শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এসআই মাসুদ সাময়িক বরখাস্ত : হাসপাতালে রাব্বিকে হুমকির অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশি নির্যাতনের দুইটি ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারকে গতকাল সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। অপর ঘটনাটিরও তদন্ত চলছে। অন্যদিকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গোলাম রাব্বিকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেছেন তার স্বজনেরা। তারা বলছেন, রাব্বির বন্ধু পরিচয় দিয়ে দুইব্যক্তি তাকে দেখার নাম করে কেবিনে ঢুকে এবং তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেয়।  
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বিকে নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার তাকে বরখাস্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাবিব ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্রকে পুলিশী নির্যাতনের অভিযোগে দুইটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গতকাল শনিবার সকালের দিকে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এসআই মাসুদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন। এরপর আরো তদন্তের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, গোলাম রাব্বিকে নির্যাতনের ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এসআই মাসুদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে রাব্বিকে নির্যাতনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে মোহাম্মদপুর জোনের সহকারি কমিশনার কাজী ফারুক হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর আসাদগেট এলাকা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত গোলাম রাব্বিকে আটক করে ইয়াবা ব্যবসায়ী-সেবনকারী বানানোর ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন এসআই মাসুদ শিকদারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এরপর তাকে গাড়িতে তুলে রাত ৩টা পর্যন্ত মোহাম্মদপুরে বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে বেড়ান এবং মারধর করেন। এমনকি তাকে বেড়িবাঁধে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকিও দেন।
ঘটনার পরদিন রোববার সকালে এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন রাব্বি। এরপর সারাদেশে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আলোচিত হয় বিষয়টি। ১১ জানুয়ারি সোমবার সকালে এসআই মাসুদকে প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে গোলাম রাব্বিকে নির্যাতনের ঘটনার ৭দিন পার হলেও থানায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। এমনকি ঘটনার পরদিনই রাব্বি মোহাম্মদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও সেটি এখনও মামলা হিসেবে রুজু করা হয়নি। মামলা প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর জানান, রাব্বির ঘটনা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত চলছে। উপরের অনুমতি পেলে রাব্বির দেয়া অভিযোগপত্রটি মামলা হিসেবে রুজু করা হবে। তিনি আরো জানান, থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। আমাদের ডিসি স্যারের কাছে এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখনও তদন্ত হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্রকে ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি এখন আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন তার স্বজনেরা।  
প্রসঙ্গত শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার মীরহাজীরবাগ এলাকায় সিটি করপোরেশেনের কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্রকে লাঠি ও বন্দুকের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে পুলিশ।
আহত বিকাশ চন্দ্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিউইতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে ল্যাব এইড হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
পুলিশের নির্যাতনে আহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে মধ্যরাতে ছদ্মবেশে হাসপাতালে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর দুই ব্যক্তি পূর্ব-পরিচিতের ভান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাব্বীর কেবিনে যায়। এরপর সরাসরি তার কাছে গিয়ে বসে। শারীরিক অবস্থা জানতে না চেয়ে প্রথমেই জিজ্ঞেস করেÑ ‘ঘটনার সময় ক্ষুদে বার্তায় ‘কাদের কেস’ (ইতিপূর্বে পুলিশি নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদের) বলতে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। আপনি যে এত কথা বলতেছেন, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করেন। নির্যাতিত হওয়ার পর যারা এভাবে বাড়াবাড়ি করেছিল তাদের পরিণতি কী হয়েছিল জানেন। এ ধরনের ঘটনায় শেষে মেরে ফেলে দেয়া হয়। শেষে উল্টো মামলার শিকার হয়। হাত-পা ফেলে দেয়।’ তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে রাব্বী আরও বলেন, ‘আপনি কী মুসলমান? তাহলে দুই রাকায়াত নফল নামাজ পড়ে ঘুমান। আমরা আবার আসব।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাব্বীকে এসব কথা বলার সময় একই কক্ষে কিছু দূরে তার ৬ বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। বন্ধুরা রাব্বীর কাছে ওই দু’জনকে চিনেন কিনা জানতে চাইলে ‘না’ বলে জানান তাদের। এরপর রাব্বীর বন্ধুরা প্রথম থেকে সন্দেহভাজন ওই দু’ব্যক্তির কাছে তাদের পরিচয় জানতে চান। তখন তারা একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক পরিচয় দেন। এরপর তারা পরিচয়পত্র বা ভিজিটিং কার্ড দেখতে চাইলে তারা তা দেখাতে পারেননি। পরে রাব্বীর বন্ধুরা ছবি তুলতে চাইলে মুখ ঢেকে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ে।
ওই সময় উপস্থিত রাব্বীর বন্ধু জাহিদ হাসান বলেন, তখন রাব্বীর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব মিলে আমরা ৬ জন কেবিনে ছিলাম। ওই দু’জনকে ঢুকতে দেখেই সবার সন্দেহ হয়। তবু রাব্বীর পরিচিত মনে করে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু তারা সাংবাদিক পরিচয় দেয়। তাদের পরিচয় দেয়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটির পরিচয়পত্র বা ভিজিটিং কার্ড দেখতে চাইলে বলে ফ্রিল্যান্সে কাজ করে। ওই চ্যানেলে ফোন করে তেমন কেউ নেই বলে জানা যায়। এরপর ছবি তুলতে গেলে মুখ ঢেকে বেরিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। এরপর রাব্বীকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি জানি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন