওভারব্রিজ হবে

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

একটি ফুটওভার ব্রিজের অভাবে আবারও ঝরল মেধাবি ছাত্রের প্রাণ। বসুন্ধরার এই স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় এ নিয়ে প্রায় ১৭ জনকে প্রাণ দিতে হলো। তবুও সিটি কর্পোরেশনের হুশ এলো না। আর কত প্রাণ ঝরলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রের ঘুম ভাংবে। তিনি এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করবেন। আর কত আবরারের মত মেধাবী শিক্ষর্থীর রক্ত ঝরলে এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ হবে? উপরোক্ত কথাগুলো কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলাদেশ প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আবরারের সহপাঠি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুনের।
তিনি বলেন, প্রতিদিন জীবনের ঝুকি নিয়ে আমাদেরকে এই সড়কটি পার হয়ে ইউনিভার্সিটিতে যাতায়াত করতে হয়। ঢাকা শহরের কত অপ্রয়োজনিয় স্থানে সিটি কর্পোরেশন বিনা কারণে ফুটওভার ব্রিজ নির্মান করে রেখেছে। ওই সমস্ত ফুটওবার ব্রিজ দিয়ে দিনে দু’য়েকজন মানুষও পারাপার হতে দেখা যায় না। অথচ বসুন্ধরার এই সড়টি দিয়ে প্রতি মিনিটে সাত থেকে আট’শ মানুষ পারাপার হয়ে থাকে। প্রতিদিন জীবনের ঝুকি নিয়ে এখান দিয়ে প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ রাস্তা পারাপার হয়। এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজের প্রয়োজনিয়তা গত প্রায় ৮/১০ বছরের। রাজধানীল বিভিন্ন স্থানে বিনা প্রয়োজনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করে সিটি কর্পোরেশন সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট করলেও প্রয়োজনের তাগিদে বসুন্ধরাতে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করছে না ডিএনসিসি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, আমরা বহুবার চেষ্ট করেও বসুন্ধরার ওই স্থানে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মান করতে পারিনি। বার বার কাজ শুরু করেও আমাদেরকে ফিরে আসতে হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর আগে এ সড়ক দিয়ে পারাপারকারীদে জন্য একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা যমুনা ফিউচার পার্কের পাশের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দিকে যাওয়ার সড়কটির মাথায় স্থান নির্ধারণ করি।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ফুটওভার ব্রিজটির নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করতে গেলে দেশের একটি বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তার লোকজন আমাদেরকে কাজ করতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, তাদের লোকজনের হাতে ডিএসসিসি’র কর্মকর্তা, কর্মচারিসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন অপদস্ত ও লাঞ্ছিতও হয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা এই ফুটওভার ব্রিজটি স্থানান্তর কারে ফারমগেট আনন্দ সিনেমা হলের পাশের সড়কে নির্মাণ করেছি। তিনি বলেন, এখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ হলে না কি তাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। এই অজুহাতে তারা আমাদেরকে কাজ করতে দেয়নি।
এদিকে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় গতকাল বাসচাপায় নিহত শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর নামে তিন মাসের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ময়ের আতিকুল ইসলাম। মেয়র বলেন, ‘দুই মাস কিংবা সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে আবরার চৌধুরীর নামে এখানে একটি ফুটওভার বিজ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের থেকে কয়েকজনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাসের মালিকদের সযুক্ত করা হবে। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব না। এ কাজটি আমরা খুব দ্রুত করবো।’ এসময় ঘাতক বাসচালকের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ বিচার করা হবে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় আবরার আহমেদ চৌধুরীর নিহত হন। তিনি বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব প্রফেশনালস্ (বিউপি) এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র। ভাটারা এলাকায় রাস্তা পরাপারের সময় তাকে চাপা দেয় সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটি। ঘাতক বাসচালককে আটক করেছে পুলিশ।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বিমানবন্দরের সাথে দেশের পূর্ব ও পূর্ব দক্ষিণাংশে প্রায় ৩২টি জেলার যাতায়াতের এ সড়ক প্রগতি সরণিতে কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করছিল। কিন্তু পদক্ষেপ নেয়ার পর বারবার ফিরে আসতে হয়েছিল দেশের একটি বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তার লোকজনের অসহযোগিতার কারণে।
বহু চেষ্টার পরও ফুটওভার ব্রিজ করতে না পেরে জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে বসুন্ধরার ওই স্থানে জেব্রা ক্রসিং, স্প্রিটব্রেকার ও লাইটিং এর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ করার চেষ্টা আমরা অব্যাহত রেখেছিলাম।
এরমধ্যে গতকাল ওই স্থানে বাংলাদেশ প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র আবরার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এ খবর শোনার পর মেয়র আতিকুল ইসলাম ডিএনসিসি’র ট্র্যাফিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে এখানের যতদ্রুত সম্ভব একটি ফুটওবার ব্রিজ নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেন। মেয়রের কথা মত আমরা কাজ শুরু করেছি।
ডিএনসিসি’র ট্র্যাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আমাদেরকে কোন প্রকল্প শুরু করার আগে কিছু নিয়ম কানুন ফলো করতে হয়। যেমন কাজের টেন্ডার আহ্বান, টেন্ডার ড্র, কার্যাদেশ প্রদানসহ বেশ কিছু কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে যেতে হয়। এর জন্য দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে। এর মধ্যেই আমরা এই স্থানে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারবো। তিনি বলেন, কাজ শুরু হলে সর্বচ্চো দুই মাসের মধ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় তিনিটি ফ্লাইওভারের নির্মাণের কাজ হবে। এর মধ্যে বসুন্ধরা সড়কের মাথায় একটি, বাড্ডা থানার পাশে একটি ও আফতাব নাগর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে একটি। এই তিনি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা প্রায় তিন মাস আগেই।
এছাড়াও বসুন্ধরা থেকে কুড়িল পর্যন্ত সড়কে আরও দুইটি ফুটওভার ব্রিজের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করছে ডিএনসিসি। এর মধ্যে আগামী জুন নাগাদ কুড়িল বিশ্বরোডে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলেও তিনি জানান। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া ২০ মার্চ, ২০১৯, ৩:৩৪ এএম says : 0
সিটি করপোরেশন আসলে করেটা কি ?
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৯ এএম says : 0
এভাবে রাস্তায় মানুষ খুন চলতেই থাকবে। কারণ, আমাদের পরিবহন সেক্টরটা পুরোপুরি অমানুষদের হাতে চলে গেছে। রাস্তায় যাত্রী নেওয়ার জন্য বাস চালকদের যে প্রতিযোগিতা, এটা কোনো সভ্য মানুষের কাজ নয়। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ‘কালার কোডেড বাস ও রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি’ চালু করা। আনিসুল হক জীবিত থাকার সময় এ ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সব থেমে যায়। ইদানীং এটা বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের নেতৃত্বে একটা কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু আল্লাহই জানেন, দক্ষিণের মেয়র এ ব্যাপারে কতদূর এগিয়েছেন। উত্তরের নতুন মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে সবার প্রত্যাশা, দ্রুত আনিসুল হকের রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতিতে ঢাকায় বাস চলাচল শুরু করুন। একেক রুটের একেক রঙ দিন, আধুনিক বাস স্টপেজ তৈরি করুন। স্টপেজে বাস থামা নিশ্চিত করুন। হুড়োহুড়ি, আর যাত্রী নেওয়ার প্রতিযোগিতা বন্ধে প্রতিটি বাসে ডিজিটাল বোর্ডে নম্বার লেখার ব্যাপারটিও চালু করুন। Bus Rapid Transit বা বিআরটি পুরো ঢাকা শহরে নির্মাণের উদ্যোগ নিন। টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটে ছোট ছোট স্টেশন বানিয়ে ডেমু ট্রেন বা লাইট রেল দিয়ে কমিউটার ট্রেন চালু করুন। মেট্রোরেলের কাজ দ্রুত শেষ করুন। ঢাকার বিভিন্ন করিডোরে আরও মেট্রো রেল বা পাতাল রেলের লাইন করুন। সবচেয়ে আগে সরকারি উদ্যোগে দক্ষ গণপরিবহন চালক তৈরির ব্যবস্থা করুন। পরিবহন সেক্টরে আমাদের দক্ষ মানব সম্পদের বড় অভাব। আমারা প্রতিনিয়ত এমন অনিরাপদ সড়কে চালাচল করছি। আমরা কেউই নিরাপদ নই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, অনেক হয়েছে, এবার কার্যকর ব্যবস্থা নিন। সরকার বা প্রশাসনের চেয়ে ক্ষমতাবান যে কেউই নয়, এটা বাস মালিক ও শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করুন। সবশেষে আহরারের জন্য দোয়া। তাঁর পরিবারকে আল্লাহ এই শোক বইবার শক্তি দিন।
Total Reply(0)
Mohammad Mostafa ২০ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৯ এএম says : 0
ওভার ব্রিজ করার পরে ব্রিজ এর দুই দিকে ১ কিলোমিটার করে মাজখানে উচু গাডার দিতে হবে।
Total Reply(0)
Lutfeara Rinky ২০ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৯ এএম says : 0
আর কত প্রাণ ঝরলে মানুষ ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করবে?
Total Reply(0)
PITO ২০ মার্চ, ২০১৯, ১০:২০ এএম says : 0
সুপ্রভাত,রাইদা,আনাবিল ৩ টা বাসই এই রাস্তায় উগ্রভাবে চলে। এদের বেশীরভাগ ড্রাইভার নেশাগ্রস্ত । প্রশাসনের টনক কবে নড়বে জানা নাই । আরেকটা বিষয় রামপুরা থেকে উত্তর বাড্ডা কোন ফুট ওভার ব্রিজ নেই । রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় একটি ফুট ওভার ব্রিজ অতি জরুরী । এ ছাড়া মেরুলে আরেকটি ফুট ওভার ব্রিজ জরুরী ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন