শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

অটিজম প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অটিজম আক্রান্তদের প্রতি অযতœ অবহেলা না করে সাধারণ নাগরিকদের মত জীবন যাপনে সুযোগ করে দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের অনেকের ধারনা, অটিজম একটি বংশগত রোগ। এটা সম্পূর্ণভাবে ঠিক নয়। সম্পূর্ণ সুস্থ বাবা মায়েরও অটিস্টিক শিশু হতে পারে। আবার অনেকের ধারনা সঠিক পরিচর্যার অভাবে শিশু অটিস্টিক হতে পারে। এটাও কিন্তু ঠিক নয়। অটিস্টিক শিশুকে অনেকে বাবা মায়ের অভিশাপ বলে থাকেন, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন। অনেক শিশু জন্ম ও স্বভাবগতভাবেই একটু বেশি অস্থির, চঞ্চল, রাগী অথবা জেদি প্রকৃতির হতে পারে। এতেই কিন্তু বোঝা যায় না যে শিশুটি অটিস্টিক। আমাদের সমাজের নানান ভুল ধারনা ও কুসংস্কারের ফলে অনেক শিশুর ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে, যা শিশুর জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কোনও শিশু অটিজমে আক্রান্ত মনে হলে অনতিবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় অটিজম নির্ণয় করতে পারলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করলে অটিজমের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়াগুলো অনেক সফলভাবে মোকাবেলা করা যায়। শিশুর কি ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে সেটা সঠিকভাবে নির্ণয় করে, নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।
অটিজমের বিষয়টি যত দ্রæত নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভাল। অটিস্টিক শিশু হয়তো অন্য সকল সাধারণ শিশুর মতো সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক আচরণ করতে পারবে না। কিন্তু, সাইকোথেরাপি বা স্পেশাল শিক্ষাদানের মাধ্যমে এসব শিশুকে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ পর্যন্ত সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এই ধরনের শিশুদের জন্য প্রচুর বিশেষায়িত স্কুল আছে, সেখানে তাদের জন্য বিশেষভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা আছে। এ ধরনের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি পরামর্শ দেবেন, কোন ধরনের স্কুলে আপনার শিশুকে ভর্তি করতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে এগোলে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই উন্নতি করে। এমনকি অনেক শিশু সাধারণ স্কুলে যাওয়ার মতোও হয়ে ওঠতে পারে। অনেক অটিস্টিক শিশুর কিছু মানসিক সমস্যা যেমন- অতিরিক্ত চঞ্চলতা, অতিরিক্ত ভীতি, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের সমস্যা ইত্যাদি থাকতে পারে। অনেক সময় এরকম ক্ষেত্রে, চিকিৎসক শিশুটিকে ঔষধও দিতে পারেন। নিবিড় ব্যবহারিক পরিচর্যা, স্কুল ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, সঠিক স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রয়োজনে সঠিক ওষুধের ব্যবহার একটি শিশুর অটিজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে আনতে অনেকখানি সহায়ক হয়। যথাযথ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া অটিজম আক্রান্ত শিশুদেরকে বাসায় আবদ্ধ না রেখে চিন্তা চেতনা বৃদ্ধির জন্য পার্কে কিংবা কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। তাদের বিনোদনের সুযোগ করে দিতে হয়। এমনকি অন্যান্য শিশুদের সাথে মিলেমেশার সুযোগ করার ক্ষেত্রে অন্যান্য অবিভাবকদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে।
অটিজমের যেহেতু কোনও নিরাময় নেই, তাই সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এটি প্রতিরোধ করতে হবে। পরিবারে কারো অটিজম অথবা কোন মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজমের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত গর্ভধারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা না করা, পর্যাপ্ত ঘুম, শিশুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- বেশি বয়সে বাচ্চা না নেওয়া। বাচ্চা নেয়ার আগে মাকে রুবেলা ভেকসিন নেয়া। গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ না খাওয়া । মায়ের ধূমপান, মদ্যপানের মত কোন অভ্যাস থাকলে বাচ্চা নেয়ার আগে অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া। বেশী বেশী পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। সন্তান জন্মের পর থেকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
আসুন নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করে অটিজম প্রতিরোধ করি। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা আমাদের কিংবা সমাজের বোঝা নয়। এদের প্রতিভাগুলি বিকাশ করার লক্ষ্যে তাদের পাশে দাড়াই।

ষ মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন
সংগঠক ও সমাজকর্মী ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন