শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

পবিত্র জুমার মাসয়ালা-মাসায়েল

প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাওলানা মুফতী মোহাম্মদ আবদুচ্ছমদ

॥ তিন ॥
(২) উক্ত সাহাবি জুমা ফরজ হওয়ার পূর্বে নিজের গবেষণার মাধ্যমে আদায় করেছিলেন। যেহেতু তখন জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার বিধান আসেনি সেহেতু ওই ঘটনা দ্বারা দলিল গ্রহণ করা জায়েজ নেই।
দলিল : ওলামায়ে আহনাফের স্বপক্ষে দলিল হলো:- ১। সহিহ বর্ণনা সূত্রে প্রমাণিত ছিল যে, বিদায় হজের সময় আরাফার দিনটি জুমার দিন। অতঃপর এ কথার ওপর রাবী ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ওই দিন আরাফার ময়দানে জুমার নামাজ আদায় করেননি বরং জোহরের নামাজ আদায় করেছিলেন।
এই কারণ ছাড়া আর কোনো কারণ নেই যে, জুমার জন্য শহর শর্ত। কিছু সংখ্যক শাফেয়ী রাসূলুল্লাহ (সা.) জুমার নামাজ না পড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসাফির ছিলেন। কিন্তু এ কারণটি গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বিরাট একটি অংশ মুকিম ছিলেন। কেননা মক্কাবাসী মুকিমের অন্তর্ভুক্ত তাঁদের ওপর জুমা ওয়াজিব ছিল। এ কারণে প্রশ্ন হতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কেন সেদিন জুমার নামাজের ব্যবস্থা করেননি?
যদিও মুসাফিরের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব নয় কিন্তু জুমার নামাজ পড়া নাজায়েজ নয়। এই জন্য যে, যদি তিনি জুমার নামাজ পড়তেন তাহলে তাঁর নামাজও আদায় হয়ে যেত এবং সব মুকিমের নামাজও আদায় হয়ে যেত। এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও জুমা পড়েননি এবং মুকিমদেরও পড়ার নির্দেশ দেননি। অথচ এমতাবস্থায় ওই সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) জুমার নামাজ না পড়ার কারণ শুধুমাত্র এটিই হতে পারে যে, সেখানে জুমার নামাজ আদায় করা জায়েজ ছিল না।
২। জায়েজ না হওয়ার দ্বিতীয় দলিল : উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত (প্রসিদ্ধ হাদিস) হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন যে, লোকেরা দলে দলে নিজেদের ঘর থেকে মদিনা শরিফের পার্শ্ববর্তী ও সংলগ্ন মহল্লা থেকে যানবাহন (নির্দিষ্ট) যোগে জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করার জন্য মসজিদে নববীতে আসতেন। (বুখারি শরিফ ১ম খ- ১২৩ পৃ. ও মুসলিম শরীফ ১ম খ- ২৮০ পৃ.) যদি ছোট বস্তির মধ্যে জুমা পড়া জায়েজ হতো তাহলে তাদের জুমার নামাজের জন্য যানবাহন (নির্দিষ্ট) করে আসার প্রয়োজন হতো না। ইহা থেকে বোঝা গেল যে, জুমার নামাজ আদায়ের জন্য শহর শর্ত। মোট কথা হলোÑ গ্রামে জুমার নামাজ আদায় করা জায়েজ নেই।
হে পাঠকবৃন্দ! বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামেই জুমার নামাজ ওয়াজিব হবে। কারণ বর্তমানে সব গ্রামই সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনাধীন থাকে এবং প্রত্যেক গ্রামে ন্যূনতম সরকারের অধস্তন প্রশাসনিক ব্যবস্থা, তথা ইউনিয়ন পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রতিনিধিত্ব করেন।
এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্র ছোটখাটো বিচারালয়ও বটে। তদুপরি সব লোকালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের লেনদেন অবাধে প্রচলিত আছে। এসব দিক বিচারে বাংলাদেশের গ্রামগুলো প্রাচীন মক্কা মদিনার শহর সমূহের সঙ্গে তুলনীয় ও শহর হিসেবে বিবেচ্য। বর্তমান কালের ফতোয়া এরই ওপর।
১৫ নং প্রশ্ন : জুমার সুন্নাতে রাতেবার দলিল যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, ইবনু তাইমিয়া (মৃত ৭৪৯ হিজরী ২৮ই জুলক্বাদা)-এর র্বণনা মোতাবেক জুমার পূর্বে সুন্নাত নামাজের কোনো প্রমাণ নেই। কেননা সূর্য ঢলার পর আজান দেয়া হতো। এরপর আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে নবী করিম (সা.) তসরিফ নিয়ে আসতেন এবং মসজিদে প্রবেশ করে খুতবা আরম্ভ করে দিতেন, খুতবা শেষে জুমার নামাজ আরম্ভ করে দিতেন। উত্তর : আমরা জানি যে, উসূলুশ শরা তথা শরিয়তের মূলনীতি মোট চারটি। যথাÑ
১। আল কোরআন, ২। আল হাদিস, ৩। উম্মতের ঐকমত্য ইজমায়ে উম্মত ৪। অনুমান (কিয়াস)। আর যদি কেউ বলে এটা বুখারি শরিফে নাই তা মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। আমরা আরও জানি যে, ইমাম আজম আবু হানিফার (রহ.) মতে জুমার নামাজের পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত এ আট রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। সাহেবাইন (রহ.)-এর মতে, জুমার নামাজের পূর্বে চার রাকাত ও পরে ছয় রাকাত এ দশ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
মুফতী মুহাঃ ছাইফুল ইসলাম সিরাজী ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৭:৩৩ এএম says : 0
আপনাদের লেখাগোল দেখে আমি অত্যান্ত আন্দনদিত,,যে ছহিহ মাসালাগোল জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন,,,, আসাকরি এর ধারাবাহিতা বজায় রেখে আগামিতেও এমন ছহিহ মাসালা উম্মতে মুহাম্মদী(সাঃ) এর সামনে তুলে ধরবেন বলে আমি আসাবাদি,,,,,,ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
sahab uddin ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ৪:২৭ পিএম says : 0
জুমার নামাজ অস্বীকারীর বিধান কি?
Total Reply(0)
খন্দকার মাকছুদ ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:১৩ পিএম says : 0
জুম্মার নামাজের খতিব হতে হলে বিবাহিত হতে হবে ? দলিল প্রমাণ দিলে ভালো হবে ।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন