শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

সরকারের কঠোর অবস্থান কী করবে বিএনপি

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আগামী জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর মাত্র এক বছর। তফসিল ঘোষণার সময়কাল ধরলে এ সময় আরও কম। সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ শেষের তিন মাস আগে তফসিল ঘোষণা করতে হয়। বর্তমান সরকারের মেয়াদ আছে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ হিসেবে আগামী বছরের অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তবে নির্বাচন যদি এগিয়ে আসে বা আগাম নির্বাচন হয়, সে ক্ষেত্রে সময়ের হেরফের হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এক বক্তৃতায় বলেছেন, নির্বাচন আগামী বছরের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে হবে। এসব হিসাব-নিকাশ করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের বাকি সর্বোচ্চ এক বছর। সাধারণত যে কোনো সরকারের মেয়াদের শেষের এক বছর খুব টেনশনের মধ্যে কাটে। ক্ষমতায় থাকাকালে দেশ ও জনগণের জন্য কতটুকু কল্যাণ করতে পারল, তার একটা জের টানতে হয়। এর পাশাপাশি দেশ যেমন চালাতে হয়, তেমনি বিরোধীদলের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলা করা এবং আগামী নির্বাচনে জয়-পরাজয়েরও হিসাব করতে হয়। বলা যায়, মেয়াদের শেষের বছরটি যে কোনো ক্ষমতাসীন দলের জন্য নার্ভাসনেসের বছর। আমাদের দেশের স্বাভাবিক নিয়মে এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে যে দল নির্বাচিত হয়, দেখা গেছে, পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর সে পরাজিত হয়েছে। এর কারণ, জনগণের মধ্যে পরিবর্তনের এক ধরনের প্রবণতা রয়েছে। একটির পরিবর্তে আরেকটি দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। তবে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে ২০১৩ সালে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এই ধারাবাহিকতায় ছেদ টানে। সাংবিধানিকভাবে সরকার বৈধ হলেও জনগণের মতামত প্রকাশের পরীক্ষায় দলটি উত্তীর্ণ হতে পারেনি। দেশে-বিদেশেও নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ অবস্থায়ই ক্ষমতাসীন দল চার বছর কাটিয়ে দিয়েছে। এখন আগামী নির্বাচন কীভাবে ও কী প্রক্রিয়ায় হবে, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। সংশয়ও দেখা দিয়েছে। সমঝোতার কথাও বলা হচ্ছে। বিএনপি আওয়ামী লীগকে সংলাপের আহŸান জানাচ্ছে, আওয়ামী লীগ তা নাকচ করে দিচ্ছে। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে এখনকার রাজনীতি চলছে।
দুই.
স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ধারায় আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো কারণ থাকতে পারে না। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নেবে, একে অপরের ভুল-ত্রæটি নিয়ে সমালোচনা করবে, মিছিল-মিটিং করবেÑরাজনৈতিক এ ক্রিয়াকলাপ স্বাভাবিক হলেও আগামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক নয়। একটি জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। নির্বাচন হবে কি হবে না, হলেও কার অধীনে হবেÑএ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। অথচ এমন হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। তারপরও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রের ভিত, চর্চা এবং এর ধারণ ও বাস্তবায়নে দুর্বলতার কারণে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে উঠেনি। এই আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসের কারণেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটা সময় তৃতীয় পক্ষের তত্ত¡াবধানে বা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ ধারাটি চলে আসছিল। এই দীর্ঘ সময়েও রাজনৈতিক দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো ধরনের আস্থা ও বিশ্বাস জন্মায়নি। বরং দিন দিন বিদ্বেষ আর প্রতিহিংসা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায় ২০১২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রথাটি বাতিল করে দেয়। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, এ বিশ্বাস থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করে। প্রকৃত পক্ষে, আমাদের দেশের কেউই বিশ্বাস করে না, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। এমন নজির ও দৃষ্টান্ত তাদের সামনে কখনোই স্থাপিত হয়নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটিও যে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নিরপেক্ষ হবে, তাও কেউ বিশ্বাস করেনি। তারপরও আওয়ামী লীগ অনেকটা জোর করেই নির্বাচন করে। নির্বাচনের আগেই দলটি সরকার গঠন করার মতো ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়। অন্যদিকে আন্দোলন-সংগ্রাম করে নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপিজোট ব্যর্থ হয়। এতে দুটি ফল হয়েছে। এক. ক্ষমতাসীন দল বিপুল শক্তিশালী হয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারে পরিণত হয়। তার এ আত্মবিশ্বাস জন্মায়, বিএনপিকে বাদ দিয়েও নির্বাচন করা যায় এবং ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়। দুই. ক্ষমতাসীন দলের কর্তৃত্ব ও জেল-জুলুমের মধ্যে পড়ে বিএনপি কোনঠাসা এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দলটির নেতা-কর্মীদের ঘরে থাকাই দায় হয়ে পড়ে। এ অবস্থার মধ্য দিয়েই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বিঘেœ চারটি বছর পার করে দিয়েছে। আরও এক বছর তার সামনে রয়েছে। এই এক বছরও যে পার করে দেবে, তা নিশ্চিত। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনটি কেমন হবে? আবারও কি ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হবে? ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনা উঠেছে, আরেকটি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করা সম্ভব নয় এবং উচিতও নয়। এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাঞ্চণীয় নয়। কেউ কেউ বলছেন, গত নির্বাচনটি ভারত বাদে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলো মেনে নেয়নি, এমতাবস্থায় সরকারও হয়তো এমন আরেকটি নির্বাচনের দিকে হাঁটবে না। বিএনপির নেতারাও বলছেন, আরেকটি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন এদেশে হবে না, হতেও দেয়া হবে না। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জোর দিয়ে বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী তাদের অধীনেই নির্বাচন হবে। এর কোনো হেরফের হবে না। প্রশ্ন উঠেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কেন তার অধীনেই নির্বাচন করতে চায় এবং বিএনপিই বা এত জোর কোথায় পায় যে, ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে দেবে না? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমাদের দেশের বিগত নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ধারা অনুযায়ী, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ক্ষমতাসীন দল কখনোই নির্বাচনে জিততে পারেনি। তার পরাজয় অবশম্ভাবী। আওয়ামী লীগও এটা ভালো করেই জানে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে ধারা অনুযায়ী তার পরাজয় অনিবার্য। অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়া কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। মূলত আওয়ামী লীগের ভয় এখানেই। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। অথচ যখন তত্ত¡াবধায়ক সরকার ছিল, তখনও সংবিধান ছিল এবং এ অনুযায়ীই নির্বাচন হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি। কেবল পরাজিতরা পরাজয়ের কারণ হিসেবে কিছু দোষারোপ করলেও সর্বত্র নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়। এতে কারো মধ্যে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। বরং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠার সুযোগ রয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাসীন দল কী করে নির্বাচিত হয়েছে দেশের মানুষ তা জানে। এ প্রেক্ষিতে, দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন বিরোধীদলগুলোর মেনে নেয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। যেহেতু ক্ষমতাসীন দলই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে, তাই তার অধীনে নির্বাচন করা বিরোধীদলগুলোর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ না থেকে বিএনপি যদি থাকত, তাহলেও হয়তো একই কথা প্রযোজ্য হতো। কাজেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই।
তিন.
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি না যায়, তাহলে কি হবে? ক্ষমতাসীন দলের এখন যে অবস্থান, তাতে তারা নিজেদের অধীনে নির্বাচন করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না। ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, এক চুলও ছাড় দেবে না। এ অবস্থায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি ঝুলেই থাকল। মীমাংসা কীভাবে হবে, তা ধারনার বাইরে। বিএনপি বারবার সরকারকে আহŸান জানাচ্ছে, এ নিয়ে আলোচনা ও সমঝোতা করার জন্য। কোনো আলোচনা হবে না বলে সরকার একবাক্যে না করে দিচ্ছে। উপরন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। তাকে আসতেই হবে, তানাহলে তার অবস্থা মুসলিম লীগের মতো সংকুচিত হবে। তার এ কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ রাজনৈতিক কূটকৌশলে আওয়ামী লীগ খুবই পরিপক্ক। সরকারবিরোধী দলকে কীভাবে শায়েস্তা ও সংকুচিত করা যায়, তা সরকার দেখিয়ে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সরকার কূটকৌশল অবলম্বন করবে, তাতে সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে তার তৎপরতা শুরুও হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বিএনপির মধ্যে ভাঙন ধরাতে পারে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে মাইনাস করে দিতে পারে। এ দুজনকে বাদ দিলে বিএনপির নেতৃত্ব বলতে কিছু থাকবে না। এ সুযোগে বিএনপির কিছু সুবিধাবাদী নেতাকে দিয়ে দলটিকে দুই টুকরো করে এক টুকরোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাবে। বলা বাহুল্য, বিএনপিতে যত সুবিধাবাদী নেতার সমাবেশ ঘটেছে, অন্য কোনো দলে এত সুবিধাবাদী নেতা নেই। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তা দেখা গেছে। এ বিবেচনায়, যখন খালেদা জিয়া মাইনাস হয়ে যাবেন, তখন সাবেক সংস্কারপন্থীদের সাথে নতুন সুবিধাবাদীরা যুক্ত হয়ে যদি বিএনপি-২ গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এতে দলটি যে সংকুচিত হবে, তার একটি ইঙ্গিত হয়তো ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে উঠে এসেছে। যদিও বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। সে চেষ্টা সফল না হলেও, যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসবে তখন যে তা সফল হবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ সরকার তার অধীনে নামকাওয়াস্তে হলেও সব দলের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নির্বাচন করতে অনেকটা একরোখা অবস্থানে রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তার ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে সে তা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য কূটকৌশল এবং শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন হলেও তা অবলম্বন করবে। বলা বাহুল্য, যে সরকার ৫ জানুয়ারির মতো একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে দ্বিধা করে না, সে সরকারের কাছে খÐিত বিএনপিকে নিয়ে একটি নির্বাচন করে ক্রেডিট নেয়া কোনো ব্যাপারই নয়। বলতে তো পারবে বিএনপির অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বাদ না দেয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, খালেদা জিয়ার যদি সাজা হয়ে যায়, তবে বিএনপি কি করবে? আন্দোলন-সংগ্রাম করবে? সে সামর্থ্য কি দলটির আছে? এটা কে না জানে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলন কোনো সরকারই এমনি এমনি করতে দেয়নি। সরকার দমন প্রক্রিয়া চালিয়েছে। আন্দোলন মানে রাস্তায় নেমে আনন্দ-উৎসব করা নয়। এজন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। দমন-পীড়ন সহ্য এবং উপেক্ষা করতে হয়। বিএনপি কি বিগত কয়েক বছরে এমন আন্দোলন করতে পেরেছে? বরং মানুষ দেখেছে, আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিএনপির প্রথম সারির নেতারা মাঠে নামেননি। ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও নেতৃত্বহীনতায় কর্মীরা মাঠে নামতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক তো প্রায়ই বলেন, বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিয়ে নেতারা ঘরে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখেন। তার এই তীব্র কটাক্ষপূর্ণ বক্তব্য উপেক্ষার নয়। হিন্দি সিরিয়াল না দেখলেও বিএনপি নেতারা যে ঘরে বসে থাকে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিএনপির নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে, বেগম খালেদা জিয়া যখন রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যান,তখন রাস্তার দুই পাশে যে অসংখ্য মানুষের ঢল নেমেছিল, তা কি সরকার ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল? পারেনি। এ থেকে তো এ বাস্তবতাই প্রতিভাত হয়, রাস্তায় যখন হাজার হাজার মানুষ নামে, তখন সরকার যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, তা ঠেকাতে পারে না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের এ বাস্তবতাই এখন উপলব্ধি করতে হবে।
চার.
আগামী নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান যে অবস্থান এবং মনোভাব, তাতে মনে হচ্ছে, যে কোনো উপায়ে নির্বাচন করবেই। কারণ দলটি বিএনপিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। বরং বিভিন্ন উপায়ে কোনঠাসা করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। মাঠ পর্যায়ে দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। অর্থাৎ বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠার সুযোগ দিচ্ছে না। এ সত্যটিই বারবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন। তিন দিন আগেও বলেছেন, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হলেও জনসমর্থনের দিক থেকে অনেক শাক্তিশালী। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকবিএনপির শক্তির উৎস বলে দিচ্ছেন, সেখানে বিএনপির নেতৃবৃন্দের কি করতে হবে, তা কি বলে দেয়ার প্রয়োজন আছে? এখন সরকারের মনোযোগ বেগম খালেদা জিয়ার দিকে। সরকার ভাল করেই জানে, খালেদা জিয়া যে পথে যাবেন, সে পথে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামবে। এই ঢল বন্ধ করতে হলে তাকে থামাতে হবে। থামানোর একটাই উপায় মামলার কার্যক্রম গতিশীল করা। গতিও পেয়েছে। নিষ্পত্তির খুব কাছাকাছি এসে পড়েছে। যদি তা হয় তবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদায়ে বিএনপি যে সক্ষম হবে না, তা এক প্রকার নিশ্চিত। তবে এ কথাও সত্য, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের তাকিদ দিয়েছে। এমনকি প্রতিবেশি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। দেখার বিষয় হচ্ছে, এসব তাকিদ এবং চাপ ক্ষমতাসীন দল কীভাবে সামাল দেয়। এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ক্ষমতাসীন দল যদি আগামী নির্বাচন সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে চায় এবং বিএনপিকে যদি দুর্বল করা না যায়, তবে তার সাথে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। এছাড়া বিকল্প নেই। প্রকাশ্যে হোক বা পর্দার আড়ালে হোক, সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। তা নাহলে বিএনপিকে আন্দোলন-সংগ্রামে যতই দুর্বল ভাবা হোক না কেন, এ অবস্থায়ই যদি আন্দোলনে নামে, দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ফাহাদ ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:৪২ এএম says : 2
বিএনপিকেও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন