বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুক্তাঞ্চলে প্রথম জনসভায় তাজউদ্দিন আহমদ

ফিরে দেখা বিজয়ের মাস

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ : একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের দিন আরো ঘনিয়ে আসে। সারা দেশের মুক্তাঞ্চলসমূহে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের নেতৃবৃন্দ সফর করেন। শত্রুমুক্ত যশোরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ভাষণ দেন। রাজধানী ঢাকা গুজবের শহরে পরিণত হয়। রণাঙ্গনের সর্বত্রই মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকিস্তানী হানাদারদের মার খাওয়ার নানা খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে হানাদার বাহিনীর মনোবল আরো ভেঙ্গে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মালিকের বেসামরিক বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী গভর্নরের সম্মতিতে আজকের এই দিনে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও সেখানকার সকল পাকিস্তানী নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান। তবে জেনারেল ইয়াহিয়া খান এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করায় জাতিসংঘও এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। যুদ্ধ অব্যাহত রাখা বা আত্মসমর্পণ প্রশ্নে উচ্চ পর্যায়ের পাক সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ তীব্র হয়ে ওঠে। বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইলের পুঙ্গি সেতুর কাছাকাছি এলাকায় ভারতীয় প্যারা ট্রুপারদের অবতরণ শুরু হয় এবং সেতু রক্ষায় নিয়োজিত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একটি ছোট দলের সঙ্গে কিছু সময় সংঘর্ষের পর হানাদাররা পালিয়ে গেলে সেতুটি মিত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। মিত্র বাহিনীর অবতরণ দেখে ভয়ে বিস্ময়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা দ্রুত ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। দুপুরের মধ্যে পূর্ব সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী মৌলভীবাজার থেকে সিলেটের দিকে সাদিপুর ফেরীঘাট পর্যন্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। নরসিংদী পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হওয়ায় ঢাকা দখলের লক্ষ্যে নরসিংদীকে একটি শক্তিশালী বেইজ হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে রাত দিন হেলিকপ্টারে করে ও নদী পথে সৈন্য, কামান, গোলাগুলী, যুদ্ধের অন্যান্য রসদ ও খাদ্যদ্রব্যের মজুদ গড়ে তোলা শুরু হয়। স্থলপথে আসা যৌথ বাহিনীর দলটি আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার দিয়ে মেঘনা নদী অতিক্রম করতে শুরু করে। ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরার সুুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে ঢাকা বিমান বন্দর মেরামতের জন্যে এদিন মিত্রবাহিনীর বিমান হামলা বন্ধ রাখা হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে যৌথ বাহিনী চট্টগ্রাম শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং সীতাকুন্ডে প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে দখলদার বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে কুমিরা পর্যন্ত এগিয়ে যায়। এদিন মিত্র বাহিনী ঘোড়াঘাট দখল করে নেয় এবং গোবিন্দগঞ্জে পাকিস্তানী অবস্থানের ওপর দু’দিক থেকে প্রচন্ড আক্রমণ চালায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Shah Alam Khan ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১১:২৫ এএম says : 0
এই লিখাটা পাঠ করে আমি ইনকিলাবের সম্পাদক বাহাউদ্দিন সাহেবকে জানাই লাল সবুজের সালাম। আমি তার এই সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মদের জন্য তুলে ধরে তাদেরকে সঠিক পথে চলার জন্য যে প্রচেষ্টা তিনি করে যাচ্ছেন এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। আমি তার দীর্ঘায়ু ও সুসাস্থ কামনা করছি। আমীন আজ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে কারন জাতী এখন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে ত্যাগ করেছে তার সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। আজ সবার সামনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বের হয়ে আসছে তাই আজকের ছাত্র ও যুবকেরা জানতে পারছে তাদের পূর্বপুরুষেরা কিভাবে তাদের সুদিনের জন্য নিজেদের জীবন দিয়ে পাক বাহিনীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছিল। তাই আজ প্রকাশ্যে সেদিনের পাকিস্তানীদের দালালদের চামুচ প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য দিতে পারছেনা। পাকিস্তানীদের দোসররা দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে পারছে না তাই দেশ থেকে হরতাল বিদায় নিয়ে দেশকে অশান্ত থেকে মুক্ত করেছে। সে সময় জাতীর জনক যদি পাকিস্তানীদের দোষরদের মানে রাজাকার, আলবদর ও জামাতীদের সমর্থকদেরকে সাধারন ক্ষমা না করতেন তাহলে দেশের আজকে যে অবস্থা তার চেয়ে অনেক অনেক ভাল অবস্থানে আমাদের দেশ থাকত এটাই অভিজ্ঞজনের বিশ্বাস। ১৯৭৫ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রচার বন্ধ করে দেয়াতে ২১ বছর বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার উপর কিছুই জানতে পারেনি। তখন পাকিদের সমর্থকরা মুক্তি যুদ্ধের বছর ১৯৭১ সনকে গণ্ডগোলের বছর বলে প্রচার করত। তাই নতুন প্রজন্ম জেনেছে ১৯৭১ সনে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ করে আলাদা হয়েছে প্রয়োজনে আবার এক হয়েও যেতে পারে। এটাই প্রকাশ্যে জামাত নেতারা সভা সমিতিতে বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করে আসছিল। এজন্যই নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ এবং এর অবদান সম্পর্কে কিছু জানতে পারেনি। আল্লাহ্‌র অশেষ মেহেরবানীতে ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারি দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধকে প্রকাশ্যে আনে এবং নতুন প্রজন্ম সেটা গ্রহণ করে তাই দেশের ভাব ধারারও আমূল পরিবর্তন আসে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন