বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

আলু নিয়ে বিপাকে হিমাগার মালিকরা

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ব্যবহৃত হচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ ও গো-খাদ্য হিসেবে
মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো : বাজারে ব্যাপকভাবে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়ায় বগুড়ায় গত মওশুমে উৎপাদিত যেসব আলু হিমাগারে রাখা ছিল তা’ পাইকারি বাজারে এখন আর ৪/ ৫টাকা টাকা কেজি দরেও বিক্রি করা যাচ্ছেনা। পুরাতন আলু এখন ব্যবহার হচ্ছে গো-খাদ্য হিসেবে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা শিবিরে অনেকেই সস্তায় আলু কিনে ত্রাণ হিসেবে বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন ।
খোাঁজ নিয়ে জানা গেছে , বগুড়ার খুচরা সব্জীর বাজারে নতুন পাকড়ি আলু ৩০ টাকা এবং সাদা হল্যান্ড আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে। ফলে পুরাতন আলুর চাহিদা একেবারেই কমে যাওয়ায় হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন না করায় এখনও বগুড়ার ৩১টি হিমাগারের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বস্তা বা প্রায় ৩৮ হাজার টন আলু অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় এই খাতে নেয়া ব্যাংক ও এনজিওর ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না বলে মজুদকারী ও আলু ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে হিমাগার মালিকরা নিজ উদ্যোগে ৮০ কেজি মাপের আলুর বস্তা ৩০০ টাকাতেই বিক্রি করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন । হিমাগার থেকে এই রেটে আলু কিনে তা’ বগুড়ার পাইকারি বাজারে ২৮০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। এদিকে গো-খাদ্য হিসেবে ধানের খড় এখন প্রতি কেজি ১২/ ১৩ টাকা এবং সব ধরণের ভুষি মাল গড়ে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়ায় অনেকেই গো-খাদ্য হিসেবে এখন সস্তায় আলু কিনে খাওয়াচ্ছেন।
অনেকে আবার রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে ত্রাণ হিসেবে আলু প্যাকেট করে পাঠাচ্ছে। গতকাল বগুড়া নওদাপাড়া এলাকায় বিসিএল ( লিঃ ) নামের একটি ব্যবসায়ী গ্রæপের বৃহত্তম কোল্ড স্টোরেজ এর বহিরাঙ্গনে গিয়ে দেখা গেছে, বিরাট আলুর স্তুপের উপরে ফুল স্পিডে ফ্যান চালিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে দ্রæততম সময়ে আলু শুকিয়ে বাজারজাত করা যায়। একই জায়গায় দেখা গেছে বেশ কিছু সংখ্যক নারী শ্রমিককে দিয়ে ছোট ছোট ( ৫ কেজি ওজনের ) প্যাকেটে আলু ভরানো হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করতেই একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানালেন ওগুলো ত্রাণ হিসেবে রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য কয়েক বছরের মধ্যে গত মওশুমে বগুড়ায় আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। অন্যদিকে দুই দফা বন্যায় ধানের ক্ষতি পোষাতে কৃষকরাও ব্যাপকভাবে এ মওশুমের শুরুতে আগাম আলুসহ সবজি চাষ করে। আগাম জাতের আলুসহ সকল সবজি বাজারে আসার ফলে হিমাগারে রাখা পুরাতন আলুর চাহিদা কমে যাওয়ার আলুর বাজারে ধস নামে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, গত বছর জেলায় ৬৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে ১৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। এর আগে ২০১৬ সালে আলু উৎপাদন হয়েছিল ১২ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। জেলার ৩১টি হিমাগারে আলু সংরক্ষনের ধারণ ক্ষমতা প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন।
বগুড়া কোল্ডষ্টোরেজ ওনার্স এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়্রাম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, বগুড়ার হিমাগার গুলোতে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বস্তা পুরাতন আলু এখনও মজুদ আছে। প্রতিবস্তা আলুর (কার্ডিনাল ও গুটি পাকড়ি ) হিমাগার ভাড়া পরিশোধ করতে গেলে লোকসানের ভয়ে আলু ব্যাসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তুলছেনা। ফলে অবিক্রিত অবস্থায় সেসব আলু পড়ে রয়েছে। অথচ ইতোমধ্যেই বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। ফলে পুরাতন আলুগুলো আর বাজারে যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
বগুড়া ভান্ডার হিমাগারের সত্ত¡াধিকারী তোফাজ্জাল হোসেন জানান, আলু ব্যবসায়ীরা আলু ক্রয়ের জন্য হিমাগার মালিকদের নিকট থেকে ঋণ নিয়ে আলু সংরক্ষণ করে। ব্যবসায়ীরা আলু কেনার জন্য হিমাগার মালিকদের নিকট থেকে প্রতি বস্তা আলুর বিপরীতে ৬ শ’ টাকা ঋণ নেয়। ব্যবসায়ীরা গত বছর হাট থেকে পাকড়ি জাতের গুটি আলু ১৩শ’ এবং কার্ডিনাল ৮শ’ টাকা বস্তা দরে ক্রয় করে । এর সাথে হিমাগার ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। এতে প্রতি বস্তা কার্ডিনাল আলু ১১শ’ টাকা এবং গুটি আলুর বস্তা প্রতি খরচ পড়েছে ১৬০০ টাকা। কিন্তু হিমাগার থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ৩০০ টাকা দরে। এই অবস্থায় হিমাগার থেকে আলু তুরলে ব্যাসায়ীদের বিশাল অংকের টাকা লোকসান গুনতে হবে। সেই ভয়ে তারা হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করছেন না। খুচরা বিক্রেতারা অবশ্য বলেন, পুরাতন আলু গো-খাদ্য , রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ ছাড়াও হোটেল রেস্টুরেন্ট গুলোতে সব্জী রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন