শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

রনকি ঝড়ের পর তাসকিনের ‘হ্যাটট্রিক’

সতেরোতে মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দ্বিতীয় ম্যাচে এস জয়ের দেখা পেল চট্টগ্রাম। ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো রংপুরের। বলতে গেলে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো দলটির অধিনায়র মাশরাফি বিন মর্তুজার।
সালটা ২০০১। নভেম্বরের ৮ তারিখে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামছে টেস্ট ক্রিকেটের নবীন সদস্য বাংলাদেশ। সেসময় দুর্বল ব্যাটিং আর বোলিং নিয়ে ভুগছে বাংলাদেশ দল। বোলিং বিভাগে সাদা পোশাকে অভিষেক হলো নড়াইলের এক তরুণের। ম্যাচটি ড্র হলেও ৩.৩১ ইকোনমি রেটে প্রথম ইনিংসে মাশরাফি নিজের ঝুলিতে যোগ করেন ৪ উইকেট। নখদন্তহীন এক বোলিং আক্রমণে গতি, সুইং আর বাউন্সের মিশেলে আগ্রাসী এক তরুণ পেসার থেকে জাতীয় দলের সাহসী ও দুর্দান্ত সফল এক অধিনায়কে পরিণত হয়ে দলকে ‘টাইগার’ তকমা এনে দেওয়া সেই তরুণ মাশরাফির ক্যারিয়ারের গতকাল পূর্ণ হলো। ১৬ বছর। পা দিলেন ১৭ বছরে। তবে দিনটি স্রণীয় করে রাখতে পারলো না রংপুর রাইডার্স।
জয়ের জন্য রাংপুরের তখন দরকার ৬০ বল ৭৮। নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে এসময় মাশরাফির দলের ব্যাটিং মেরুদন্ড ভেঙে দিলেন তাসকিন আহমেদ। আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি রংপুর। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ভাইকিংসের দেওয়া ১৬৭ রানের লক্ষ্যে তারা ম্যাচ হারলো ১১ রানে।
আগেই অবশ্য শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়েছিল রংপুর। ১২তম ওভারের চতুর্থ বলে শাহরিয়ার নাফিসকে দুর্দান্ত ইয়োর্কারে সরাসরি বোল্ড করে দেন তাসকিন। পরের বলেই নতুন ব্যাটসম্যান সামিউল্লাহ সেনওয়ারিকে মিসবাহ-উল-হকের ক্যাচে পরিণত করেন। টাইগার পেসার হ্যাটট্রিক করতে পারেননি বটে কিন্তু যা করেছেন তা হয়তো হ্যাটট্রিকের চেয়েও মূল্যবান। নন স্ট্রাইক প্রান্তে তখন ছিলেন ৩২ বলে ৩৮ রান করে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা রবি বোপারা। থিসারা পেরেরার স্ট্রেট ড্রাইভ তাসকিনের পায়ে লেগে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে আঘাত হানে। এপাশে বোপারা তখন ক্রিজের বাইরে। ব্যাস! তাসকিনদের আনন্দ দেখে কে! ৩ উইকেটে ১০৫ স্কোর বোর্ড মুহূর্তেই হয়ে গেল ৬ উইকেটে ১০৫! অন্যরকম এক হ্যাটট্রিক তো বলাই যায়! কিন্তু তখনও যে ক্রিজে আরেক মারকুটে ব্যাটসম্যান পেরেরা। পরের ওভারে এসে তাকেও ফেরান তাসকিন। রংপুরের ইনিংসও আটকে যায় ৮ উইকেটে ১৫৫ রানে।
ম্যাচের শুরুটা যারা দেখছিলেন তারা হয়ত ভাবতেই পারেন, ৩ ওভারে ৫০ রান করে ফেলা একটা দল জিতবে এর আর এমন কি। যার মধ্যে ৪৮ রানই আবার লুক রনকির। কিন্তু এর পরের খবর যারা রাখেননি তারা হয়ত অবাক হবেন ৯ ওভারে ১০০ করা দলের সংগ্রহ ১৬৬ দেখে। নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান ৩৫ বলে ৭৮ রান করে আউট হওয়ার পর চট্টগ্রাম ভাইকিংসকে মনেই হয়নি তারা বাইন্ডারি মারতে উচ্ছুক! প্রথম দশ ওভারে ৮ ছয় ও ৯ বাউন্ডারি হাঁকানো দল শেষ ১০ ওভারে বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করল মাত্র একবার! শেষ ১১ ওভারে তুলতে পারল মাত্র ওভার প্রতি ৬ গড়ে ৬৬ রান। অথচ হাতে উইকেট ছিল ৬টি। এজন্য অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হককে দ্বয়ী করা যেতেই পারে। পাকিস্তানি সাবেক ৩২ বল খেলে করেন মাত্র ৩১ রান। আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান আনামুল হক ১৪ বলে করেন ১৭। বাউন্ডারি নেই তাতে।
এর আগে টানা দ্বিতীয় জয়ের লক্ষ্যে টস জিতে বল বেছে নেয়া অধিনায়ক মাশরাফিকে সইতে হয়েছে রনকির তোপ। এদিনও সৌম্য-রনকি জুটি দুর্দান্ত শুরু এনে দেয় চিটাগংকে। মাত্র ৪.৪ ওভারের সেই জটিতে ৫৯ রান যোগ করেন তারা। তবে তাতে বাংলাদেশী ওপেনারের অবদান মাত্র ৭ বলে ৭। মাশরাফির বলে জিয়াইরের হাতে ক্যাস দিয়ে ফেরেন সৌম্য। ৮.৫ ওভারে রভি বোপার বলে জিয়াউরের কাছে ক্যাস দেয়ার আগে ৩৫ বলে ৭৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন রনকি। তাতে চার ও ছয় সমান ৭টি করে। নিজের পরের ওভারে দিলশান মুনারিভিরাকে ফিরিয়ে চট্টগ্রামের লাগাম টেনে ধরেন বোপারা। ১৬ বলে মাত্র ১০ রান করে থিসারা পেরেরার বলে বাউন্ডারি লাইনে মাশরাফির দুর্দান্ত ক্যাচে পরিনত হন লুইস রিস। দুরন্ত শুরু করা চট্টগ্রামের রানের গতিও বিষ্ময়করভাবে কমে যায়। শেষ পর্যন্ত তাদের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৪ উইকেটে ১৬৬।
চিটাগং ভাইকিংস : ২০ ওভারে ১৬৬/৪ (রনকি ৭৮ সৌম্য ৭, মুনাবিরা ২০, মিসবাহ ৩১*, রিস ১০, এনামুল ১৭*; মাশরাফি ১/২৮, সোহাগ ০/২৩, নাজমুল ০/৩৬, মালিঙ্গা ০/২৫, শেনওয়ারি ০/২৩, বোপারা ২/১৪, পেরেরা ১/১৬)।
রংপুর রাইডার্স : ২০ ওভারে ১৫৫/৮ (চার্লস ১, জিয়াউর ১১, মিঠুন ২৩, বোপারা ৩৮, শাহরিয়ার ২৬, শেনওয়ারি ০, থিসারা ১১, মাশরাফি ১৩, সোহাগ১১*, মালিঙ্গা ১৪*; সানজামুল ১/২১, শুভাশিস ১/৩৫, তাসকিন ৩/৩১, রিস ২/২৬, রাজা ০/১, তানবীর ০/২৪)।
ফল : চিটাগং ভাইকিংস ১১ রান জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তাসকিন আহমেদ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন