আমাদের প্রভু মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সত্যবাদী ও বিশ্বাসীদের সাথে প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন এভাবে- ‘বিশ্বাসী হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করে, তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ট পুরস্কার দান করব। তাই স্রষ্টার এক অনুপম নিয়ামত নিদ্রা বা ঘুম। আর এ ঘুমের মধ্যে আমাদের শরীর স্রষ্টার নির্দেশে অনেক শারীরিক সমস্যার সমাধান করে। বিভিন্ন জ্বালা-যন্ত্রণা, ব্যথা-বেদনা, মানসিক উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও হতাশা ঘুমের মাধ্যমে চলে যায়। তাই বলা যায় নিদ্রা আমাদের জন্য এক অদ্বিতীয় উপহার। পৃথিবীর সব বিত্ত-বৈভব ও সম্পদের অধিকারী হলেও সুখ মেলে না যদি ঘুম না হয়। অনেকের বিশ্বাস অনিদ্রা হলো বয়স্কদের স্বাভাবিক বিড়ন্বনা। অবশ্য এটা ঠিক যে, ৫০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সে প্রত্যুষে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং অসম্পূর্ণ ঘুম অনুভব করেন। বয়স যাই হোক না কেন, সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রায় ৭ ঘন্টা ঘুম অত্যাবশ্যক। যদি মাঝে মাঝে এর চেয়ে কম ঘুম হয় তাহলে প্রতিদিন একই সময় ঘুমালে এ সমস্যা খাপ খাওয়ানো যায়। কিন্তু নিয়মিত কম ঘুম সমস্যা। এখানে ঔষুধ ছাড়া কিছু পরামর্শ দেয়া হলো যাতে নিদ্রাহীনতা চলে যেতে পারে।
ভালো ঘুম হতে পারে। (১) রাতে যখন ঘুম পায়, দেরি না করে তখনই ঘুমোতে যান এবং পরিমিত ঘুমিয়ে সকালে উঠুন। লক্ষ্য রাখুন প্রতিদিন কোন সময় ঘুম আসে এবং ঘুম ভাঙে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যাবেন এবং স্বাভাবিকভাবে যখন ঘুম ভাঙবে তখন উঠে পড়–ন।
(২) প্রতিদিন একই সময়ে ব্যায়াম করবেন। মনে রাখবেন শরীর যত ক্লান্ত হবে, তত অধিক ঘুম আসবে। আপনি যখন দৈহিকভাবে কর্মঠ, তখন আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টার মধ্যে ওই তাপমাত্রা নেমে যায়। বিকেলে ব্যায়ামে শরীর ক্লান্ত হয় তাই রাতে ভালো ঘুম হয়। কিন্তু ঘুমাতে যাওয়ার আগে কোনো পরিশ্রম করা যাবে না। তাহলে শরীর উত্তপ্ত হবে, ঘুম আসবে না।
(৩) দৈনিক অন্তত আধা ঘন্টা বাইরে হাঁটাহাঁটি করুন। হোক বৃষ্টির দিন বা প্রখর রৌদ্রের দিন। আপনি বের হয়ে পড়ুন। রৌদ্রেও আপনার শরীরের মেলাটোনিন ও হরমোন আপনার দেহ নিয়মিত করবে। ফলে রাতে ঘুম ভালো হবে।
(৪) সন্ধ্যায় বা রাতে অধিক ভোজন করবেন না। কোনো প্রকার কোলা পান করবেন না। সন্ধ্যায় অতি ভোজন এবং কোলো পান করলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে এবং পাকস্থলীতে হজমের বিঘœ ঘটতে পারে। ফলে রাতে ঘুম হবে না বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বারবার বাথরুমে যেতে হতে পারে, যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে। রাতে ঘুামাতে যাওয়ার তিন ঘন্টা আগে রাতের খাওয়া শেষ করবেন। যদি এরপর ক্ষুধা পায়, তাহলে একটা কলা বা সেরিয়াল খেয়ে পানি খেয়ে শুয়ে পড়বেন। ঘুম হবে।
(৫) ঘুমোতে যাওয়ার আগে অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন জাতীয় কিছু খাবেন না। অ্যালকোহল, চা, কফি পান করলে শরীর ও স্নায়ূতন্ত্র উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং এই উত্তেজনা পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা পর্যন্ত থাকে। তখন ঘুম আসবে না। চা-কপি খেলে বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। রাতে এসব পান করলে ঘুম হবে না। সন্ধ্যার পর লেবুর শরবত খেতে পারেন।
(৬) দিনের বেলায় ঝিমানো বা সামান্য ঘুমাবেন না। বারবার সামান্য ঘুম রাতের ঘুম নষ্ট করে। তাই দিনের বেলা বারবার ঝিমাবেন না। তবে দিনে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে, যেমন দুপুরে খাওয়ার পর এক ঘন্টা ঘুমাতে পারেন। এর বেশি নয়। দিন ৩টার পর কোনোক্রমেই ঘুমাবেন না। তাহলে রাতে ঘুম হবে না।
(৭) আপনার শোয়ার ঘর শান্ত, অন্ধকার ও ঠান্ডা রাখুন। এই পরিবেশেও যদি ঘুম না হয় তাহলে রুমের পর্দা কালো করুন। শুধু ঘুমাতে ব্যবহার করবেন। নরম তোষক বা নরম মেট্রেস ব্যবহার করুন। প্রতি ১০ বছর পর পর মেট্রেস বদলান। রুম অন্ধকার রাখুন। ঘুম আসবে।
(৮) আপনার শয্যা হোক ঘুমের বন্ধু। যে শয্যায় আপনি শুলেই ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম আসবে। যদি বিশ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসে তাহলে উঠে পড়–ন। বাইরে এসে কোনো কোরআন হাদিস অর্থসহ বুঝে পড়–ন এবং মরনের কথা, কবরের কথা স্মরণ করুন। দেখবেন ধীরে ধীরে চোখে ঘুম নামবে। তাও যদি কাজ না হয় নিচুমাত্রায় ইসলামী গান ও ইসলামী সংগীত শুনুন। তবে টিভি দেখবেন না। ধ্যান করতে পারেন। এতে ঘুম আসবে। এসব পরামর্শ হয়তো প্রথম দিকে কার্যকর হবে না। কারণ আপনার শরীর হয়তো প্রথম দিকে গ্রহণ করতে চাইবে না। কিন্তু আপনি এসব পরামর্শ অনুসরণ করতে থাকুন, এক মাসের মধ্যে উন্নতি লক্ষ্য করবেন। যদি কোনো উন্নতি লক্ষ্য না করেন, তাহলে কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ, হয়তো আপনার ভেতর কোনো ওষুধের প্রতিক্রিয়ার দরুন নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে। আবার উচ্চ রক্তচাপের ফলেও নিদ্রাহীনতা হতে পারে। কোনো মানসিক হতাশা থাকলেও ঘুম হয় না। এমন অবস্থায় মনোচিকিৎসকের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। অনেকে বলেন, ধ্যান বা ইয়োগা নিদ্রা আনয়নে খুবই সহায়ক।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট, মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন