শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলা ফিচার

আত্মরক্ষায় কারাতে

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. আলতাফ হোসেন : মার্শাল আর্ট শিল্প, ক্রীড়া ও আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে গোটা বিশ্বে জনপ্রিয়। এটি একটি উচ্চমাত্রার অ্যারোবিক ব্যায়াম। নিয়ম মেনে এই ব্যায়াম যে কোনো বয়সী মানুষ করতে পারেন। সুপ্রাচীন কাল থেকেই পূর্ব এশিয়ায় মার্শাল আর্টের প্রচলন রয়েছে। তবে যাদের মেরুদন্ড ও হৃদয়ন্ত্রের সমস্যা আছে, তারা মার্শাল আর্ট চর্চা করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনন্দিন জীবনে মার্শাল আর্টের বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। যারা এটি অনুশীলন করেন তারা দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে ও কাজ করতে সক্ষম হয়ে ওঠেন। শরীরের প্রায় সব মাংসপেশী বিভিন্ন মাত্রায় ব্যবহৃত হয়। ফলে মার্শাল আর্ট চর্চায় মাংসপেশীর নমনীয়তা, ভারসাম্য ও শক্তি বাড়ে। যে কোনো ধরণের ব্যথা ও হাড়ের জোড়া বা সন্ধির সমস্যা নিয়ন্ত্রনে থাকে। এছাড়া নিয়মিত মার্শাল আর্ট চর্চা করলে মস্তিস্কের ক্ষুধা ও তৃপ্তি নিয়ন্ত্রক এলাকার ওপর প্রভাব পড়ে। তখন অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মার্শাল আর্টের চর্চায় মস্তিস্ক থেকে এন্ডোরফিল নামের জৈব রাসায়নিক পদার্থ প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত হয় । এটি বিষণœতা দূর করে ও সুখের অনুভূতি বাড়ায়।
কুংফু/গংফু হলো একটি চীনা শব্দ। এই শব্দ উল্লেখ করা হয় কোনো অধ্যায়ন শিক্ষা অথবা অনুশীলনে। যেটির জন্য প্রয়োজন ধৈর্য ও শক্তির। এই শব্দটি দ্বারা উল্লেখ করা হয় চীনা যুদ্ধ বিষয়ক শিল্পকলার ক্ষেত্রে। বিশ শতকের শেষে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় চীনা যুদ্ধ বিষয়ক শিল্পকলার ক্ষেত্রে। কাজেই দুটি শব্দ একই রকম শোনালেও আভিধানিক অর্থ আলাদা এবং কুংফু যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং কারাতের এবং কুংফু আলাদা। কারাতে একটি আঘাতের কৌশল যেটি ঘুশি, লাথি, হাঁটু ও কনুইয়ের আঘাত ও মুক্ত হস্ত কৌশল যেমন- ছুরি হস্ত ব্যবহার করা, কিছু স্টাইলে আঁকড়ে ধরা, আবদ্ধ করা, বাঁধা, আছাড় এবং অতীব গুরুপূর্ণ পয়েন্টে আঘাত শেখানো হয়। প্রিয় পাঠক ‘আত্মরক্ষায় কারাতে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের সপ্তম পর্বে আজ থাকছে ‘কিক বা লাথির ব্যবহার।

কিক বা লাথি...
কারাতে অনুশীলনের মধ্যে বেশ কয়েকটি কিক বা লাথি রয়েছে। যেমন- কিঙ্গারী, উসাঠাকিরী, উক্লাগিরী, মাউশিগিরী ও ইচাগিরী। আমরা কিভাবে ‘কিঙ্গারী’ শিখতে পারি তা আজ জেনে নেবো। অন্যান্য দিনের মতো লেসন শুরুর পূর্ব প্রথমে ছালাম, বো ও কিবাডাসী পজিশনে গিয়ে কিছু ওয়ার্ম আপ করে নেবো। ব্যায়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওয়ার্ম আপ। ওয়ার্ম আপের মাধ্যমে শরীর ও মন দুটোকেই ব্যায়ামের জন্য তৈরি করা হয়। ওয়ার্মআপের পর ব্যায়ামের ফলে ইনজুরি, মাসেল পুল, হার্ট এ্যাটাক ইত্যাদির হাত থেকে দূরে থাকা যায়। অন্যান্য সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে- শরীরে ধীরে ধীরে রক্ত সঞ্চালক বাড়ানো, শক্তি বাড়ানো, হার্ট রেট বাড়ানো শ্বাস প্রশ্বাস বাড়ানো, শরীরের ও মাসেলের তাপমাত্রা বাড়ানো সর্বোপরি শরীরে হঠাৎ কোনো চাপ না দেয়া। মাসেলের তাপমাত্রা বাড়লে, মাসেল ঢিলা ও স্থিতিস্থাপক হবে। ফলে মাসেল অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহ বাড়বে, যা মাসেলে পুষ্টি সরবরাহ করে। তাছাড়া মাসেলের কাজ করার গতিও বাড়ে ওয়ার্ম আপ করার ফলে। অনেকে ব্যায়াম করার আগে ওয়ার্ম আপ করেন না। কিন্তু এটি শরীরে জন্য খুবই ক্ষতিকর বা বিপজ্জনক। কোনো খেলাধুলা, ব্যায়াম বা শারীরিক কসরতের আগে ধীরে ধীরে হালকা ওয়ার্ম আপ করে শরীরটাকে গরম করে নেয়া, যাতে পরবর্তীতে যে কোনো চাপ সামলানোর জন্য শরীর পুরো তৈরি থাকে। যখনই শরীরটা ব্যায়ামের উপযোগী হবে তখন কারাতে প্রশিক্ষাণর পূর্বে কিছু ব্যায়াম করে নিলে ভালো হয়। ফিজিক্যাল এক্সাসাইজ অথবা ওয়ার্কআউট হলো যেকোনো শারীরিক কার্যক্রম। যা শারীরিক সুস্থতারক্ষা বা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিভিন্নকারণে ব্যায়াম করা হয় যেমন- মাংসপেশী ও সংবহনতন্ত্র সবল করা, ক্রীড়া নৈপুণ্য বৃদ্ধি করা, শারীরিক ওজন হ্রাস করা বা রক্ষা করা কিংবা শুধু উপভোগ করা। নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ সমস্যা হতে পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। তাই কারাতে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যায়াম অপরিহার্য।
প্রশিক্ষণের শুরুতে ছালাম বো, কিবাডাসী পজিশনে থেকে প্র্যাকট্রিজ শুরু করতে হবে। প্রথমে পূর্বের লেসনগুলো করে নিলে ভোলো হয়। কারণ প্রতিটি নতুন লেসন শেখার পূর্বে পুরোতন লেসনগুলো বার বার করে নিলে তার সহজেই রপ্ত হয়ে যত বেশি অনুশীলত করা হবে তত বেশি আয়ত্বে আসবে তার প্রতিটি লেসন। সেই সাথে তার পরবর্তী লেসনে যেতে পারবে। গত লেসন ছিল সায়মন সখী । আজ থাকছে কিঙ্গারী অর্থাৎ ফ্রন্ট কিক বা লাথি। লাথি বা কিক মারার সময় মনে রাখতে হবে কিবাডাসী পজিশনে থাকা অবস্থায় হাত দু’টি কোমড়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকবে। এরপর প্রথমে কিবাডাসী থাকা অবস্থায় অর্থাৎ হাটু ভাঙ্গা অবস্থায় ডান পাটি বাম পায়ে টাচ করে বরাবর পিছে চলে যাবে। একই সাথে কোমড়ে থাকা মুষ্টিবদ্ধ হাত দুটি ডান হাতটি বাম হাতের উপরে ক্রোস করে বাম হাতে চলে যাবে বাম হাটুর সামনে ডান হাত চলে যাবে ডান কোমড়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায়। শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে কিঙ্গারী অর্থাৎ ফ্রন্ট কিক বা লাথি মারার সময় প্রথমে ডান পায়ে বেশ করে করার করে নিলে ভালো হয়। কিংগারী মারার সময় অবশ্যই হোইস শব্দের মাধ্যমে করতে হবে। এখন ডান পায়ে কিঙ্গারী মারার সময় পজিশনের থাকা বাম হাটুর সামনে যে বাম হাতটি ছিল এবং কোমড়ের পাশে যে বাম হাতটি ছিল তা কিঙ্গারী মারার সময় অর্থাৎ ফ্রন্ট কিক বা লাথি মারার সময় একই সাথে দু হাত এবং পা এক সঙ্গেই কাজ করবে। কিক করার সময় পজিশনের থাকা হাত দুটি বুক বরাবর উপরের দিকে থাকবে। সেই সাথে পায়ের পাতা দিয়ে অর্থাৎ টো দিয়ে সজোড়ে সামনের দিকে কিক করতে হবে। মারার সময় হাটুটি প্রথমে ভেঙ্গে পরে পায়ের পাতা দিয়ে মারতে হবে। মারার সময় হোসই শব্দ করতে হবে। আনার সময় ঠিক একই সঙ্গে হাত পা পজিশনে চলে আসবে। এভাবে বেশ কয়েকবার কিঙ্গারী করা যেতে পারে। তারপর একই কায়দায় বাম পায়ে কিঙ্গারী করতে হবে। প্রথমে পজিশন থেকে এবার বাম পাটি ডান পা টান করে বরাবর পেছনে চলে যাবে। একই সাথে ডান হাতটি উপরে এবং বাম হাত বাম কোমড়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকবে। এবার বাম পায়ে যখন কিঙ্গারী মারবে তখন ঐ একই ভাবে হাত দুটি বুক বরাবর পজিশনে থেকে উপরে চলে আসবে এবং বাম পায়ে কিঙ্গারী অথবা ফ্রন্ট কিক হবে। একইভাবে হাটু ভেঙ্গে মারার সময় সোজা উপরে পাতা দিয়ে আঘাত করতে হবে। কিক করার পর একই সাথে হাত ও পা পজিশনে চলে আসবে। এভাবে পা বদল করে বেশ কয়েকবার আমরা কিঙ্গারী করতে পারি।
কিঙ্গারী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাত ও পায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। সেই সাথে নৈপুন্যতাও বাড়ে। সচেতনতা সৃষ্টি হয়। ওফেন্স এবং ডিফেন্সের কলাকৌশল রপ্ত হয়। এছাড়াও ফ্রন্ট কিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা সহজ হয়। কারণ হাতের শক্তির চেয়ে পায়ে শক্তির অনেকগুন বেশি। পায়ের শক্তি বৃদ্ধিতে কিংগারী এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে ফাইট করার সময়ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিঙ্গারীর কার্যকারিতা ব্যাপক।
লেখক ঃ সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ, কারাতে কোচ ও
চেয়ারম্যান, মানিকগঞ্জ গ্রিণ ক্লাব

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:৩৩ পিএম says : 0
এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন