গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালা আবার সংশোধন হচ্ছে। এবারেরটি বিধিমালা সংশোধনের তৃতীয় দফা উদ্যোগ। একই বিধিমালা আগেও দুবার সংশোধন করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক গত জুলাইয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে বিধিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়ে যে চিঠি দিয়েছেন, তারই আলোকে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
খন্দকার মোজাম্মেল হক চিঠিতে বলেছিলেন, ‘বিধি, উপ-বিধিগুলো সংশোধনের অনুমোদন দেওয়া হলে দ্রুততম সময়ে পরিচালক নির্বাচন করা যেতে পারে এবং বর্তমান সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে। এর ফলে পরিচালক নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পরিষদ গঠিত হবে।’
বিদ্যমান বিধিমালায় রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের কথা বলা আছে। সংশোধন এনে এসব ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা চলছে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘আন্তমন্ত্রণালয়ের একটা সভা হয়েছে এবং বিধিমালা সংশোধনের ব্যাপারে আমরা একটা খসড়া তৈরি করছি।’ এর বাইরে কিছু বলতে চাননি তিনি। সরকার গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালা প্রণয়ন করে ২০১৪ সালের এপ্রিলে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ছয় মাসের মধ্যে পরিচালক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নানা মহল থেকে তখন প্রশ্ন উঠেছিল যে সরকারি উদ্যোগের এই নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকে রাজনীতি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ছয় মাস পার হওয়ার আগেই তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা জানান অর্থমন্ত্রীকে। একই বছরের নভেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজের নেতৃত্বাধীন কমিশন নির্বাচন করে দেবে বলে প্রজ্ঞাপন জারি করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ সময় কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে এবং বলে যে কমিশন গঠনের এক বছরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
এই ফাঁকে কেটে গেছে তিন বছর। কমিশন গঠিত হয়নি, নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণ ব্যাংক পরিষদ সদস্যদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সেই থেকে সরকারের নিয়োগ করা চেয়ারম্যানসহ তিন পরিচালক দিয়েই চলছে গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের ১২ সদস্যের পরিষদে বাকি ৯ জন ঋণগ্রহীতা সদস্য।
আড়াই বছর পর চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন। অর্থমন্ত্রী এরপর গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নেতৃত্বে চলতি মাসে অনুষ্ঠিত হয় আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠক। বৈঠকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থ বিভাগ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক চিঠিতে অর্থমন্ত্রীকে আরও বলেন, ‘বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত না হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের মতো সংবিধিবদ্ধ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের পরিচালক নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না, যা আমরা কেউই কামনা করি না। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় পূর্ণাঙ্গ পরিষদ না থাকলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ আটকে থাকে এবং সার্বিক কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।’ গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালার ৫ (১) ধারা অনুযায়ী নির্বাচিত পরিচালকদের পদ বহাল রয়েছে দাবি করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ঋণগ্রহীতা পরিচালকেরা, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পরিষদ তো নেই-ই, ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ণ দায়িত্বের কোনো ব্যবস্থাপনা পরিচালকও (এমডি) নিয়োগ পাননি গ্রামীণ ব্যাংকে। সর্বশেষ পূর্ণ দায়িত্বের এমডি ছিলেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন