বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হঠাৎ বন্ধ গণপরিবহন : চরম ভোগান্তিতে মানুষ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সকাল থেকে ঢাকামুখী সব ধরণের গণপরিবহন বন্ধ। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন ঢাকামুখী দুরপাল্লার যাত্রীরা। এদিকে, রাজধানী ও আশপাশের সিটি সার্ভিসও ছির বন্ধ। তাতেও বাড়ে ভোগান্তি। উপায় না পেয়ে অনেকেই সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা ভাড়া করে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। পথিমধ্যে মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট। এর মধ্যে গতকাল জেএসসি’র গণিত পরীক্ষা ছিল। গণপরিবহন সঙ্কটে পরীক্ষার্থীদেরও সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেকে সময়মতো পরীক্ষার হলে উপস্থিত হতে পারেনি। সব মিলে গতকাল চরম ভোগান্তিতে কেটেছে রাজধানীবাসীর। দূরপাল্লা এবং নগর পরিবহন হঠাৎ বন্ধের জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ বন্ধ করতেই এই কৌশল নেয়া হয়েছে। আমাদের জেলা ও থানা সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, গতকাল রবিবার সকাল থেকেই ঢাকার কাছের জেলাগুলো থেকে ঢাকামুখী কোনো গণপরিবহন ছাড়তে দেয়া হয়নি। সকাল থেকেই গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে কোনো বাস ছাড়েনি। সকাল থেকে দৃপুর পর্যন্ত দুরপাল্লার বাসগুলোকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। চট্টগ্রাম-ঢাকা, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের যাত্রীদের কাঁচপুর ব্রিজের কাছে, ময়মনসিংহ-ঢাকা, টাঙ্গাইল-ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের গাজীপুরের চন্দ্রায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
গতকাল সকালে পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষ পায়ে হেঁটে এবং রিকশাযোগে আদালতে আসছেন। মজিদ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, আদালতে আসার জন্য সকাল ৭টা থেকে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করেছেন তিনি। কোনো কিছু না পেয়ে শেষে ৩শ’ টাকায় রিকশা ভাড়া করে দেড় ঘণ্টায় এসেছেন। মতিঝিলে কথা হয় এক নারী যাত্রীর সঙ্গে। তিনি যাবেন বাংলামোটর। তিনি জানান, ৪০ মিনিট ধরে বাসের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু বাসের দেখা মিলছে না। উপায় না পেয়ে রিকশা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। বেলা ১১টার দিকে শনিরআখড়ায় কয়েকশ’ যাত্রীকে দেখা যায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে। একজন যাত্রী জানান, রায়েরবাগ, কাজলা, চিটাগাং রোডে হাজার হাজার মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। রাস্তায় কোনো বাস না থাকায় হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে রওনা করেছেন। ওই যাত্রী বলেন, দুই একটি বাস পাওয়া গেলেও যাত্রীরা তাতে উঠতে পারছেন না। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের মাথায় পুলিশ বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড়ে মিজানুর রহমান নামে এক অবিভাবক জানান, তার মেয়ের জেএসসির কেন্দ্র যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলে। সকাল ১০টা থেকে গণিত পরীক্ষা। মেয়েকে নিয়ে তিনি সকাল সোয়া ৯টায় বের হয়েছেন। পথিমধ্যে ১৫ মিনিট লাগলে আরও ১৫ মিনিট বাকী থাকে-এ হিসাব করে ঘর থেকে বেরিয়ে বিপদে পড়েছেন। রাস্তায় কোনো যানবাহন না পেয়ে চিন্তুাযুক্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ভুক্তভোগি যাত্রীরাই তাকে একটা রিকশা ভাড়া করে পাঠিয়ে দেয়। যদিও ততোক্ষণে প্রায় ১০টা বেজে গেছে।
আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে কাঁচপুর ব্রিজের কাছে ঢাকামুখী হাজার হাজার যাত্রীর ভিড় ছিল। ঢাকামুখী দুরপাল্লার বাসগুলোকে কাঁচপুর ব্রিজ পার হতে না দেয়ায় যাত্রীরা পড়েন মহা বিপাকে। যাদের শারিরিক সামর্থ আছে তারা হেঁটেই রওনা করেন। আর মহিলা ও শিশুসহ যাত্রীরা অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন। গাজীপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে উত্তরবঙ্গগামী সব ধরনের যানবাহন চললেও ঢাকাগামী যাত্রীবাহী কোনো পরিবহন চলতে দেয়া হয়নি। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাস গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে ঢাকাগামী যাত্রীরা পরিবহন সংকটে পড়ে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে ভিড় জমায়। এ ব্যাপারে গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের এএসপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা কোনো গাড়িকে বাধা দেননি। পরিবহনের লোকেরাই গাড়ি নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন না। তবে কী কারণে তারা গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে না সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী কোনো বাস গতকাল দুপুরের আগে চলতে দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিরাজদিখানে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ ছিল। সিরাজদিখান উপজেলার কুসুমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সিরাজদিখান পরিবহন এবং বেতকা বাস্ট্যান্ড থেকে এসএস পরিবহনের কোনো বাস ঢাকার উদ্দেশে ছাড়েনি। যাত্রীদের অভিযোগ, সকাল থেকে প্রয়োজনীয় কাজে ঢাকা যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করলেও কোনো গণপরিবহন পাননি তারা। উপায় না পেয়ে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। হঠাৎ করে দুরপাল্লার বাস বন্ধ কেন এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের কাছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, কোনো বাস বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়নি। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মালিকরা রাস্তার গাড়ি কম নামিয়ে থাকতে পারে। তবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বাস বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয় শনিবার রাতেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন