জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৮টি কেন্দ্রে এবার ৪২ হাজার ৩০৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে তুমুল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর মধ্যে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পৌরসভা নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের দিক নির্দেশনায় ভোট গ্রহণের শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থাকবেন বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ র্যাব ও বিজিবি সদস্য। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে চার জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও যাচাইবাছাইকালে ব্যাংক ঋণের দায়ে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী জসীম উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হাকিম দুলাল মিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। পরে তারা আপীল করলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে এই নির্বাচনে মেয়র পদে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলহাজ নুরুল ইসলাম হায়দার। নির্বাচনের মাঠে বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নবীন। মূলত এবারের নির্বাচনে ভোটের লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নবীন-প্রবীণ প্রার্থীর মধ্যে। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী নবীন হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের মামলা-মোকাদ্দমা নেই। তার পক্ষে কক্সবাজার জেলা ও চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী একাট্টা। দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। অপরদিকে বর্তমান মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার প্রবীণ হলেও বিগত সময়ে পৌরসভার দায়িত্ব পালন কালে তিনি পৌরবাসীর কল্যাণে কতটুকু কাজ করতে পেরেছেন বা করেছেন এখন ভোটের মাঠে তা বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির সিনিয়র সকল নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে ভোটের মাঠে ব্যাপক গণসংযোগ পথসভা করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার। গণসংযোগকালে কয়েকটি স্থানে তিনি ও তার স্ত্রী প্রতিপক্ষের সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে এবারের নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৬৭ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে তিনি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২০ জন নারী কাউন্সিলর ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। তারা হলেন সংরক্ষিত আসনে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে রাশেদা বেগম (কাঁচি), জশনে আরা বুলবুল (আঙ্গুর), শিরিন আক্তার (মৌমাছি), জোসনা আক্তার (ভ্যানিটি ব্যাগ)। ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে সাঈদা ইয়াছমিন (চকলেট), নিগার উম্মে সালমা (ভ্যানিটি ব্যাগ), জেবুনেচ্ছা বেগম (গ্যাসের চুলা), রেহেনা খানম (ফ্রক), ফারহানা ইয়াছমিন (হারমনিয়াম), কামরুন নাহার (চুড়ি), রাজিয়া সুলতানা কাউন্সিলর (কাঁচি), নাসরিন ফেরদৌসী রিনা (মৌমাছি), খতিজা বেগম (পুতুল) ও জেসমিন আক্তার জেসি (আঙ্গুর)। ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে সাবেক কমিশনার নিগার সোলতানা বুলবুল (আঙ্গুর), সজরুন নাহার (ভ্যানিটি ব্যাগ), আনজুমান আরা বেগম (কাঁচি), শাহীন আক্তার (গ্যাসের চুলা), হাছনা খানম (মৌমাছি) ও সাজেদা বেগম (চকলেট)। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১নং ওযার্ডে সাহাব উদ্দিন (ঢেঁড়স), এম নুরুস শফি (পানির বোতল), নুর হোসেন কাউন্সিল (টেবিল ল্যাম্প), মকছুদুল হক মধ (উটপাখি), মনোয়ার আলম (পাঞ্জাবী)। ২নং ওয়ার্ডে নুরুল আমিন কাউন্সিলর (টেবিল ল্যাম্প), সাংবাদিক মিজবাউল হক (ব্ল্যাক বোর্ড), রেজাউল করিম (পাঞ্জাবী), আবুল কালাম (ডালিম) ও সাইফুল ইসলাম (উটপাখী)। ৩নং ওয়ার্ডে রশিরুল আইযুব কাউন্সিলর (উটপাখী), আক্কাস আহমদ (ডালিম), আশেকুর রহমান মামুন (টেবিল ল্যাম্প), জসিম আহমদ (ব্ল্যাক বোর্ড), মোহাম্মদ শফি (পাঞ্জাবী)। ৪নং ওয়ার্ডে, জাফর আলম কালু (উটপাখি), ফরিদুল ইসলাম (টেবিল ল্যাম্প), জহিরুল ইসলাম (পাঞ্জাবী)। ৫নং ওয়ার্ডে বেলাল উদ্দিন (ব্ল্যাক বোর্ড), ফোরকানুল ইসলাম তিতু (টেবিল লাইট), শফিকুল আলম (উটপাখি), জাফর আলম (টেবিল ল্যাম্প), ফোরকানুল ইসলাম (ডালিম), সাইফুল ইসলাম (পানির বোতল), জসিম উদ্দিন (পাঞ্জাবী) ও জালাল উদ্দিন (ব্রিজ)। ৬নং ওয়ার্ডে শিব্বির আহমদ (ডালিম), জয়নাল আবেদীন (টেবিল ল্যাম্প), জিয়াবুল হক (পাঞ্জাবী) ও জালাল উদ্দিন (উটপাখি)। ৭নং ওয়ার্ডে এনামুল হক বাবু (টেবিল ল্যাম্প), জামাল উদ্দিন (ডালিম), আনোয়ার হোসেন (পানির বোতল), গোলাম কাদের (ব্ল্যাকবোর্ড), হেলাল উদ্দিন (পাঞ্জাবী) ও নুরুল আমিন (উটপাখি)। ৮নং ওয়ার্ডে শহিদুল ইসলাম ফোরকান (টেবিল ল্যাম্প), মুজিবুল হক মুজিব (উটপাখি), আবুল হোসেন (পাঞ্জাবী), জয়নাল আবেদীন (পানির বোতল) ও সালাহ উদ্দিন (ডালিম)। ৯নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন (পাঞ্জাবী), হাসান উল্লাহ কায়ছার (গাঁজর), হুমায়ন কবির কমিশনার (টেবিল ল্যাম্প), ফরিদুল আলম (উটপাখি), বেলাল উদ্দিন (ডালিম) ও নজরুল ইসলাম (ব্ল্যাকবোর্ড)। এদিকে পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে একাধিক কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি করেছেন অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও হালকাকারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দুটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। ২নং ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক মিজবাউল হকও বলেন, ‘ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে কেন্দ্রে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট হোক।’ বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক র্যাব ও বিজিবি রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত করে তুলেছেন। তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী বলেন, পৌরসভার কোন কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলা ঠিক হবে না। কারণ বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্র প্রশাসনের নাগালে। ইচ্ছে করলে কয়েক মিনিটের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছাতে পারবে। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের অভিযোগ তুলে বিএনপির প্রার্থী ভোটারদের আতঙ্কে ফেলার চেষ্টা করছেন। চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি ভোট কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক থাকছে এক প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের চারটি টিম। নির্বাচন মনিটরিং করছেন চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি বলেন, সাধারণ ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন