শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বরিশালে এযাবতকালের বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদন

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বরিশাল বিমানবন্দর বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কের সেতু ও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রসহ দক্ষিণাঞ্চলের বহু জনপদ নদী ভাঙনের মুখে
বরিশাল মহানগরী সন্নিহিত বিশাল জনপদ কির্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় বড় মাপের একটি প্রকল্প একনেক এর অনুমোদন লাভ করলেও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং গ্রামের পর গ্রাম রক্ষায় এখনো তেমন কোন অগ্রগতি নেই। তবে গত সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদিত ‘চরবাড়ীয়া এলাকা রক্ষায় সাড়ে ৪কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা প্রকল্প’টি এযাবতকালের মধ্যে বরিশালে সর্ববৃহৎ প্রকল্প। এপ্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বরিশাল মহানগরীতে পানি সরবারহের লক্ষে সদ্য নির্মিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লন্টটিও কির্তনখোলার ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। তবে এখনো বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বহু জনপদ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা মেঘনা, তেতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ সহ বিভিন্ন নদ-নদীর ভাঙনের মুখে। এমনকি বরিশাল বিমান বন্দর, বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও তার সংযোগ সড়কও নদী ভাঙনের ভয়াবহ হুমকির মুখে।
গত সপ্তাহেই একনেক এর সভায় ৩৩১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যায়ে বরিশাল মহানগরী সংলগ্ন চরবাড়িয়া এলাকার একটি বড় অংশকে কির্তনখোলার ভাঙন থেকে রক্ষায় নদী তীর রক্ষা প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। এর ফলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ওয়ায়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি থেকে উত্তর-পূর্বের সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় সিসি বøক দিয়ে নদী তীর রক্ষা করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। চলতি অর্থ বছর থেকে ২০২০-এর ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। তবে সদ্য অনুমোদিত এ প্রকল্পটির জন্য চলতি অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে ঠিক কত টাকার বরাদ্ব পাওয়া যাবে তা এখনো নিশ্চিত নন কতৃপক্ষ। আগামী মাসের মধ্যেই প্রকল্পটির বাস্তবায়নে অন্তত ২০টি প্যাকেজে দরপত্র আহবান করা হবে বলে জানা গেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারীর মধ্যেই নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বাছাই সহ কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হতে পারে বলেও আশা করছেন কতৃপক্ষ। তবে এত বড়মাপের নদী শাসন কাজে নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাক-যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি ডিপিপি’তে নেই। ফলে প্রকল্পটির বাস্তবনে মান সম্পন্ন ও অভিজ্ঞ নির্মান প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে ওয়াকিবাহাল মহলে। সময়মত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ‘চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-আরএডিপি’তে প্রকল্পটি অন্তর্ভূক্তি সহ আগামী মার্চে সংশোধীত এডিপি’তে নূন্যতম ৫০ কোটি টাকার থোক বরাদ্ব প্রয়োজন হতে পারে।
এদিকে সাগরের ঢেউ থেকে রুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত রক্ষায় প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকার একটি ‘প্রকল্প প্রস্তাব’ এখনো চ‚ড়ান্ত করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। বঙ্গোপসাগরের অব্যাহত ঢেউ আছড়ে পড়ায় গত পনের বছরে কুয়াকাটার মূল সমুদ্র সৈকতটি প্রায় ৩শ’ মিটার ভেতরে চলে এসেছে। ফলে সেখানে সৃজিত বিশাল বনভূমির অনেকটাই সাগরে বিলীন হবার পাশাপাশি উপক‚লীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সহ পর্যটন কেন্দ্রটির ছোট বড় নেক অবকাঠামোই ক্রমশ হুমকির মুখে। গত বছর খোদ পানি সম্পদ মন্ত্রী সরেজমিনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানালেও বিগত বছরাধিককালেও মূল নকশা ও প্রাক্কলনও তৈরী হয়নি। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বিভাগ থেকে বোর্ডে একটি ডিপিপি জমা দেয়া হলেও তা আবার যাচাই-বছাইয়ের জন্য ফেরত দেয়া হয়েছে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কবে নাগাদ প্রকল্প-প্রস্তাবটি অনুমোদিত হবে এবং বাস্তব কর্মকান্ড শুরু হবে তা বলতে পারছেন না কতৃপক্ষ।
এদিকে বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল প্রান্তের দোয়ারিকা এলাকার বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও তার সংযোগ সড়কে আছড়ে পড়ছে সুগন্ধা নদী। ২০০৩ সালে কুয়েত সরকারের ১৪০ কোটি টাকার অর্থায়নে নির্মিত এ সেতুটির ভাঙন রোধে ২০০৬ সাল থেকে সড়ক ও জনপথ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে। প্রাথমিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেতুটি ও এর সংযোগ সড়ক রক্ষায় ১১ কোটি টাকার একটি প্রাক্কলন জমা দিলেও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করেনি। কিন্তু সুগন্ধা নদীর পানি যত গড়াচ্ছে, ভাঙনের তীব্রতাও তত বাড়ছে। ফলে এখন ১৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সেতুটি রক্ষায় ২শ’ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে জানা গেছে। এ অর্থে সেতুটির উভয় প্রান্তে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় নদী তীর রক্ষা সহ নদীর গতিপথ পরবির্তনে ড্রেজ্রিং-এর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে মূল প্রকল্প-প্রস্তাব সহ এর নকশা এখনো চুড়ান্ত হয়নি। বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে সেতুটির সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ অংশে বালুর বস্তা ফেলে অপতত ভাঙন ঠেকা দেয়া হয়েছে। তবে তা সাময়িক। আগামী বর্ষায় সেতুটির সংযোগ সড়ক আরো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়তে পারে। সুগন্ধার ভাঙন এখন সংযোগ সড়কে থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে। উপরন্তু সেতুটির এবাটমেন্টে-এর ওয়েভ প্রটকশন ওয়ার ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে।
এদিকে দোয়ারিকার সেতুটির নিকট দূরেই সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল বিমানবন্দর, মিরগঞ্জ ফেরিঘাট, বাজার এবং আবুল কালাম ডিগ্রী কলেজ সহ সন্নিহীত এলাকা রক্ষায় ৪ কিলোমিটার নদী শাসন প্রকল্পটির জন্য ৩৬৪কোটি টাকার একটি প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ডের যাচাই বাছাই সম্পন্ন করে প্রকল্প-প্রস্তাবটি পুণঃগঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কবে নাগাদ তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন শেষে মন্ত্রণালয়ে যাবে এবং সেখানের অনুমোদনের পরে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরন করা সম্ভব হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট মহল।
এছাড়াও ৩৯৫ কোটি টাকা ব্যায়ে মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে বরিশালের মেহেদীগঞ্জ উপজেলার উলানীয়া-গোবিন্দপুর রক্ষা প্রকল্প, প্রায় ১০কোটি টাকা ব্যায়ে মুলাদীর কাজীর চর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের কয়লা নদী ভাঙন রোধ প্রকল্প দুটিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যাচাই বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় ১৪কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বাহেরচর বাজার ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার নদী শাসন প্রকল্পটির জন্য জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় বন ও পরবেশ মন্ত্রনালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলায় মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, বাজার, লঞ্চঘাট ও সংলগ্ন এলাকা রক্ষায় ৫৬০ মিটার নদী শাসনে প্রায় ১০কোটি টাকার অপর একটি প্রকল্প-প্রস্তাবও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যাচাই বাছাই শেষে পুনঃগঠন করা হচ্ছে। এপ্রকল্পটির জন্যও জলবায়ু প্রকল্প থেকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ সহায়তা চাওয়া হতে পারে। একইভাব জয়ন্তী নদীর ভাঙন থেকে বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নাজিরপুর থেকে ঘোষের চর খেয়াঘাট পর্যন্ত ৬শ’ মিটার এলাকার ভাঙন রোধে ১৪ কোটি ২৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প-প্রস্তাবও পুনঃগঠন করা হচ্ছে। জেলার মেহেদিগঞ্জ উপজেলার ভাঙন প্রতিরোধ সহ বরিশাল জেলা সদরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষে মাসকাটা নদীর ওপর ৯১৬ মিটার দীর্ঘ একটি আঁড়ি বাঁধ নির্মাণের লক্ষে ১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প ইতোমধ্য পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক-একনেক’এর অনুমোদন লাভ করলেও এখনো তা চ‚ড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেনি। তবে চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পটি চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।
নদী ভাঙনে মুলাদূতে সদ্য নির্মিত প্রাইমারী স্কুল কাম বণ্যা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নদীগর্ভে চলে গেছে নির্মান কাজ শেষ হবার কয়েক মাসের মধ্যেই। উজানের ঢলের পানি মেঘনা অববাহিকার বিভিন্ন নদ-নদী হয়ে সাগরে পতিত হয়ে থাকে। আর এর ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনপদের পর জনপদকে গ্রাস করছে বিভিন্ন নদ-নদী। এক্ষেত্রে ভাঙন রোধ সহ কার্যকর নদী শাসন ব্যবস্থায় ইতোপূর্বের অবহেলা ও উদাশীনতা পরিহার করার তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহাল মহল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহলের মতে, আগে চেয়ে সরকার নদী ভাঙন রোধে এখন যথেষ্ঠ আন্তুরিক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন