মহাকবি আল্লামা ইকবালের মতে, মানুষের খুদি বা রূহকে উন্নত করার প্রচেষ্টার নামই হলো শিক্ষা। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলির উন্নতি বা বিকাশ সাধনই হলো শিক্ষা। সক্রেটিস এবং তার শিষ্য প্লেটোর মতে, নিজেকে জানার নামই হলো শিক্ষা। সক্রেটিস অন্য ভাষায় বলেছেন, মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের আবিষ্কার। প্লেটো আবার বলেছেন, শরীর ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নতির জন্য যা কিছুই প্রয়োজন তা সবই শিক্ষার উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত। এরিস্টটলের মতে, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় অনুশাসনের অনুমোদিত পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সুখ লাভ করা। শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ ব্যাঞ্জনা ফুটে উঠেছে প্যারাডাইস লস্টের বিখ্যাত কবি মিল্টনের বক্তব্যে। তার ভাষায়, Education is the harmonious development of body, mind and soul. অর্থাৎ শিক্ষা হচ্ছে দেহ, মন এবং আত্মার সমন্বিত উন্নয়নের নাম।
শিক্ষার প্রকারভেদ: ব্যাপক অর্থে শিক্ষাকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করতে পারি। Informal Education- অপ্রত্যক্ষ শিক্ষা এবং Formal Education- প্রত্যক্ষ শিক্ষা। প্রত্যক্ষ শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও এর প্রতিষ্ঠা। অবশ্যই বর্তমানে প্রত্যক্ষ শিক্ষাদানের জন্য বিদ্যালয় ছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠানও স্থাপিত হচ্ছে। শিক্ষাবিদগণ শিক্ষার্জনের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাকে ৩টি ধারায় বিভক্ত করেছেন- ১. অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, ২. উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, ৩. আনুষ্ঠানিক শিক্ষা।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা: শিক্ষার প্রথম ধারা হলো অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, এর মাধ্যমে শিক্ষার সূত্রপাত হয়। এই প্রক্রিয়া জীবনব্যাপী অব্যাহত থাকে। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে দেখে, শুনে, কাজ করে, অনুসরণ করে, চেষ্টা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও নিজ নিজ পরিবেশের প্রভাবে যে শিক্ষা লাভ করা হয় তাকেই অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা বলা হয়। কামার, কুমার, তাঁতি, ছুতার, স্বর্ণকার, জেলে, ধোপা, নাপিত, গোয়ালা ও মুচি ইত্যাদি পেশায় নিযোজিত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা অনানুষ্ঠানিকভাবে স্ব স্ব পেশায় শিক্ষা প্রাপ্ত হয়।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: মানবসমাজের জ্ঞান ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ, ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মধ্যেও তা বিতরণ ও উৎকর্ষ সাধন এবং সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি বা বিশেষজ্ঞ সরবরাহের জন্য অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে স্কুল কলেজের মাধ্যমে যে শিক্ষা কর্মসূচি উদ্ভাসিত হয় এবং প্রবর্তিত হয়েছে সেটাকেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বলে নামকরণ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির সাথে জনগণের জ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারিত হয়, সেই সঙ্গে আর্থসামাজিক কর্মকান্ডেরও প্রসার ঘটে।
ইসলামী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: ইসলামী শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করে, ইসলামের সুমহান আদর্শের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া, নিজেদের জীবনে তা প্রতিফলিত করা ও সমাজে সৎ দক্ষ লোক তৈরি করা। যারা আল্লাহর ভয় হৃদয়ে লালন করবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না, ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠন করবে, খেয়ানতদার হবে না, মানুষের অধিকার মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে মরণপণ চেষ্টা করবে।
ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব: মহাগ্রন্থ আল কুরআনকে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য লাওহে মাহফুজ থেকে আল্লাহ তায়ালা নাজিল করেছেন। যার রয়েছে ৬২৩৬টি আয়াত। তার মধ্য থেকে সর্বপ্রথম নাজিল করার জন্য যে পাঁচটি আয়াত নির্বাচন করেন, তা হলো, ‘পড়! তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবাঁধা রক্ত থেকে। পড়! তোমার পালনকর্তা মহান দয়ালু যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না’ (সূরা আলাক : ১-৫)। এই আয়াতগুলো দ্বারা বুঝানো হয়েছে, তুমি পড়! অর্থাৎ তুমি জ্ঞান অর্জন কর। যে জ্ঞান অর্জন করলে পালনকর্তা সম্পর্কে, পালনকর্তার সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে, তথা কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও শরিয়তের জ্ঞান সম্পর্কে জানা যাবে। ঈমান আনার পরেই দ্বীনি ইলম অর্জনের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, যা আনাস রা. বর্ণনা করেন, ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। আর অপাত্রে ইলম প্রদান করা শূকরের গলায় হীরা, মুক্তা, স্বর্ণ পরিয়ে দেয়ার সমতুল্য। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত, ৩৪)
ইসলামী শিক্ষার সমস্যাসমূহ: ইসলামী শিক্ষার অনেক সমস্যা রয়েছে। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কিছু আলোচনা করা হলো:
১. যুগোপযোগী গবেষণার অভাব: এখানে গবেষণাধর্মী নিত্যনতুন মাসয়ালার যুগোপযোগী স্বাধীন স্বতন্ত্র সমাধান উদ্ভাবনের পরিবর্তে তাকলিদ মাসয়ালার ওপর নির্ভর করা হয়। ফলে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় যুগোপযোগী কম্পিউটার, ইন্টারনেট, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বাণিজ্যনীতি কারবার পদ্ধতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন ও বিচারনীতি, কৃষি ও কারিগরি শিক্ষাদানের কোনো ব্যবস্থা নেই।
২. যুগোপযোগী সিলেবাসের অভাব: মাসয়ালা মাসায়েল ও আকাইদ সংক্রান্ত প্রাচীন কিতাব পড়ানো হলেও আধুনিক জিজ্ঞাসার জবাব সংবলিত কিতাব পড়ানো হচ্ছে না। প্রাচীন ফেরকা মুতাজিলা, রাফেজি, খারেজি, জাবারিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে পড়ানো হলেও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, তুলনামূলক ধর্ম, কাদিয়ানি ফেতনা সম্পর্কে পড়ানো হয় না।
৩. শিক্ষক প্রশিক্ষণের অভাব: ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক প্রশিক্ষণের কেন্দ্র না থাকায় শিক্ষকরা বিশ্বের আধুনিক ও কার্যকর শিক্ষাদান পদ্ধতিসমূহ সম্পর্কে অবহিত হতে পারছেন না। ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ সাধারণ শিক্ষায় পিটিআই, বিএড, এমএডসহ নানা ধরনের উন্নত পদ্ধতি অবলম্বন করছে বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেভাবে শিক্ষা লাভ করে ইসলামী শিক্ষায় ছাত্ররা তা পারছে না।
৪. পৃথক পাঠ্যপুস্তক কারিকুলাম বোর্ড না থাকা: ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় পৃথক কোন পাঠ্যপুস্তক কারিকুলাম বোর্ড না থাকায় শিক্ষার্থীদের সীমাহীন অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে, যা পাচ্ছে তাতে ভুলে ভরা, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে একই সংস্করণ পুনঃমুদ্রণ হওয়াতে ছাত্ররা বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।
৫. গ্রন্থাগারের অভাব: ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় পর্যাপ্ত গ্রন্থ তো দূরের কথা কোন প্রকার গ্রন্থাগারেরই অস্তিত্ব নেই। অথচ সাধারণ শিক্ষার চেয়ে বেশ কিছু নতুন বিষয়ের সংযোজন থাকায় নতুন করে কিছু গ্রন্থাগারের একান্ত প্রয়োজন।
৬. বৃত্তিমূলক শিক্ষার সংযোজন না থাকা: সিলেবাসভিত্তিক অধ্যয়নের পাশাপাশি মাদরাসা ছাত্রদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা যেমন- মৎস্য খামার, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কুটির শিল্প, হাঁস-মুরগি পালনসহ যে কোন ধরনের বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ নেই।
৭. ডিপ্লোমা স্তরসহ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তির সংযোজন না থাকা: সাধারণ শিক্ষায় বুয়েট, পলিটেকনিকে কম্পিউটার ডিপ্লোমা, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আর্থসামাজিক নির্ভরশীল করে তোলার প্রচেষ্টা রয়েছে, অথচ ইসলামী শিক্ষায় এ জাতীয় শাখা খোলার কোন উদ্যোগ সরকারের নেই।
৮. বাণিজ্যিক বিভাগের অভাব: ইসলামী শিক্ষায় বাণিজ্যিক শাখার সংযোজন করা হয়নি অথচ এ শাখাটি জাতীয় স্বার্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো বাণিজ্যিক শাখা, যেমন- ইসলামী ব্যাংকিং, ইন্স্যুরেন্স, শেয়ার লেনদেনসহ বাণিজ্যিক সকল সেক্টরের জ্ঞান লাভ থেকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্ররা বঞ্চিত হচ্ছে।
৯. চরম বৈষম্যের শিকার: ইসলামী শিক্ষার সকল স্তরেই বয়েছে চরম বৈষম্য, দাখিল ও আলিমকে এসএসসি ও এইচএসসি এর মান দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিষয়ে তাদেরকে অনার্সে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয় না। দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে ফাজিলকে ডিগ্রি ও কামিলকে মাস্টার্সের মান দিলেও এলএলবি, বিএ ভর্তিসহ সরকারি ও বেসরকারি সকল সেক্টরে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
১০. শিক্ষাবোর্ডের অভাব: দেশের সাধারণ শিক্ষায় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষাসহ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রত্যেক বিভাগে শিক্ষাবোর্ড রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বেসরকারি মিলে প্রায় শতাধিক স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও মাদরাসার ইবতেদায়ি বৃত্তি, অষ্টম বৃত্তি, পিএসসি, জেডিসি, দাখিল, আলিম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, সিলেবাস তৈরিসহ সকল কর্মকান্ড শুধুমাত্র একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
১১. ইবতেদায়ি মাদরাসাকে সরকারি না করা: সাধারণ শিক্ষায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারীকরণ করে দফায় দফায় তাদের বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে। অথচ ইসলামী শিক্ষায় ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোতে সরকারীকরণ তো দূরের কথা প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে এ প্রতিষ্ঠানগুলো চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
ইসলামী শিক্ষার সমস্যাসমূহের সমাধান: ইসলামী শিক্ষার সমস্যাসমূহের সমাধানের উপায়গুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:
১. শিক্ষানীতি প্রণয়ন: ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন শিক্ষানীতির পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থাশীল করে তুলতে হবে যাতে করে তারা দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক পূর্ণ বিকাশের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উৎপাদনশীল জনশক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে।
২. যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করা: পাঠ্য সিলেবাসের সময়সীমা ও যুগোপযোগী বিষয়ের সংযোজন করা একান্ত প্রয়োজন। তাই সময়ের সাথে মিল রেখে প্রয়োজন মত সিলেবাস প্রণয়ন, পরিবর্তন, সংস্কার ও সংশোধনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ইবতেদায়ি মাদরাসাকে সরকারি করতে হবে: মাদরাসা শিক্ষার সূতিকাগার সকল ইবতেদায়ি মাদরাসাকে সরকারি করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। এ ছাড়াও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নার্সারি ও শিশু ভবনের জন্য ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৪. পাঠ্যপুস্তক কারিকুলাম বোর্ড গঠন করতে হবে: ইসলামী শিক্ষার জন্য পৃথক পাঠ্যপুস্তক কারিকুলাম বোর্ড গঠন করতে হবে, যাতে করে শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে সঠিক চাহিদা মাফিক পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহ করতে পারে।
৫. উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা কোর্স চালু করা: স্নাকোত্তর স্তরের পর সাধারণ শিক্ষায় যেভাবে এমফিল, পিএইচডি ইত্যাদি উচ্চতরে গবেষণাপদ্ধতি চালু আছে, মাদরাসা শিক্ষাতেও অনুরূপ উচ্চতর কোর্সের ব্যবস্থা করে ইজতিহাদধর্মী স্বাধীন স্বতন্ত্র মতামত প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে এবং আধুনিক জীবন পরিক্রমার সকল নিত্যনতুন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিবেশ সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণাগার, গবেষণাসামগ্রী ও গবেষণা মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. বাণিজ্যিক বিভাগের সংযোজন করতে হবে: ইসলামী শিক্ষায় বাণিজ্য শাখার সংযোজন করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য, লেনদেন, ব্যাংকিং কারবার, শেয়ার বাজার, মুদ্রাস্ফীতি, ইন্স্যুরেন্স পদ্ধতিসহ সকল বাণিজ্যিক বিভাগে মাদরাসা ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৭. গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে: ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্রদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি যেহেতু শরিয়তের বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করতে হয় তাই তাদের রেফারেন্স বিভাগ হিসেবে কুরআন, তাফসির, হাদিসসহ ইসলামী সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় ও ধরনের গ্রন্থের প্রয়োজন দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই গ্রন্থাগারের সাহায্য নেয়া জরুরি। এ জন্য প্রতিটি ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ছে।
৮. শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা: শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষায় যেভাবে বিএড, পিটিআই, এমএড, বিপিএড ইত্যাদি কোর্স চালু আছে, ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষকদের জন্য অনুকূল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ প্রশিক্ষণই হলো সাফল্যের চাচি কাঠি।
৯. ইসলামী শিক্ষায় ডিপ্লোমা স্তর সংযোজন করা: সাধারণ শিক্ষার মতই ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্রদের জন্য বুয়েট, পলিটেকনিক, কম্পিউটার ডিপ্লোমা, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা, পর্যটন ডিপ্লোমা, গার্হস্থ্য ডিপ্লোমা, সাংবাদিকতা, রেডিও ও টিভির সংবাদপাঠ ইত্যাদি প্রশিক্ষণ কোর্স সংযোজন করতে হবে।
১০. সমাজ জীবনের সাথে মিল রাখা: সমাজ জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কেননা, সমাজজীবনের সাথে যে বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যদি সেগুলোর যথোপযুক্ত জ্ঞান না থাকে, তাহলে সমাজে সঠিক নেতৃত্ব দেয়া কখনো সম্ভব নয়। তাই সমাজজীবনের সাথে মিল রেখেই বিষয় নির্ধারণ করতে হবে।
ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা পরিক্রমায় এ জাতিকে উপহার দিতে পারবে একদল সৎ, যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব। আমরা বলতে পারি, ইতিহাসের সব যুগেই এক শ্রেণীর লোকের সন্ধান পাওয়া যায় যারা দেশ, সমাজ ও জাতিকে পরিচালনা করে। আজ সমাজ পরিবর্তনে প্রয়োজন সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব। আর এই নেতৃত্বের মডেল হলো বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা.। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূল সা. এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সূরা আহযাব- ২১)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন