বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভারের নিচে মাদকের আড্ডা

রাজধানীবাসীর বিড়ম্বনা-১

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীবাসীর বিড়ম্বনা পিছু ছাড়ছে না। নগরীর যানজট নিরসন এবং নগরবাসীকে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা কাজে আসছে না যথাযথ দেখভালের অভাবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন ফ্লাইওভারে নিচে, ফুটপাত, সড়ক এবং বিভিন্ন এলাকার সরকারী খালি জায়গা জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে পদে পদে নানা বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে। ফুটপাত বেদখলের কারণে পথচারীরা চলাচল করতে পারে না স্বাচ্ছেন্দ্যে। ফ্লাইওভারগুলোর নিচে রয়েছে অপরাধীদের আস্থানা। ফুটওভার ব্রিজগুলোও ব্যবহারের অযোগ্য। রয়েছে যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং। নগরীর খালি জায়গা-জমিতে ভাসমান দোকানপাটের পাশাপাশি বসছে মাদক কেনা বেচার জমজমাট হাট। রাজউক, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি করপোরেশন, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থার সরকারী জমি দখল করে শুধু দোকানপাটেই বসানো হয়নি, কাঁচাবাজার, রিকশা গ্যারেজ, অবৈধ কারপার্কিং, মিনি পতিতালয় এবং হোটেল রেস্তোরাঁও স্থাপন করা হয়েছে। বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ফুটপাথ, ফুটওভার ব্রিজ ও ব্যস্ততম সড়কও রেহায় পায়নি দখলদারদের হাত থেকে। বিমানবন্দর এলাকায় রাস্তার উভয়পাশে বসছে শতশত অবৈধ দোকানপাট। ফলে শুধু যানবাহন চলাচলেই বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে না সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটেও চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনই নানা দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। যানজট নিরসনের জন্য নগরীতে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে ফ্লাইওভারের নিচের সকল খালি জায়গাগুলো মাদক ও হেরোইনসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দিনেরাতে সেখানে ভাসমান অপরাধীরা ঘুরে বেড়াছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারে নিচু এলাকায় মাদক সেবনকারীদের দখলে। দিনেরাতে চলে তাদের জমজমাট আড্ডা। কোন ধরনের রাখঢাক নয় প্রকাশ্যেই চলছে মাদক সেবন। পুলিশ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে ওই ফ্লাইওভারের নিচে পুলিশের টহল গাড়ি দেখা গেছে। পুলিশের টহল দলের সামনেই রেললাইনের পাশে চলছে মাদকসেবীদের মাদক সেবন, অনৈতিক কর্মকান্ড। দেখা গেছে, দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ফ্লাইওভারের নিচে চায়ের দোকানে বসে দুইজন পুলিশ সদস্য চা পান করছেন। ওই দোকানে পাশেই রেললাইনের নিকট দাঁড়িয়ে ২০/২২ বছর বয়সী দুই তরুণীর সঙ্গে অপর এক পুলিশ সদস্য খোশ গল্পে মশগুল। দোকানীর সাথে কথা বলে জানা যায় ওরা ভাসমান পতিতা। মাদক বিক্রেতা সুমন, মামুন, শাহীন ও কালামের সাথে ওদের রয়েছে সুসম্পর্ক। পুলিশসহ সকল ঝামেলা ওরাই নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন বিকাল থেকেই মাদকসেবীরা ভিড় করেন। তবে রাত যত বাড়ে আড্ডাও ততোই জমজমাট হয়। ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক কেনা বেচার হাট বসেছে ওই ফ্লাইওভারে নিচে। সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য যেখানে বিভন্ন বৃক্ষরোপণ ও বাগান করার কথা সেখানে এখন মাদকের হাট। শুধু তাই নয়, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত ভাসমান অপরাধীরাও সেখানে আড্ডা জমায়। বিশেষ করে রাতের বেলা অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। গত কয়েক দিন সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের ফ্লাইওভারের নিচে।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার। ফ্লাইওভারের নিচে রেললাইনের পাশে বসে ৭ থেকে ৮ জন যুবক মাদক সেবন করছিলেন। এমন সময় সেখানে এস থামল পুলিশের একটি টহল গাড়ি। গাড়ি থেকে দুইজন পুলিশ সদস্য নেমে তাদের কাছে গেলেন। সাথে সাথে প্রায় ৪০ বছর বয়সী একব্যক্তি পাশের একটি চায়ের দোকান থেকে পুলিশের কাছে গিয়ে উপস্থিত। তার সাথে মাত্র দুই তিন মিনিট কথা বলেই দুই পুলিশ সদস্য চলে গেলেন তাদের গাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের গাড়িটি দক্ষিণ দিকে যমুনা ফিচারপার্কের দিকে চলে যায়। কাছে গিয়ে ওই ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেল তার নাম মামুন মিয়া। নাম বলতে না বলতেই মামুনের সহকারী রাজু নামের এক যুবক এসে জানতে চাইলেন কি লাগবে। রাজুর প্রশ্ন, “শুকনা না তরল”? তাকে থামিয়ে দিয়ে মামুন মিয়া চা-সিগারেটের আমন্ত্রণ জানালেন। পাশের ছোট দোকানটিতে বসে চা খেতে খেতে প্রায় এক ঘন্টা কথা হয় মামুনের সাথে।
মামুন জানায়, তিন থানার টহল পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের লাইনম্যানদের ম্যানেজ করেই এখানে ২০/২৫ টি ছোট দোকান বসে। এজন্য পুলিশকে এবং স্থানীয় যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের কর্মী কালাম, শাহিন, ইমন এবং শ্রমিকলীগের নেতা জাহাঙ্গির আলমকে নিয়মিত টাকা দিতে হয়।
তিনি আরো জানান, কিছু ভাসমান মাদক বিক্রেতা আছে। তারা স্থানীয় নেতা কর্মীদের ম্যানেজ করে মাদক কেনা বেচার পাশাপাশি ভাসমান পতিতাও সেখানে রাখে। তবে এর বেশি কিছু বলতে রাজি নন তিনি।
মামুন জানান, জোয়ারসাহারা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড এবং ফ্লাইওভারে উভয় পাশে শুধু মাদকের হাটেই বসে না। ভাসমান পতিতারাও সেখানে আসর জমায়।
বিমানবন্দর সড়ক থেকে ওই ফ্লাইওভার হয়ে যমুনা পার্কের দিকে যেতে ফ্লাইওভারের নিচেই বসানো হয়েছে দুইটি অস্থায়ী কারপার্কিং। সেখানে দিনে রাতে রেন্টেকারের অর্ধশতাধিক গাড়ি ও ট্যাক্সি ক্যাব রাখা হয়। এতে করে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হলেও ট্রাফিক পুলিশ রহস্যজনক কারণে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভাটেরা থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। মাদকসেবনকারী বা বিক্রেতা যারা থাকে না কেন আমি আজই ব্যবস্থা নিচ্ছি। রাতের বেলা ফ্লইওভারের নিচে কিছু চা ও পান সিগারেট বিক্রেতা থাকে বলে শুনেছি।
ওসি আরো বলেন, রেললাইনের উত্তর পাশের জায়গাটি আমাদের থানা এলাকায় নয়, সেটি খিলক্ষেত থানার অধীনে।
গত রবিবার দুপুর ১টার দিকে ফ্লাই ওভারের নিচে গিয়ে দেখা যায় কয়েকটি হলুদ ট্যাক্সি ক্যাবের কিছুটা আড়ালে দুই ভাসমান পতিতা নিয়ে দুই যুবক আপত্তিকর অবস্থায় বসে আছেন। কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে পাশ থেকে নিষেধ করেন এক যুবক। তারা সাথে কথা বলে জানা যায়, শাহীন ও মামুন নামের দুই স্থানীয় সরকার দলীয় কর্মী এদের সহযোগিতা করে। বিনিময়ে ঘন্টা হিসাবে তাদের ৫ শত টাকা পরিশোধ করতে হয়। এধরনের অপ্রীতিকর ও অনৈতিক কর্মকান্ড প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
স্থানীয পান দোকানদার শহীদুল জানান, ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা যাদের নিয়ন্ত্রণে তারা প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ টাকা পায় মাদক বিক্রেতা, সেবনকারী, পতিতাদের দালাল, রেন্টেকার মালিক ও ট্যাক্সি ক্যাব চালক ও ভাসমান দোকানপাট থেকে। শহীদের কথায় সায় দিয়ে আজাদ নামের এক চা বিক্রেতা জানান, ওই টাকার একটি অংশ প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির পকেটেও যায়।
জানতে চাইলে, গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহম্মদ বলেন, ভাসমান মাদক বিক্রেতাদের আটক করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তবে পুলিশ প্রায়ই ওই এলাকায় অভিযান চালায়। তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন