শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে : কাউমী আলীয়া বলতে কোনো কথা নেই, দেশের সকল আলেম-ওলামা ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামের দাওয়াতী কাজ করলে অচিরেই বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদের সুযোগ নিয়ে ইসলামবিদ্বেষীরা দেশ-জাতি ও ইসলামের ক্ষতি করতে পারে। আলেম-ওলামাদের পরস্পরের মধ্যে মতপার্থক্য কমিয়ে এক কাতারে শামিল হতে হবে। এতে করে মুসলমানদের ঐক্য সুদৃঢ় হবে। ওয়াজ মাহফিল, দোয়া মাহফিল ও খুতবায় নসিহতের মাধ্যমে দেশে ইসলামী ঐক্য সুদৃঢ় করার কাজ আলেম-ওলামা ও পীর মশায়েখদের এগিয়ে নিতে হবে। কক্সবাজারে আলেম-ওলামাদের এক মতবিনিময় সভা ও দোয়া মাহফিলে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সাথে আলেম-ওলামাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কথিত জঙ্গিবাদের সাথে ইসলামেরও কোনো সম্পর্ক নেই। আলেম-ওলামারা শান্তিপ্রিয়। কউমী আলীয়া সব মাদরাসা থেকে দেশপ্রেমিক, ইসলামপ্রিয়, আল্লাহ ও রসুলপ্রেমিক নাগরিক তৈরি হচ্ছে। অহেতুক আলেম-ওলামা ও মাদরাসাগুলোকে জঙ্গিবাদের অপবাদ দেয়া ঠিক নয়। আলেম-ওলামাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির জন্য ইসলামবিদ্বেষীরা বসে নেই। মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ বাধানোর জন্য আগে আলেম সমাজের মধ্যেই বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে বিভেদের কারণে ওসমানী খেলাফতের পতন হয়েছিল। জনাব বাহাউদ্দীন প্রশ্ন রেখে বলেন, সৌদি সামরিক জোট এত দেরিতে কেন? প্রথম যখন ইরাকে আগ্রাসী হামলা হলো তখন এই জোট করা হলে মধ্যপ্রাচ্যে আজকের এই অবস্থা হতো না।
বাংলাদেশেও সেই অপচেষ্টা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সকল মতপাথর্ক্য ভুলে আলেম-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তখন বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের মাধ্যমে আলেম-ওলামারা সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে চলেছেন। আলেম-ওলামারা শান্ত, তাদের নিয়ে সরকারের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ওয়াজ, নসিহত ও জুমার খুতবা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুভ হবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদিন এক মিনিটের ভূমিকম্প সকলের মাঝে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করেছে। এটি অবশ্যই মহান আল্লাহ তায়ালার সতর্ক বার্তা ছাড়া আর কিছু নয়। বিশ্বকাপের জন্য ঢাকার ফতুল্লায় মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া নজিরবিহীন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, দেশে যারা ইসলামী রাজনীতি করেছেন তারা ক্ষমতা ও সম্পদের জন্য অনেক কিছুর সাথে আপস করে ইসলাম ও ইসলামী জনতার প্রচুর ক্ষতি করেছেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক আল্লামা ওবায়দুর রহমান খান নদবী বলেন, রাজনীতি আলেম-ওলামাদের মূল কাজ নয়। আলেম-ওলামাদের মূল কাজ হচ্ছে দাওয়াতে দ্বীন। এদেশে ইসলাম এসেছে এবং ইসলামের প্রসার ঘটেছে আলেম-ওলামা ও পীর মশায়েখদের দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে। যুগ যুগ ধরে ওয়াজ মাহফিল, দোয়া মাহফিল, জিকির মাহফিল ও জুমার খুতবার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে আলেম-ওলামাদের ঐতিহ্য রয়েছে। কথিত জঙ্গিবাদের অপবাদে আলেম সমাজের ওয়াজ মাহফিল ও জুমার নসিহত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মুসল্লিরাও মসজিদে নামাজ আদায় করতে ভয় পাচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশে তো এমন হওয়ার কথা নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মচর্চা, পরমতসহিষ্ণুতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। কিন্তু ইসলামবিদ্বেষী কিছু এনজিও আলেম-ওলামা ও মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির কাজ করে যাচ্ছে। দেশের মসজিদ-মাদরাসা, খানাকাহগুলোতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কাজ হয় না। আলীয়া ও কাউমী নেসাবের আলেম-ওলামারা ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ইসলামী জাগরণের কাজ করে যাচ্ছেন। এর সাথে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। দেশে ইসলামী জাগরণের পৃষ্ঠপোষকতায় দৈনিক ইনকিলাবের ভূমিকা অনন্য। দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী মরহুম মাওলানা আব্দুল মান্নান ছিলেন উপমহাদেশের একজন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম। ইনকিলাবের বর্তমান সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন একজন দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও প্রভাবশালী ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি আলীয়া নেসাবের মাদরাসা শিক্ষকদের অরাজনৈতিক সংগঠন ‘জমিয়াতুল মোদার্রেছীন’-এর নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি কাউমী নেসাবের ওলামাদেরও একই কাতারে শামিল করে ইসলামী শক্তি বৃদ্ধির প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কাউমী ওলামাদের পরস্পর মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দাওয়াতী কাজে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
জনাব নদবী বলেন, উপমহাদেশে এখন মুসলমানদের সংখ্য ৮০ কোটিরও বেশি। জাতীয় নির্বাচনসহ অনেক ক্ষেত্রে দেশের আলেম-ওলামারা এখনো ডিসাইডিং ফেক্টর বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা দাওয়াতী কাজ জোরদার করতে পারলে আমরাই বিজয়ী হব ইনশা-আল্লাহ।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ আলেমে দ্বীন মাওলানা মসরুর। মতবিনিময়কালে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা মুহসিন শরীফ বলেন, দেশের আলেম-ওলামারা আজ যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন। দৈনিক ইনকিলাব দেশের আলেম-ওলামা ও মুসলমানদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল হক (পীর সাহেব) বলেন, দৈনিক ইনকিলাব ইসলাম ও স্বাধীনতার কণ্ঠস্বর। মাওলানা নূরুল আলম আলমামুন বলেন, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে এখন ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মাওলানা ইয়াছিন হাবিব বলেন, কক্সাবজারে পর্যটনের প্রসারের পাশাপাশি অশ্লীলতারও প্রসার ঘটেছে। সম্মিলিতভাবে দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে এখানকার ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। মাওলানা মীর কামাল বলেন, দেশ-জাতি ও ইসলামে পক্ষে দৈনিক ইনকিলাবের অবস্থান অনন্য।
আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা নুরুল কবির হিলালী, মুতামিম মাওলানা মুহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট মাওলানা শায়খুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস ছালাম কুদসী, মাওলানা নেছার আহমদ, মাওলানা আবু মুছা, মাওলানা এহতিশামুল হক, মাওলানা হাফেজ মুবিনুল হক, মাওলানা এরশাদুল্লাহ, মাওলানা মঞ্জুরে ইলাহী, মাওলানা ছাবের আহমদ, মাওলানা মোহাম্দ ইউনুচ ফরাজী, মাওলানা হুমায়ুন কবির, মাওলানা আব্দুল কালাম, মাওলানা নুরুল হক চকোরী, এরশাদ আরমান প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন