বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুর্ভোগের নাম বাড্ডা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাস্তার ওপরে ফেলে রাখা হয়েছে বড় বড় পাইপ : যত্রতত্র পার্কিং বাসস্ট্যান্ড ফুটপাথ দখল : ফ্লাইওভারের সুবিধা মিলছে না


দুর্ভোগের নাম বাড্ডা। কুড়িল থেকে নতুন বাজার হয়ে একটু সামনে এলেই খোঁড়াখুড়ির ধকল। রাস্তার উপর রাখা হয়েছে বড় বড় ড্রেনেজের পাইপ। কোথাও কোথাও রাস্তার এক পাশ গর্ত করে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে করে ব্যস্ত প্রগতি সরণিতে চলতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সব ধরনের যানবাহন। সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের। সেই ভয়াবহতা এসে ঠেকছে মালিবাগ-মগবজার ফ্লাইওভার পর্যন্ত। মতিঝিল থেকে কাকরাইল হয়ে ফ্লাইওভারে উঠতে গেলে যানজট। কুড়িল থেকে রামপুরা হয়ে ফ্লাইওভারে উঠতে গেলে একই চিত্র। পথিমধ্যে বাড্ডার যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নগরবাসীরর কাছে এ যানজট সীমাহীন দুর্ভোগের। শুধু খোঁড়াখুঁড়ির কারনে নয়, এর পেছনে আরও অনেক কারন চোখে পড়েছে গতকাল সরেজমিনে রাস্তাটি পরিদর্শনে। যেখানে- সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, রিকশার আধিক্য, অবৈধ পার্কিং, ভাঙাচোরা রাস্তা, রাস্তা বন্ধ করে নির্মাণকাজ, রাস্তার উপর ময়লার খোলা কনটেইনার ও বিশালাকার বাসের ইউ টার্নের কারণে রামপুরা সেতু থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত দিন-রাত যানজট লেগে থাকে। এতে করে এই রাস্তায় চলাচলকারী পথচারী ও যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একই সাথে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উত্তর বাড্ডা, দক্ষিণ বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, গোপিপাড়া এলাকার বাসিন্দাদেরও নাভিশ্বাস অবস্থা। ভুক্তভোগিদের মতে, এ যানজটের কারনে মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারের কোনো সুবিধাই পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মধ্য বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা ও নতুন বাজার এলাকার রাস্তার বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নকাজ চলছে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নতুন বাজার থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে এক সাথে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। ওয়াসার ড্রেনেজের কাজ চলছে। ওয়াসার বড় বড় ড্রেনেজের পাইপ রাখা হয়েছে রাস্তার উপরেই। এলোপাথারীভাবে রাখা পাইপগুলোর কারনে যানবাহন চলাচলে বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। এক সারিতে চলছে যানবাহন। এর মধ্যে আবার যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং করা গাড়ির ভিড়ে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মজনু বেপারী বলেন, একদিকে রাস্তার উপর কাজ চলছে অন্যদিকে রিকশা, ভ্যান, লেগুনা, পিকআপ, প্রাইভেটকার পার্ক করে রাস্তা দখল করে রেখেছে। এতে করে রাস্তায় ভালোভাবে গাড়ি চলাচল করতে পারে না। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। তিনি বলেন, ওয়াসা কাজ শুরু করেছে ভালো কথা। কিন্তু তারা কোনো ঘোষণাও দেয়নি। বিকল্প কোনো পথেরও ব্যবস্থা করেনি। মানুষ না জেনে ফ্লাইওভারে ওঠার আশায় এই রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকছে।
শুধু তাই নয়, রামপুরা থেকে বাড্ডা হয়ে কুড়িল পর্যন্ত রাস্তায় বাস চলাচলের জন্য কোনো আইন মানা হয় না। এই রুটে চলাচলকারী সবগুলো বাস যাত্রীদের ইচ্ছানুযায়ী দাঁড়ায়, যাত্রী ওঠানামা করায়। অন্যদিকে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনা রাস্তার ওপরে যাত্রী উঠানো-নামানো করে থাকে। এতেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভুক্তভোগি একজন যাত্রী বলেন, এ পথে চলতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকতে হয় শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের মানুষকে। মধ্য বাড্ডা এলাকার ব্যবসায়ী মানিক বলেন, রাত ৮টার আগে রাস্তায় ট্রাক চলাচল নিষেধ। কিন্তু রাত-দিন সব সময়ই ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায় এ রাস্তায়। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই। আলাপকালে আরও কয়েকজন ভুক্তভোগি জানান, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কাজের অজুহাতে রাস্তার বেশিরভাগ অংশ বন্ধ রাখলে গাড়ি চলবে কিভাবে? আমরা চেষ্টা করি যানজট যাতে দীর্ঘস্থায়ী না হয়। কিন্তু গাড়ি চলতে না পারলে সেই চেষ্টায় ফল মেলে না।
রামপুরা এলাকার বাসিন্দা আরজু মিয়া বলেন, শুধু খোঁড়াখুঁড়ির দোষ দিয়ে কি হবে। রাস্তার অর্ধেকটাই তো হকাররা দখল করে রেখেছে। এখানে নির্বিঘেœ যানবাহন চলবে কি করে। তিনি বলেন, উত্তর বাড্ডা থেকে শুরু করে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত মূল রাস্তার দুই পাশ দিয়েই সারি সারি অবৈধ দোকান। ফুটপাতের পুরোটাই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দখলে। ফুটপাত দিয়ে চলাচলের কোনো উপায় নাই। এতে পথচারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পথচারীদের অনেকেই মেইন রোডের পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এতো কিছুর পরেও এসব নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এ কোন রাজধানীতে বাস করছি আমরা?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
ইয়াসমিন ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১০ এএম says : 0
এগুলো দেখার কী কেউ নেই
Total Reply(0)
Salim Ahmed ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১১:৩০ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ ।
Total Reply(0)
Jafor Amin ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১১:৩১ এএম says : 0
100% সত্য
Total Reply(0)
Shawkat Ali ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১১:৩২ এএম says : 0
এই জঘন্য অবস্থার কারন সম্পর্কে এলাকাবাসীর কি কোন আত্মসমালোচনা বা আত্মউপলবধি আছে? যদি না থাকে তবে যা যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে। আতমউপলবধিহীন ........দের জীবন এরকমই হয়।
Total Reply(1)
Ashraf ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:৩২ পিএম says : 4
Thanks

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন