বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শেয়ারবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা

ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারায়

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শেয়ারবাজারে বড় ধরণের ধস নামে ২০১০ সালে। ইতিমধ্যে পার হয়েছে ৭ বছর। কিন্তু এখনও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুরোপুরি আস্থা ফেরেনি। বরং বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ২০১৫ সালে ৩২ লাখ ২৩ হাহাজর বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাব ছিলো। চলতি বছরের নভেম্বর মাস শেষে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ১০ হজার ১৮৮টিতে। আর গত একবছরে বিও হিসাব কমেছে ২ লাখ ১১ হাজার ৪৮টি। সিডিবিএল সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাস শেসে বিও হিসাবের পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ২১ হাজার ২৩৬টি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি বিও হিসাব বন্ধ হওয়াও কাম্য নয়। তাদের মতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পেরেই তারা পুঁজিবাজার ছাড়ছেন। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, প্রতিবছর বিও হিসাব সংরক্ষণে চার্জ কাটা হয়। বিপুল সংখ্যাক বিনিয়োগকারী ২০০৯ এবং ২০১০ সালে এসেছিলেন। যাদের অনেকের ইক্যুইটি অর্ধেক হয়েছে। আর অনেকেই আইপিওর আশায় বিও হিসাব পরিচালনা করতেন। কিন্তু সম্প্রতি তারা খুব বেশি আইপিও পান না তাই তারা বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, শেয়ারবাজার ধসের পর ৪ বছরে বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারীর আগমন ঘটে পুঁজিবাজারে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে পুঁজিবাজার সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারায় তারা বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের বাজার ছেড়ে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। তদের মতে, শেয়ারবাজারে ভরসা রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় এসব বিনিয়োগকারী আগ্রহ হারিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একজন পরিচালক বলেন, যে কারণেই হোক বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ায় তারা অন্যদিকে বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। আমাদের পুঁজিবাজারে গতি না আসায় তারা বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। ডিএসই ও বিএসইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেকেই শুধু প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আবেদনের জন্য আত্মীয়, পরিজন, বন্ধুবান্ধবের নামে বিও হিসাব খুলে সেগুলোর মাধ্যমে আবেদন করতেন। এ জন্য বছরে যে পরিমাণ মাশুল দিতে হয় তা দিয়ে একসঙ্গে অনেক হিসাব সক্রিয় রাখাকে লাভজনক মনে করছেন না অনেকে। তাই এসব হিসাব কমিয়ে ফেলছেন। কারণ আইপিও থেকে যে লাভ আসে তাতে হয়তো এখন আর পোষায় না। অথচ সঞ্চয়পত্র, এফডিআরসহ সব ধরণের আমানতের সুদের হার বেশ কম। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মানুষের খুব বেশি বিকল্প উৎসও নেই। তাই শেয়ারাবাজারে নতুন বিনিয়োগ আসা অনেকটা স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরও অনেকের মধ্যে আবারও বড় লোকসান হতে পারে এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বখতিয়ার হাসান বলেন, বিও হিসাব সচল রাখতে বিনিয়োগকারীদের একটি খরচ বহন করতে হয়। এখন আইপিও সেভাবে আসছে না। ফলে আইপিওতে আবেদন করে বিনিয়োগকারীরা যে মুনাফা পাচ্ছেন তাতে বিও হিসাবের খরচ মেইনটেইন করে হয়তো বিনিয়োগকারীরা খুব একটা লাভ করতে পারছেন না। যে কারণে কিছু বিনিয়োগকারী তাদের আইপিও’র বিও হিসাব বন্ধ করে দিচ্ছেন। আবার এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী সঞ্চয়পত্র ধরতে শেয়ারবাজার ছাড়ছেন। কারণ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ইতোমধ্যে একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে। সুতরাং এখন সঞ্চয়পত্র কিনে রাখলে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। এ চিন্তা থেকেও কিছু বিনিয়োগকারী আইপিও হিসাবে অর্থ খরচ না করে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন।
উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে সিডিবিএলের আওতাধীন যে কোনো ডিপিতে (ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট) একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলতে হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাব রক্ষণ ফি প্রদান করে হিসাব নবায়ন করতে হয়। বিএসইসি ও সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ বিও হিসাব শুধু প্রাথমিক শেয়ার বরাদ্দের আবেদনে ব্যবহৃত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এর সংখ্যা মোট বিও হিসাবের প্রায় ৬০ ভাগ। সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, ২৬ লাখ বিও হিসাবের মধ্যে ব্যালেন্স ছিল ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৬০টি। আর ব্যালেন্স ছাড়া বিও সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬টি। আর অব্যবহৃত বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ২২৬টি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন