শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

ক্যাম্পাস আড্ডায় স্বাধীনতা দিবস

প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আসিফ আল আজাদ

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে।’-নির্মলেন্দু গুণ কবি তার ভাষায় স্বাধীনতার বর্ণনা করেছেন এভাবে। জাতি হিসেবে আমরা বাঙালিরা অনেক বেশি আবেগ প্রবণ। আর সেই আবেগটা যদি হয় দেশের স্বাধীনতা নিয়ে তাহলে সেটা কোন পর্যায়ে পৌঁছায় তা আমরা করে দেখিয়েছি। বছর ঘুরে আবার এলো স্বাধীনতার মাস। ২৬ মার্চ, আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। আর এই স্বাধীনতার মাসে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের আবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আড্ডায় এখন আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাধীনতা দিবস। ক্লাস ও পরীক্ষার ফাঁকে ক্যাম্পাস চত্বর কিংবা ক্যান্টিন আড্ডায় বারবার উঠে আসছে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস, পটভূমি এবং আমাদের বিজয় অর্জন। একেকজনের ভাষায় স্বাধীনতার আবেগ এক এক রকম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তমা, সফিক, সাজিদের কথায় স্বাধীনতা মানে পতাকা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি আর মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে নীল আকাশে ছুটে চলা। আর এভাবেই জমে উঠে তাদের আড্ডা। আড্ডা চলতে চলতে সময় বয়ে যায়, প্রসঙ্গক্রমে কথা হয় স্বাধীনতার ৪৫ বছরে আমাদের প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি নিয়ে। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রথী বিশ্বাসের মতে অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তির পাল্লাই বেশি ভারি। স্বাধীনতা অর্জনের এই অল্প কয়েকদিনে আমাদের অর্জন অনেক বেশি।
আমরা ধীরে ধীরে বিশ্বের মানচিত্রে নিজেদের গৌরাবান্বিত একটি জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি নানাভাবে। কিন্তু মিশু দেওয়ান আর রোমানা স্মরণ তর্ক জুড়ে দেন রথীর সঙ্গে। মিশু বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতাকে চেয়েছি কিন্তু পেয়েছি কি না তা নিয়ে আজও আমাদের মনে সংশয়। নিজের ভেতরে প্রশ্ন জাগে, কেননা আজও আমরা নিজের মতো করে আমাদের মাতৃভূমিকে পাইনি। শুধু মাতৃভাষায় কথা বলতে পারাটা কখনোই স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ না।’ আর রোমানা স্মরণ সঙ্গে যোগ করেন, ‘চলমান সহিংসতা, হত্যা আর অপরাধের কথাও।
জবি’র উমির্, তানিয়া, সজল বলেন, স্বাধীনতা আমাদের কোটি প্রাণের চাওয়া ছিল। ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে এ কাক্সিক্ষত চাওয়ার বাস্তবায়ন ঘটেছে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে। আজ আমাদের জন্মভূমি যুদ্ধ অপরাধিদের বিচারের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হয়েছে এটা একটা বড় অর্জন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়মা, জসিম, শিমুল বলেন, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে এই অধরা স্বাধীনতাকে ঘিরে ছিল বাংলার মানুষের নানা স্বপ্ন। এই স্বাধীনতার ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। ৪৫ বছর পর অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা আমাদের স্বপ্নের কতটা পূর্ণতা দিতে পেরেছি। এ নিয়ে নানা মতভেদও তৈরি হতে দেখা যায় নানা জনের মধ্যে।
স্বাধীনতার পর আমরা আসলে কী পেয়েছি আর কী পাইনি এ নিয়ে নতুন প্রজন্মের কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সেদিন ক্লাসের ফাঁকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আলোচনায় মেতেছিলেন সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের একদল তরুণ শিক্ষার্থী।
আইন বিভাগ ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এনায়েত উল্লাহ কৌশিক বলেন, আমাদেরকে স্বাধীনতার মূলনীতিগুলো ধরে রেখে এগোতে হবে। তাহলেই স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল আমরা পাব। আর প্রত্যেকেই যদি নিজের অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি তাহলেই স্বাধীনতার মূল সৌন্দর্যে সাজাতে পারব আমাদের দেশ।
ফামের্সি বিভাগের শিক্ষার্থী সারা বেনজীর জানান, আমি মনে করি আমরা সঠিক জায়গাতেই আছি। স্বাধীনতার পরবর্তী সুবিধাগুলো আমরা ঠিকভাবেই পেতে শুরু করেছি।
ফামের্সি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম উপমা বলেন, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে আমি ছিলাম না। তবে ইতিহাস থেকে যা জেনেছি তার ভিত্তিতে বলতে পারি আমরা তখনকার সময়ের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছি।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী দ্বীপ সাহা জানান, আসলে স্বাধীনতার পর আমরা কিছুই পাইনি এই কথার পক্ষে আমি নই। সব কিছুর মধ্যেই কিছু না কিছু অসঙ্গতি থাকবে। পৃথিবীর কোনো কিছুই শতভাগ সফল হয় না। আর আমাদের স্বাধীনতা তো একটা বিশাল ব্যাপার। আমি মনে করি আমরা উন্নতির পথে এগোচ্ছি।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বিলকিস আক্তার ঐশ্বি বলেন, আমরা যখন দেখি আমাদের ছাত্রদের অধ্যয়নের সঠিক পরিবেশ পাচ্ছে না, তখন আমি কিছুতেই ভাবতে পারি না আমরা কী সত্যিকারের স্বাধীনতা পেয়েছি?
একই বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা দিলশাদ মৌ জানান, আফসোস! নামে আমরা স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার সুফল আমরা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি।
ফিজিওথেরাপী বিভাগের শিক্ষার্থী কায়েস আহমেদ জীবন বলেন, মার্চের দিনগুলোতে আমাদের অনেক অর্জন আছে, তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু’র ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণার পর লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ দেশ। স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। তাই স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার জানান, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেছি আমরা। তারপরও হয়তো সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পেতে আমাদের আরও অনেকদিনের প্রয়োজন হবে।
তবে যে যাই বলুক না কেন সবার প্রত্যাশার জায়গা একটাই। একটি সোনার বাংলাদেশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন