শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সোনালি আসর

বসন্ত এলো রাজার সাজে

প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফ জ লে রা ব্বী দ্বী ন
বছর ঘুরে আবার ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটল বাংলাদেশে। প্রতি বছর বসন্ত তার রুপের ওড়না দোলিয়ে দোলিয়ে সবুজ শ্যামল সুন্দর এই বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখে। শীতকে তাড়িয়ে দিয়ে রাজার সিংহাসনটা দখল করে পুরু দু’মাসের জন্য। শীতের বুড়ি তখন জীবননাশের ভয়ে কুয়াশাকে বুকের ভিতর লুকিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় দূরের কোন দেশে। হিম হিম প্রকৃতিটার তখন বেঁচে থাকার সব সুখ হারিয়ে যায়। এমন সময় ফাগুনের মাতাল হাওয়া অট্টহাসির বান ডেকে চারদিকটাকে আন্দোলিত করতে থাকে সুখের বসনে। প্রকৃতিটাকে আবার নতুন করে বাঁচতে শেখায় সে।
শীতকালে গাছগাছালির সুন্দর পাতাগুলো ঝরে যায় অবলীলায়। কিসের অভিমানে বা কোন শোকে এমন কা- ঘটে তা খুঁজতে গেলে ভাবতে হয়। গাছগাছালির অরণ্যের তলায় ঝরাপাতা ঝরে লেপটে থাকে। পা দুটা ফেলে ফেলে মনের সুখে হাঁটতে তখন কার না মন চায়! পাতার মড়মড় ধ্বনিতে আমরা তখন সেই ছোট্টবেলার হারানো দিনগুলোকে খুঁজে পাই। আহা! কি সুন্দরই ছিল সেই দিনগুলি।
পাতাঝরা সেই শীতের ডালে ফাগুনের যখন হাওয়া এসে লাগে তখন শূন্য ডালে কচি কচি নতুন পাতার আবির্ভাব ঘটে। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে সারাটা ভুবন। কত রঙের যে ফুল ফোটে তখন: লাল ফুল, নীল ফুল, হলুদ ফুল, সাদা ফুল, গোলাপি ফুল, বেগুনি ফুল, কমলা ফুল, আকাশী ফুল আরও যে কত নাম না জানা রঙের ফুল ফোটে চারদিকটাকে মুখরিত করে রাখে সেটা কি আর বলে শেষ করা সম্ভব? ফুলে ফুলে মৌমাছি, ভ্রমরেরা তাক ধিনা ধিন করে নৃত্য করতে থাকে। তখন আর মধুর কোন অভাব থাকে না। এখানে সেখানে মৌমাছিরা প্রচুর পরিমাণ চাক বাঁধে। পলাশ, শিমুল, কৃঞ্চচুড়া আর মান্দারের টকটকে লাল ফুলগুলো যেন আগুনের একেকটি ফুলকি। রুপের আগুনে লাল করে ফেলে সূর্যের কিরণ। শিমুলের ডালে তখন প্রাণ খুলে কুহু কুহু স্বরে গান গাইতে শুরু করে কোকিল। তাইতো রবিন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘আহা! আজি এ বসন্তে/ কত ফুল ফুটে/ কত বাঁশি বাজে/ কত পাখি গায়...।
বাড়ির আঙিনার চিত্রটাকে বদলে দেয় ডালিয়া ফুলসহ আরও হরেক রঙের ফুল। রাতের জ্যোৎ¯œা আলোয় যখন তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলতে থাকে তখন হাজার বছরের কল্পকাহিনীর কল্পরা বুড়া-বুড়ির মুখপটে এসে ভর করে। চারদিকে মৃদু হাওয়ারা কোন থেকে যেন কাঁঠালি চাঁপার মিষ্টি সুগন্ধি এনে নাকের ডগায় সুড়সুড়ি দেয় আর বলে আমায় চিনতে পেরেছ তো! সন্ধামালতির হরেক রঙের ফুল যেন একই ডালে জোনাকির মত আলো ছড়ায়। থোকায় থোকায় দোলনচাঁপা ফুল অম্লান হেসে ডুবে থাকে বসন্তের বিহান, দুপুরে।
বাউলা মন বসন্তের সুর শুনে জেগে উঠে গানে গানে। একতারা হাতে নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে যায় আর প্রাণ খুলে গান গায়- ‘পাগল মন, মন রে, মন কেন এত কথা বলে...!’ বাউলা চুলগুলো তার নদীর জোয়ারের সাথে হাওয়ার দোলায় নাচে। নৌকায় পাল তুলে তখন মাঝিও ভাটিগালি গানের সুর তোলে।
ফসলের মাঠ জমিতে নতুন ধানের চারা বড় হতে থাকে। সবুজ মাঠের বুকে রাখাল যখন হালের গরুকে ঘাস খেতে ছেড়ে দিয়ে তখন গাছের ছায়ায় বসে মনের সুখে সে বাঁশির সুর তোলে। গরুর গায়ের উপর ফিঙে টুপ করে এসে বসে আর রাখালের বাঁশির সেই সুর শুনে প্রাণ জুড়ায়।
ফসলের মাঠে বাতাসের তাড়নে ঢেউ বইতে থাকে। সেই ঢেউ দেখে কবি আর ঠিক থাকতে পারে না। কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে ফসল মাঠের ভিতর দিয়ে হাঁটে আর খাতা খুলে লিখে ফেলে বসন্তের এক মহাকাব্য।
‘বল না তুমি কে গো?
এমন করে কাড়ো সবার মন!
নয়না ফুলেল নব উদ্যানে
রাণীর সাজে তোমার আয়োজন!’
পুকুর, বিল, ঝিলে পদ্ম শাপলায় পূর্ণ হয়ে যায় কানায় কানায়। গাঁয়ের কিশোরীরা ওড়না ভরে পদ্ম তুলে আর মালা গাথে বকুল তলায় বসে। আ¤্রবনে ঝাঁক বাঁধা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ শুঁকে পাগল হয়ে যায় সুপ্রভাতের পাখিরা। রূপ লাবণ্যে ভরা বসন্তের এই মনোরম পরিবেশ আমাদেরকে সামানের পথ দেখিয়ে দেয়। নবদিগন্তে পাখির মত ডানা মেলতে শেখায় আর বলে-‘ঝড় তুফানের অমানিশি ঘোর সামনে আসার আগেও প্রস্তুতি নাও।’ মানুষের মনে সকল প্রকার রিক্ততাকে ঘুঁচে দিয়ে ফুলে ফুলে রঙিন করে তোলে এই বসন্ত। হাজার পাখির কলকাকলি সুর সেই সুরে তাল মেলায় আর রাজাকে সম্বোধন করে সিংহাসনে ঠাঁয় দেয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
abdullah said ২১ মার্চ, ২০১৬, ১০:০৩ এএম says : 0
good writer.....
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন