শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে -শামীম শাহেদ

সাক্ষাৎকার

বিনোদন ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘মনের কথা’ তার যাত্রা পথের ৭ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। আফসানা মিমির উপস্থাপনা ও শামীম শাহেদের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটির প্রথম শ্যুটিং সম্পন্ন হয় ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে। প্রথম প্রচার শুরু হয় ২৭ ডিসেম্বর থেকে। অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্বে ছিলো একজন পেশাদার জল্লাদের সাক্ষাৎকার। পর্দার আড়ালে বসে থেকে জল্লাদ তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। এভাবেই প্রতিটি পর্বে এক বা একাধিক ব্যাক্তি তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। এর মধ্য দিয়ে সতর্ক করা হয় দর্শকদের। ‘মনের কথা’ অনুষ্ঠানে উঠে আসে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ডোম, গাড়ি চুরি, ভেজাল শিশুখাদ্য, ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া কসমেটিকস্ বিক্রেতা, ফরমালিন দেয়া খাবারসহ বিচিত্র সব বিষয়। প্রথম অংশের স্বল্প বিরতীর পর দ্বিতীয় দফায় নতুনভাবে এই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা শুরু করেন বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান শামীম শাহেদ। সাজ্জাদ হুসাইনের প্রযোজনায় এবারের পর্বগুলোতে উঠে আসে আরও নতুন কিছু বিষয়। এর মধ্যে আছে হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি, সাইবার ক্রাইম, পকেটমার, জমির দলিল করার ক্ষেত্রে প্রতারণা, টাকার বিনিময়ে সঙ্গীনি, সিঙ্গেল মাদার, ভুয়া সাক্ষি, ইয়াবা বিক্রেতা, হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম, জ্বিনের বাদশা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখযোগ্য। ‘মনের কথা’র সাত বছর পূর্তি উপলক্ষে শামীম শাহেদ বলেন - ‘একটা টেলিভিশন অনুষ্ঠানের জন্য সাত বছর খুব বেশি সময় নয়। আবার খুব কম সময়ও নয়। আমরা চাই বাংলাভিশন মানুষের প্রয়োজনের চ্যানেল হয়ে উঠুক। সেই লক্ষ্যেই ‘মনের কথা’ করা। আশা করি, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
মনের কথার মতো এমন একটি অনুষ্ঠান কেন চিন্তা করলেন?
-দেখুন, এখন থেকে তের বছর আগে আমি যখন অপি করিম কে নিয়ে ‘আমার আমি’ করি তখন আমার মনে একটাই ভাবনা ছিল সাধারণ দর্শক হিসেবে আমি আসলে তারকাদের কাছে কী জানতে চাই, তাই দর্শকের সামনে তুলে ধরব। সেই ভাবনা থেকে ‘আমার আমি’। ‘মনের কথা’ করার সময়ও আমি ভেবেছি আশেপাশে যে এত ক্রাইম হচ্ছে, তা থেকে কীভাবে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে বাঁচানো যায়। তখন ভাবলাম একটা পর্দার আড়ালে বসে অপরাধীরা যদি তাদের কথাগুলো বলে, তাহলেই আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা সম্ভব। ‘আর্টিক্যাল থার্টিনাইন’ করার সময়ও আমি ভেবেছি আইন এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা সম্ভব। ‘আপনার আগামী’ করার সময় ভেবেছি চাকরির খবরগুলো সবার সামনে তুলে ধরে চাকরি প্রার্থীদের সহযোগিতা করা সম্ভব। এভাবেই দেখলাম বাংলাভিশন এক সময় এক নম্বর হয়ে উঠল।
একজন সফল অনুষ্ঠান প্রধান হিসেবে বাংলাভিশনকে শীর্ষে তুলে এনেছেন। আপনার মতে আমাদের টেলিভিশন মিডিয়া এখন কোন পর্যায়ে আছে?
-আমাদের দেশের টেলিভিশন মিডিয়া যে খুব একটা এগিয়েছে, এ বিচার করা কঠিন। এখানে প্রফেশনালিজম এর অনেক অভাব আছে। প্রফেশনালি যোগ্য মানুষরা যখন আমাদের টেলিভিশন মিডিয়ার ডিসিশন ম্যাকিংয়ের জায়গায় বসবে, তখন নিশ্চয়ই মানসম্পন্ন অবস্থায় উপনীত হতে পারবে।
অনেক সময় বলা হয়, আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত খুব একটা সুখকর নয়, এটা কেন?
-আগামী চার-পাঁচ বছর আমাদের টেলিভিশন মিডিয়ার জন্য খুব কঠিন একটা সময়। কারণ এই সময়টাতে আমাদের টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে। টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থা এই সময়ের মধ্যে এনালগ থেকে আইপি সিস্টেমে কনভার্ট হবে। ফ্রি টু এয়ার থেকে পে-চ্যানেলে রূপান্তরিত হবে। এটা যত দেরিতে হবে তত আমাদের কষ্ট বাড়বে। পৃথিবী ব্যাপী এনালগ সিস্টেম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের এখানে এখনো এনালগ সিস্টেম প্রচলিত। এর পরের যে সম্প্রচার ব্যবস্থা ডিটিএইচ- এই সিস্টেমও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে উঠে যাচ্ছে। এর পরের ব্যবস্থা হচ্ছে আইপি। অর্থাৎ ইন্টারনেট প্রোটোকল সিস্টেম। আমাদের দেশে এখনো ডিটিএইচ-ই শুরু হয় নাই। ফলে আমাদের সামনের সময়টা অনেক কঠিন। আমাদেরকে সরাসরি আইপিতে চলে যাওয়া জরুরি।
আইপিতে রূপান্তরিত হলে আমাদের কি সুবিধা হবে?
-দেখুন, এখন আমাদের দেশে দেড় কোটির বেশি বাড়িতে ক্যাবেল-এর কানেকশন আছে। একটা বাড়ি থেকে যদি চারশ টাকা করেও সম্প্রচার ফি নেওয়া হয়, তাহলে প্রতি মাসে এখানে ছয়শ কোটি টাকার লেনদেন হয়। যার কোনো টাকা চ্যানেল মালিকরা পায় না। আইপি করে যদি চ্যানেলগুলোকে এনক্রিপটেড করে দেওয়া হয়, তাহলে এই টাকাটা চ্যানেল মালিকরা পাবে। কিন্তু এই কাজটা করতে হবে ক্যাবল অপারেটারদেরকে সঙ্গে নিয়ে। এখন থেকে চারশ বা পাঁচশ কোটি টাকা যদি বিদেশী চ্যানেল ক্রয় করা কিংবা ক্যাবেল অপারেটরদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে দেওয়া হয়, তারপরও থেকে যায় একশ কোটি টাকা। এই টাকাটা চ্যানেল মালিকরা পেলে এক সেকেন্ডও বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে না। তখন আমাদের টেলিভিশন মিডিয়া আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এটা সম্ভব হবে যদি অনুষ্ঠানের মান ঠিক রাখা যায়। কিন্তু কাজটা খুব জরুরি। যত দ্রæত করা হবে ততই মঙ্গল।
আপনি টেলিভিশন মিডিয়া ছেড়ে দিচ্ছেন, এমন একটা কথা শোনা যাচ্ছে। এটা কতটা সঠিক?
-আমার একটা সমস্যা আছে। পাঁচ-সাত বছর কাজ করার পরই আমার মনে হতে থাকে এটা আমি কী করছি। আমি আমার মূল্যবান সময়টা নষ্ট করছি। তখন আমাকে একটা নতুন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়। আগের কাজটা আর ভালো লাগে না। বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রে চার-পাঁচ বছর কাজ করার পর পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করলাম। বার-তের বছর সংবাদপত্রে কাজ করার পর টেলিভিশন মিডিয়ায় যুক্ত হলাম। মাঝখানে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের একটা প্রজেক্টেও কাজ করেছি। তারপর টেলিভিশনে যুক্ত হয়েছি সেটাও সাত বছরের বেশি সময় হয়ে গেল। এখন টেলিভিশনের কাজের প্রতিও আমার এখন একটা বিরক্তি এসেছে। চার-পাঁচ বছর আমাকে এখন অন্য কোনো কাজ করতে হবে। তারপর যদি আগ্রহ ফিরে পাই তাহলে আবার টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত হব।
আপনি শান্ত-মরিয়ম এবং ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে যুক্ত ছিলেন। আপনার লেখা বইও প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকিট।
-শিক্ষকতা অনেক দিন থেকে বন্ধ আছে। বেশ কয়েক বছর বিরতির পর এই বছর আমার একটা বই প্রকাশিত হবে। নাম ‘উড়োজাহাজের উড়োচিঠি’। আগামী একুশে বই মেলা উপলক্ষে পার্ল পাবলিকেশন্স এটা বের করবে। তবে শিক্ষকতা করতে আমার বেশ ভালো লাগে।
জল-বালিকা নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন...
-‘জল-বালিকা’ আমার স্বপ্নের চলচ্চিত্র। যত দিন যাচ্ছে ততই আমার ভিতরে ‘জল-বালিকা’ নির্মাণের আগ্রহ বাড়ছে। এর গল্পেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। হয়তো খুব শিঘ্রই শুরু করতে পারব।
নতুন কোনো অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করছেন?
-‘রাজ-দরবার’ নামে একটা চমৎকার অনুষ্ঠানের আইডিয়া অনেক দিন থেকে মাথায় ঘুরছে। উপস্থাপক পাচ্ছি না। পেলে সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন