বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক দেবীর মূর্তি অবিলম্বে অপসারণ করুন-আল্লামা আহমদ শফী

প্রয়োজনে লাখো মানুষের দুর্বার গণআন্দোলন

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপনের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর দেশের শীর্ষ আলেম শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আদর্শিক চেতনার একেবারেই বিপরীত। কোনো মুসলমান মূর্তিকে ন্যায়বিচারের প্রতীক বিশ্বাস করলে বা এমন ভাবনা অন্তরে পোষণ করলে তার ঈমান থাকবে না।
গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন মূর্তি স্থাপনের চাহিদা ও সুযোগ কোনোটাই নেই। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবিলম্বে এই মূর্তি অপসারণের দাবি জানিয়ে হেফাজত আমীর বলেন, অন্যথায় ঈমান, আক্বীদা ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে মূর্তি অপসারণের দাবিতে প্রয়োজনে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলবে।
হেফাজত আমীর বলেন, যারা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করেছেন, তারা বাংলাদেশের মানুষের মনে হয়তো এমন একটা বিশ্বাস, ভাবনা তৈরি করতে চাচ্ছেন যে, আমাদের বিচারকরা গ্রিক দেবীর অনুসারী। দেবীর স্বর্গীয় আইন আর আদেশ কার্যকর করাই আমাদের বিচারকদের কাজ। অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং জনগণের বিশ্বাস বা ঈমানের কোনোই মূল নেই; যেটা এই কোটি কোটি মানুষের কাছে আইন, নীতিনৈতিকতা ও সামাজিক বিধিবিধান উৎপত্তির ক্ষেত্র ও মানদ- হতে পারে।
গ্রিক দেবীই আমাদের একমাত্র আরাধ্য। পাশাপাশি এই দৃশ্য নিত্যদিন বাংলাদেশের মানুষ দেখবে, যাতে গ্রিক দেবীর প্রতি তাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধা আরো নিবিড় হবে, এটাই হয়তো তাদের আশা। তাছাড়া গ্রিক দেবী স্থাপনকারীরা থেমিসের গায়ে শাড়ি জড়িয়ে এই দেবীকে বাংলাদেশের ঐতিহ্য বলে প্রমাণ করারও একটা অপচেষ্টা চালিয়েছে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, এটা কেবল সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে হেয় ও অপমান করা নয়, বরং কোটি কোটি মুসলমানকে ঈমান হারা করার এবং বাংলাদেশের মুসলিম ঐতিহ্য ও পরিচিতি মুছে ফেলার সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
হেফাজত আমীর বলেন, সরকারের ভেতরে ইসলামবিদ্বেষী কিছু কুচক্রি ও বিদেশি তল্পিবাহক ঝেঁকে বসেছে। তারা জনগণের প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে বিদেশি প্রভুদের খুশী করতে সরকারকে ভুল পরামর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। পাশাপাশি জোর-জুলুম, লুটপাট, অন্যায় আধিপত্য ও ভোগবাদীতা কায়েমের জন্যে তারা ইসলামের ন্যায়নীতি ও আদর্শিক চেতনাবোধকেই প্রধান বাধারূপে চিহ্নিত করে নানা দিক দিয়ে ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্যের উপর আঘাত হানতে উৎসাহ যোগাচ্ছে সরকারকে। যার পরিণতিতে বাংলাদেশে জনসংখ্যায় ৯০ ভাগ হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা নানাভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধাপ্রাপ্ত ও অধিকার হারাচ্ছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শ ও চেতনাবোধের উপর একের পর এক আঘাত হানা হচ্ছে।
তিনি বলেন, একদিকে দাড়ি, টুপি, হিজাবসহ ইসলামি পোশাক, ধর্মীয় সভা-সেমিনার ও মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা, নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে নাচ-গান, নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, ভোগবাদের নানা আয়োজন, নাস্তিক্যবাদি শিক্ষা ও আদর্শিক ধ্যান-ধারণা ও বিদেশি সংস্কৃতিকে উৎসাহ জোগানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, কার্যতঃ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে আদর্শিক আগ্রাসন চলছে। এমন অপতৎপরতা চলতে থাকলে নিশ্চিতভাবে এক সময় গণঅসন্তোষ থেকে গণবিস্ফোরণ এবং ভয়ানক সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
হেফাজত আমীর বলেন, বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। ইসলাম ধর্মমতে মূর্তি পূজা এবং মূর্তিকে যেকোনো ভালো-মন্দ ও ন্যায়-নীতির প্রতীক রূপে বিশ্বাস করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোন মুসলমান গ্রিক দেবী থেমিস বা থেমিসের অনুরূপ কোনো দেবীকে ন্যায় বিচারের প্রতীক রূপে বিশ্বাস করলে সাথে সাথে তার ঈমান চলে যাবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বহুল উচ্চারিত ৭১-এর চেতনার কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে কঠিন ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে পাকিস্তানি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্যে; মুসলিম পরিচিতি ও চেতনাবোধ মুছে ফেলার জন্য নয়। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, মুসলিম পরিচিতি ও ইসলামি চেতনাবোধ সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যেই তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে অত্র অঞ্চল বিভক্ত হয়ে স্বাধীন হয়েছিল। হেফাজত আমীর সরকারের প্রতি গুটিকয়েক নাস্তিক ও আধিপত্যবাদি বিদেশি শক্তিকে সুষ্পষ্ট করার পরিবর্তে জনগণকে খুশী করার ও তাদের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে সরকার পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারের ভেতরে ঝেঁকে বসা ইসলাম নির্মুলবাদীদের ঝেড়ে ফেলে জনমনে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ও হতাশা দূর করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Nizam Uddin ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১০:২০ এএম says : 0
এটা সকল মুসলিমদের দাবি ।
Total Reply(0)
Mosarof Hosan ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১০:২০ এএম says : 0
সহমত
Total Reply(0)
Mahmoud ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১০:২১ এএম says : 0
yes
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন