মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে নৌ-পথ চোরাচালানিদের স্বর্গরাজ্য

১৮ কোটি টাকার ভারতীয় চোরাচালান পণ্য আটক

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭

সড়ক পথের পাশাপাশি নৌ পথ এখন চোরাচালানীদের স্বর্গরাজ্য। সুন্দরবনের নদী নালা ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য ঢুকছে বানের পানির মত। শীত মৌসুমে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ভারতীয় পণ্য চোরাচালান প্রতিবছর বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ গত পরশু কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে সুন্দরবনের কটকা থেকে প্রায় ১৮ কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় চোরাচালানি পণ্য আটক করেছে। অভিযানের পর অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না চোরাচালানীদের কর্মকান্ড। চিহ্নিত চোরাকারবারীরা এখন ফুলেফেপে কোটিপতি। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চিহ্নিত সীমান্ত ঘাটগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত চোরাচালান হচ্ছে। এই পথ দিয়ে আসছে মশলা মাদক দ্রব্য আর শাড়ী কাপড় এবং শীতবস্ত্র। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বিপনী বিতানগুলোতে শীতবস্ত্র সহ ভারতীয় পণ্যে ছয়লাব।
আর মশলার মার্কেটে প্রতিদিন ঢুকছে বিনা শুল্কে চোরাই পথে আনা জিরা, গরম মশলা, আদা, রসুন এবং যুব সমাজের হাতে পৌছে যাচ্ছে ফেনসিডিল আর ইয়াবা। চোরাকারীরা চকলেট সামগ্রী, চিপস, হরলিক্স আর কসমেটিক্স আনছে হরহামেশা। সূত্রমতে, গত পরশু কটকায় অভিযান চালিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা প্রায় ১৮ কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় শাড়ি, লেহেঙ্গা ও শাল চাদর উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড সদস্যরা। পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, গত বুধবার ভোর ৪টার দিকে বাগেরহাট শরণখোলা উপজেলার কটকা এলাকায় কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের একটি টহল টিম শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে আসা ভারতীয় মালামালসহ একটি কাঠের বোট ও ৮টি সিলিন্ডার বোট আটক করে। এসময় বোটে থাকা চোরাকারবারীরা গোপনে পালিয়ে যায়। এরপর বোটে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ১৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বিলাসবহুল ২১ হাজার ১৬৬টি শাড়ি, ২শ’ ২টি লেহেঙ্গা ড্রেস ও ৭শ’ ৭৭টি ভারতীয় শাল চাদর উদ্ধার করে। তিনি আরও জানান, জব্দকৃত ভারতীয় মালামাল পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খুলনা কাস্টমসে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জননিরাপত্তার পাশাপাশি চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে কোস্ট গার্ডের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে মাদকদ্রব্য চোরাচালানিরা কোন অবস্থায় কখনই থেমে নেই। গত কয়েক মাস ধরে বৃহত্তর খুলনাঞ্চল ও সীমান্ত অঞ্চলে র‌্যাব কোষ্টগার্ড, গোয়েন্দা পুলিশ ও বিডিআর চোরাচালানী পণ্য উদ্ধার করলেও শাড়ী কাপড় মশলা ও মাদক চোরাচালান কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা। কোন না কোন পথে প্রতিনিয়ত চোরাচালান অব্যাহত রয়েছে। প্রায়ই ধরা পড়ছে। তবুও অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট চক্রটি। চোরাকারবারীরা প্রতি মুহুর্তে রুট বদলাচ্ছে । কিন্তু গোয়েন্দা নজরদারী এড়াতে পারেনা। তিন কোটি কখনও সাত কোটি টাকার মাল ধরা পড়ার পরেও চোরাকারবারীরা বেপরোয়া। সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত খুলনাঞ্চলে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিচ ও কাপড় চোপড় এবং গরম মসলা সহ বিভিন্ন মালামাল আসছে। নগরীর বিপনী বিতানগুলোতে ভারতীয় শাড়ি কাপড় আর শীতবস্ত্রে সয়লাব। তাদের গোডাউনে রয়েছে লাখ লাখ টাকার মালামাল। অপরদিকে চোরাকারবারীরা ফুলেফেপে কোটিপতি হচ্ছে। আর যুব সমাজ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মাদকের কারণেই বৃহত্তর খুলনার অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চারিদিকে খুন রাহাজানি চাঁদাবাজি সংঘাত চরম আকার ধারন করেছে।
সূত্রমতে, সা¤প্রতিককালে খুলনাসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় অবৈধ ভারতীয় কাপড়ের চোরাচালানী বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকাসমূহে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন কর্তৃক টহল জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা জানান, একটি চক্র অবৈধ ভারতীয় পন্য চোরাচালানী করে আসছে। চোরাচালানী বন্ধে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়।
সূত্রটি জানায়, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে খুলনা ও সীমান্ত অঞ্চলের চোরাচালান সিন্ডিকেট প্রতিনিয়ত শাড়ি কাপড় ও মাদকদ্রব্য চোরাচালান করছে। জানা গেছে, পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে এই বাণিজ্য। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে একটি চক্র একের পর এক কালোবাজারী করলেও কেন তাদের আইনে সোপার্দ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাচ্ছে না তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। বর্তমান সরকার চোরাচালান রোধে অত্যান্ত আন্তরিক। অথচ ফাঁক ফোকর দিয়ে প্রতিনিয়ত খুলনাঞ্চলে চোরাচালান চলছে। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য বেমালুম চেপে যাচ্ছে। বøাকিং রুট ওপেন করে দিচ্ছে।
এদিকে, রাজধানী ভিত্তিক চোরাচালানের ল্যান্ডিক্যটাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় সাতক্ষীরা খুলনা ও বাগেরহাটকে। এখানকার তালিকাভুক্ত চোরাচালানীরা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এরা যেন সব ক্ষমতাসীনদের আশির্বাদপুষ্ট। আর অসাধু কর্মকর্তাদের আস্থাভাজন। তাই এদের যেন রুখা দায়। সুন্দরবনের দস্যু বাহিনীরাও এই চোরাচালানীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন