শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সততা দিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র জয় করেছি -প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সরকার সততা দিয়ে জয় করেছে। তিনি বলেন, সততাই শক্তি। সততা থাকলে জোর গলায় কথা বলা যায়। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। ষড়যন্ত্র দূর করেই এখন নিজেরা পদ্মাসেতু করছি। এটি জাতি হিসেবে আমাদের গর্ব, আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল এই সেতু নির্মাণ যা আমরা করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি কথা বলতেন ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলতে চাই না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব। মাথা উঁচু করে চলব।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়তে যাচ্ছিলাম। সততা ছিল বলেই তা মোকাবিলা করতে পেরেছি। পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়ন বাস্তবায়ন করতে পারছি ওই একটা কারণেই।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতি হিসেবে এটা আমাদের গর্ব ও চ্যালেঞ্জ ছিল। তাই বলে ষড়যন্ত্র থেমে গেছে, তা কিন্তু না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পেছনে একটি ‘শক্তিধর দেশের’ প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তখনকার দিনে বিশ্ব দুটি ভাগ ছিল। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করে নাই, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সমর্থন করেছিল, তাদেরও তো ষড়যন্ত্র ছিল।
তিনি বলেন, তাদের কথা কেউ শুনল না, দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। পাকিস্তান আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় বরণ করল। বিশ্বে অনেক শক্তিধর শক্তি সাথে থেকেও তাদের জেতাতে পারল না। এই পরাজয় অনেকে সহজে মেনে নেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাই তাদের ষড়যন্ত্র চলছিল। আর সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হল, জাতির পিতা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার কথাও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এই সরকারকে না হটিয়ে ঘরে ফিরবেন না। ৯২ দিন নিজের কার্যালয়ে বসে ৬৮ জন মানুষকে পোড়াল। এভাবে মানুষ পোড়ালে আল্লাহও নারাজ হন, এটা তাঁর জানা উচিত ছিল। নাকে খত দিয়ে তাঁকে ঘরে ফিরতে হয়েছিল। কাজেই এদের চরিত্র হচ্ছে অপরাধী-খুনি এদের রক্ষা করা, মদদ দেয়া এবং তাদের নিয়ে চলা। আর নিজেরাও খুন ও অপরাধমূলক কর্মকা- করা। এরা তো দেশের কল্যাণে কোনো কাজ করতে পারে না। বা বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদার নিয়ে চলবে, এটাও বোধ হয় তাদের পছন্দ না। ওই পরাজিত শক্তি, পুরোনো প্রভুদের তারা ভুলতেই পারে না। এটা সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, একজন মানুষ তার দেশের মানুষকে কত গভীরভাবে ভালোবাসতে পারেন, তার উদাহরণ বঙ্গবন্ধু। বাঙালী প্রত্যেক মানুষের মনের কথা বঙ্গবন্ধু জানতেন। এ দেশের মানুষও তাঁকে মন থেকে মানতেন। বাংলার মানুষ শোষিত হোক-বঞ্চিত হোক, বঙ্গবন্ধু তা কোনো দিনই চাননি।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম এদেশের জন্য আল্লাহর রহমত। তাঁর মাধ্যমেই এদেশের মানুষ একটি স্বাধীন ভূখ- পেয়েছে। তিনি আজীবন মানুষের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এদেশে শোষিত মানুষকে বাঁচাতে বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের হাসি-আনন্দ-ত্যাগ করেছেন। তিনি এসবের বিনিময়ে জাতিকে একত্র করেছিলেন। তিনি সবসময় দেশের মঙ্গল চাইতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালী ক্ষমতায় থাকুক সেটা পাকিস্তান কখনও চায়নি। চেয়েছিল কিছু পদলেহি, যারা তাদের চাটুকারিতা করবে।
তিনি বলেন, ছয় দফার আন্দোলন ছিল স্বাধীনতার মূল মন্ত্র। এটি ছিল স্পষ্টত। তাই পাকিস্তানীরা চেয়েছিল যেভাবেই হোক তাঁকে আটকাতে। এজন্য বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্রে ফাঁসানো হয়েছিল। কিন্তু এদেশের মানুষ এরপরও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল। তাদের কোনো যোগ্যতা ছিল না। তাদের একমাত্র যোগ্যতা ছিল তারা এদেশের জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুক রশিদকে। জিয়া ও বিএনপি সবসময় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তারা দেশে বাংলা ভাই ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়, সে আমলে কিবরিয়া-আহসানুল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করেছে। ২১ আগস্ট দিনে-দুপুরে জনসভায় বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। এই ধরনের জঘন্য ঘটনাগুলো তারা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানের ডুপ্লিকেট সরকার করা হয়। তখন দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি।
জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রমুখ। আলোচনা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম যাচ্ছেন আজ
চট্টগ্রাম ব্যুরো : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার চট্টগ্রাম আসছেন। তিনি চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির (বিএনএ) তিনটি যুদ্ধজাহাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামে এসে পৌঁছার কথা রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির (বিএনএ) বানৌজা সমুদ্র অভিযান, বানৌজা স্বাধীনতা ও বানৌজা প্রত্যয়-এর কমিশনিং তথা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী পরে হেলিকপ্টারযোগে দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Helal Karim ১৯ মার্চ, ২০১৬, ১০:২৯ এএম says : 0
সততার নমুনা আমরা‌তো দেখ‌ছি।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন