শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনশক্তি রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রেরণে টানা তের বছর শীর্ষে কুমিল্লা

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের মোট জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রেরণে সারাদেশে প্রথম স্থানটি টানা তেরো বছর ধরে রেখেছে কুমিল্লা। এখানকার প্রবাসীদের পাঠানো বিদেশি রেমিটেন্স এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করতে ব্যাপক অবদান রাখছে। অন্যদিকে কুমিল্লা অঞ্চলের বিদেশ গমনোচ্ছুদের স্বচ্ছ ও সহজ সেবা প্রদান এবং দালাল-মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের দৌরাত্ব বন্ধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে কুমিল্লা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস।
উন্নত জীবন-যাপনের আশায় আর একটু বেশি রোজগারের জন্য প্রিয় স্বজনদের ছেড়ে দূরদেশে পাড়ি জমিয়ে বিদেশের শিল্প, কল-কারখানা, অফিস, মরুভূমি, কৃষি জমিসহ বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত থেকে মাস শেষে রেমিটেন্স আকারে হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠাচ্ছে কুমিল্লা অঞ্চলের প্রবাসীরা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত কুমিল্লার প্রবাসীদের উপার্জিত আয় বিনিয়োগ হচ্ছে এখানকার আবাসন ও বাণিজ্যিক খাতে। উন্মোচন হচ্ছে নতুন দিগন্তের। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে জাতীয় অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখছে কুমিল্লা। লাখ লাখ প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্সে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা। জনশক্তি রপ্তানিতে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে শীর্ষে ছিল কুমিল্লা। ২০১৭ সালে এসেও শীর্ষে থাকার এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নভেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ৩হাজার ৪৭জন অবস্থান করছেন। এ কথা কোনভাবেই অস্বীকারের জোঁ নেই যে, দেশের বৃহত্তম প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা কুমিল্লা। কেবল বিদেশে অবস্থানরত লোকসংখ্যার দিক থেকেই নয়, তাদের উপার্জিত অর্থ পাঠানোর (রেমিটেন্স) ক্ষেত্রেও কুমিল্লার শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছে। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার প্রবাসীর পরিবাররা আজকের সময়ে বিদেশে থাকা তাদের স্বজনের পাঠানো অর্থ বিনিয়োগ করছেন বাণিজ্যিক খাতে। কিনছেন ফ্ল্যাট-বাড়ি। কেউবা খালি জায়গা কিনে নির্মাণ করছেন সুরম্য ভবন। আবার কেউ কেউ দৃষ্টিনন্দন বাড়ি নির্মান করে পাল্টে দিচ্ছেন উপজেলার গ্রামীণ জনপদের চেহারা। এসবই সম্ভব হচ্ছে দক্ষতার সাথে অধিক বেতনে কুমিল্লার লোকজনের বিদেশে কাজ করার সুযোগ থাকায়।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সূত্রে জানা য়ায়, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার ১লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৭জন বিদেশে চাকরি প্রার্থীর রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। তারমধ্যে ৯৭ হাজার ৭৫৭জন লোক চাকরি নিয়ে বিশ্বের প্রায় ৩০টির বেশি দেশে গেছেন। যেখানে নারী শ্রমিক রয়েছেন ৩ হাজার ১১৬জন। গত ১১ মাসে দেশের ৬৪ জেলার তুলনায় কুমিল্লা থেকে বেশি জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। জনশক্তি রপ্তানির মূল দেশগুলোর মধ্যে কুমিল্লার বেশিরভাগ লোকই অবস্থান করছেন সৌদিআরবের রিয়াদ, জেদ্দা, আবুধাবি, দুবাই, কাতার, জর্দান, বাহরাইন, লিবিয়া, ওমান, কুয়েত, কোরিয়া, ইরাক, জর্দান, জাপান, মিশর, থাইল্যান্ড, স্পেন, মস্কো, গ্রীস, হংকং, মালয়েশিয়া, লেবানন, মালদ্বীপ, ব্রæনাই, মরিশাস, সিঙ্গাপুর, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে। কুমিল্লা বিদেশে পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি নারী কর্মীও অধিকহারে যাচ্ছে। কাজের ক্ষেত্রে প্রধানত মেশিন অপারেটর, রংমিস্ত্রী, কার্পেন্টার, কনস্ট্রাকশন শ্রমিক, ইলেকট্রিক্যাল টেকনিশিয়ান, টেইলার, গৃহকর্মী, ওয়েল্ডার, পেইন্টার, পরিচ্ছন্ন কর্মী, ড্রাইভার, কৃষি শ্রমিক, লেবার, ওয়েটার, কিচেন শ্রমিক পদে উল্লেখযোগ্য শ্রমিক কুমিল্লা অঞ্চল থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিদেশে চাকরি করছে। তারমধ্যে মহিলা শ্রমিকের সংখ্যাও কম নয়। তারাও কাজের ধরণ অনুযায়ি বিদেশে ভালো অবস্থায় চাকরি করছেন।
কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কুমিল্লার সহকারি পরিচালক দেবব্রত ঘোষ জানান, কুমিল্লা থেকে প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে গিয়ে থাকে। জনশক্তিশক্তি রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রাপ্তিতে কুমিল্লা শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। বর্তমানে কুমিল্লার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস বিদেশগামিদের সবধরণের সেবা প্রদান করছে। গত নভেম্বর মাসে ৯ হাজার ৪০৮জন বিদেশ গমনোচ্ছুক নাম রেজিষ্ট্রেশন করেছেন। তারমধ্যে বিদেশ গমন করেছেন ৮ হাজার ৯৪৭জন। দালাল ও মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ব বন্ধে অত্র অফিস বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বিদেশগামীদের সময় ও যাতায়াত অর্থ সাশ্রয়ের বিষয়টি চিন্তা করে কুমিল্লার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস অভ্যন্তরে রেজিষ্ট্রেশন ফি গ্রহণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বহিরাগত দালাল ও মধ্যসত্বভোগী চক্রের দ্বারা যাতে কোন বিদেশগামীকে হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হতে না হয় এজন্য ফরম পূরণের বিকল্প হিসেবে রেজিষ্ট্রেশন ও ফিঙ্গার ফিন্টের জন্য শুধুমাত্র পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি জমা নেয়া হয়। বিদেশগামীদের এধরণের সেবা দেয়ার পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত থাকাঅবস্থায় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারদের দেয়া হচ্ছে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ, বকেয়া পাওনা এবং প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের মাঝে বিতরণ করা হয় শিক্ষাবৃত্তির অর্থ। কুমিল্লার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির জায়গাটি প্রাধান্য দিয়ে মানব সম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কেননা বিদেশ গমনোচ্ছুদের যাওয়ার আগে নিজেকে কাজের ক্ষেত্রে দক্ষ অভিজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলতে পারলে বিদেশের মাটিতে শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন পাওয়া যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
কাওসার আহমেদ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৯ এএম says : 0
এজন্য কুমিল্লাবাসীদেরকে মোবারকবাদ জানাই
Total Reply(0)
রোবেল ১৪ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
আমার এই নাম্বারের কিছু টাকা দিয়েছে বিদেশ থেকে অনুদান হিসেবে আমি এইটা উঠাব কি করে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন