শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

সৎ ব্যবসা উত্তম ইবাদত

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কুরআন ও হাদীসে ব্যবসা-বাণিজ্যকে ধন-সম্পদ বিনিময় বা আয়-উপার্জনের মাধ্যম বলা হয়েছে। হালাল উপায়ে আয়-উপার্জন করতে হলে, তার সঠিক পন্থা হলো পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করা। বাতিল পন্থায় আয়-উপার্জন করা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যেতে পারে।’ ‘আল-কুরআন, সূরা আন্ নিসা, আয়াত ২৯।’
নবী করিম স. ও সাহাবায়ে কেরামসহ ইসলামের বড় বড় ওলামায়ে কেরামগণ ব্যবসা করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত। নবীস. বলেছেন, ‘বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবীগণ, সিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সঙ্গী হবেন।’ ‘হিদায়া বুযু পর্ব।’ সুতরাং ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব অত্যধিক।
ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকার : বিনিময়ের দিক থেকে ‘বায়’ চার প্রকার : (১) বায়’ুল ‘আয়ন বিল ‘আয়ন; যেমন এক ব্যক্তি কাপড় দিল, অন্যজন এর পরিবর্তে শস্য দিল। এটি বায়-এর সেই প্রক্রিয়া যাকে প্রচলিত ভাষায় বার্টার সিস্টেম বা পণ্যের বিনিময় বলে। (২) ব্যয়উদ দায়ন বিদ দায়ন; অর্থাৎ অর্থের পরিবর্তে অর্থ প্রদান করা। যেমন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে এক টাকার নোট দিল, অপর ব্যক্তি তাকে এক টাকার খুচরা পয়সা দিল। (৩) বায়উদ দায়ন বিল আয়ন: একে বায় সালামও বলে। এ প্রক্রিয়ায় বিক্রেতা ক্রেতার নিকট থেকে পণ্যের দাম অগ্রিম গ্রহণ করে। (৪) বায়উল আয়ন বিদ দায়ন: একে বায় মুতলাক (সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়) বলে। অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে কেনা-বেচা হয় তাকে সাধারণ ক্রয় বিক্রয় বলে। যেমন বিক্রেতা এক মণ ধান দিল এবং ক্রেতা তাকে ৩০০ টাকা দিল।
দামের দিক থেকে বায় চার প্রকার : (১) মুরাবাহা : বিক্রেতা মালের ক্রয় মূল্যের সাথে লাভ যোগ করে বিক্রি করে। (২) তাওলিয়া : ক্রেতা যে দামে ক্রয় করেছে, কোন প্রকার লাভ ছাড়া সে দামেই বিক্রি করে। (৩) ওয়াদিয়া: ক্রেতা যে দামে ক্রয় করেছে, তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করে। (৪) মুসাওমা : ক্রেতা যে দামে ক্রয় করেছে, তা বিবেচনা না করে যে কোন মূল্যে বিক্রি করে।
হুকুমের বিবেচনায় বায় চার প্রকার : (১) সহিহ্ ও নাফেয (সঠিক ও কার্যকর ক্রয়-বিক্রয়), এর প্রক্রিয়া এই যে, উভয় পক্ষের নিকট মাল থাকতে হবে। ক্রেতাও বিক্রেতা জ্ঞান সম্পন্ন হবে, পাগল বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হবে না। চাই ক্রেতা-বিক্রেতা মূল ব্যক্তি হোক বা তাদের উকিল তথা প্রতিনিধি হোক। (২) বায় ফাসেদ : ক্রয়-বিক্রয় কোন শর্তের অনুপস্থিতিতে ত্রæটিযুক্ত, কিন্তু শর্ত পূরণ করলে তা সঠিক হবে। (৩) বায় বাতিল : যে বিক্রয় মূলগত ও গুণগতভাবেই বাতিল এবং কোনভাবেই সংশোধনযোগ্য নয়। (৪) বায় মওকুফ : কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির মাল তার অনুমতি ব্যতীত বিক্রি করে। এ রূপ বায়ের আইনগত অবস্থা হলো-যতক্ষণ মূল মালিকের সম্মতি না পাওয়া যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তা সঠিক ও কার্যকরি হবে না। ‘হিদায়্যা বুযু পর্ব।’
ক্রয়-বিক্রয়ের ভিত্তি : ফকিহ্গণ ক্রয়-বিক্রয়ের দু’টি মৌলিক ভিত্তির কথা বলেছেন। এক, উভয় পক্ষের ইজাব ও কবুল অর্থাৎ প্রস্তাব ও সম্মতি দান। দুই, মালিকানা হস্তান্তর। অর্থাৎ ক্রেতার জন্য মালের ওপর এবং বিক্রেতার জ্য দামের ওপর মালিকানা সাব্যস্ত হওয়া।
ক্রয়-বিক্রয়ের শর্ত ও হুকুম : বায় সংঘটিত হওয়ার জন্য চার ধরনের শর্ত রয়েছে : (১) কিছু শর্ত ক্রেতা ও বিক্রেতাগণের সাথে সংশ্লিষ্ট (২) কিছু শর্ত মূল বেচা-কেনায় আবশ্যক। (৩) কিছু ক্রয়-বিক্রয়ের স্থানের সাথে সংযুক্ত। (৪) কিছু শর্তক্রয়-বিক্রয়কৃত মালের সাথে সংশ্লিষ্ট।
ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদনকারী পক্ষদ্বয়ের জন্য শর্ত ২টি: (১) আকেলমন্দ তথা বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হওয়া। পাগল এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের অযোগ্য। (২) ক্রেতা-বিক্রেতার স্বতন্ত্র ব্যক্তি হওয়া কারণ একই ব্যক্তি ক্রেতা ও বিক্রেতা হতে পারে না। নিজের সাথে কেউ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না।
মূল ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট শর্ত এই যে, ইজাবের সাথে কবুলের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। অর্থাৎ বিক্রেতা যেই মূল্য প্রস্তাব করেছে, ক্রেতার সেই মূল্যে গ্রহণ করার সম্মতি থাকতে হবে। যেমন বিক্রেতা একটি কাপড়ের মূল্য একশত টাকা প্রস্তাব করল, এখানে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার জন্য ক্রেতাকে এক শত টাকায় তা ক্রয়ের সম্মতি ব্যক্ত করতে হবে। ক্রেতা এর ব্যতিক্রম করলে ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হবে না। ইজাব-কবুলের ক্রিয়াটি অতীতকাল বাচক হতে হবে। একজন অতীতকাল এবং অন্যজন ভবিষ্যতকাল প্রকাশক শব্দ ব্যবহার করলে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হবে না। ক্রয়-বিক্রয় স্থানের শর্ত এই যে, ইজাব-কবুল একই মজলিসে সংঘটিত হতে হবে।
মালের দিক থেকে শর্ত ছয়টি : (১) বিক্রিতব্য পণ্যটি বিদ্যমান থাকা অর্থাৎ অনুপস্থিত বেদখল মালের ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হবে না। (২) মাল হওয়া। অর্থাৎ শরীয়তের দৃষ্টিতে পণ্যটি মাল হতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম দ্রব্য মাল হিসাবে গণ্য হয় না যেমন শূকর, মদ। (৩) মালটি অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য হওয়া। যার কোন আর্থিক মূল্য নাই, তার ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হবে না। (৪) বিক্রিতব্য মালের ওপর মালিকানা বিদ্যমান থাকা। (৫) মালটি মালিকানাযোগ্য হওয়া। যেমন চন্দ্র, সূর্য্য ইত্যাদি মালিকানা অযোগ্য। (৬) বিক্রিতব্য মালটি হস্তান্তরযোগ্য হতে হবে। এছাড়াও কিছু সাধারণ শর্তাবলী রয়েছে, যেমন: (১) ক্রয়-বিক্রয় নির্দিষ্ট সময় সীমার জন্য হওয়া (২) মাল সুনির্দিষ্ট হওয়া (৩) মূল্য নির্দিষ্ট হওয়া (৪) ক্রয়-বিক্রয়ে একটা উপকারিতা থাকা চাই। কাজেই যে ক্রয়-বিক্রয়ে কোন উপকারিতা নাই, তা না করা ভাল। (৫) ফাসেদকারী (ত্রæটিযুক্ত) শর্ত হতে মুক্ত হওয়া (৬) বাকিতে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রিতব্য মাল ও মূল্য হস্তান্তরের জন্য সময় ও স্থান নির্ধারিত হওয়া। (৭) ক্রয়-বিক্রয় সুদমুক্ত হওয়া (৮) বায়ে সারফ অর্থাৎ সোনা, রূপা ও মুদ্রা বিনিময় হলে পক্ষদ্বয় পরস্পর পৃথক হওয়ার পূর্বেই বিনিময়কৃত মাল পরস্পর হস্তগত হওয়া (৯) বায় সালামের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল শর্ত বিদ্যমান থাকা। ‘ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাস্লা-মাসায়েল, সম্পাদনা পরিষদ, ইফারা প্রকাশন, মে-২০০৫।’
ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদনে শব্দ : ফকীহগণ বলেন, তামলিক (মালিক বানানো) ও তামালুক (মালিক হওয়া)-এর অর্থ জ্ঞাপক যে কোন শ্দ দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হয়ে যায়। চাই তা অতীতকাল জ্ঞাপক ক্রিয়াপদ হোক বা বর্তমানকাল জ্ঞাপক। চাই তা বাংলা ভাষায় বলা হোক বা অন্য কোন ভাষায় বলা হোক, তবে ভাষা উভয়ের বোধগম্য হতে হবে। অতীতকাল জ্ঞাপক ক্রিয়া হলে এ ক্ষেত্রে বর্তমান-এর নিয়ত করা আবশ্যক নয়। বরং নিয়ত ছাড়াই ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হয়ে যাবে। ক্রেতা বা বিক্রেতার কোন একজন বলল, আমি বিক্রি করলাম তারপর অপরজন বলল, আমি ক্রয় করলাম, এতে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হয়ে যাবে।
সুদ ও ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে পার্থক্য : কুরআন-হাদীসের জ্ঞান না থাকার কারণে কেউ কেউ জাহেলী যুগের পৌত্তলিকদের মতই উক্তি করে থাকে যে, ক্রয়-বিক্রয় লব্ধ মুনাফা তো সুদেরই অনুরূপ। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার সাফল্য ও অগ্রযাত্রায় প্রায়ই উল্লেখিত মন্তব্য করা হয়। বিশ্ব অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থা সুদনির্ভর বা সুদীপ্রভাব বলয়ে বেড়ে উঠেছে। তাছাড়া দীর্ঘকাল ইসলামী অনুশাসনের অনুপস্থিতির কারণে ইসলামী আর্থিক লেনদেনও চালু নেই। ফলে এ ক্ষেত্রে মানুষের ধারণা ও জ্ঞান এতই সীমিত যে, তাদের কাছে ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী ব্যাংকিং যেন একটি কাল্পনিক বিষয়। প্রচলিত অর্থনীতি ও ব্যাংকিং কার্যক্রম দ্বারা তাদের চিন্তা ও চেতনা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ইসলামী অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সুবিচার ও সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে সামাজিক কল্যাণ সাধন করা। এ লক্ষ্যে ইসলাম ক্রয়-বিক্রয়কে করেছে হালাল আর সুদকে করেছে হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘যারা সুদ লয়, তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলে: ব্যবসা তো সুদেরই মতো। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই উপদেশ পৌঁছে যায় এবং সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়ে ফেলেছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে। আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী। ‘আল-কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৫।’
এক শ্রেণীর লোক বলে, তারাও ১৫%,আমরাও ১৫% তফাৎ কোথায়? প্রকৃতপক্ষে শতকরা হারের সাথে জায়েয-নাজায়েযের মানদÐ সম্পর্কিত নয়, মানদন্ডের সম্পর্ক হলো প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির সাথে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অনুপস্থিতির কারণে ইসলামী ব্যাংকগুলো বাই-মুরাবাহা, বাই-মুয়াজ্জাল এবং বাই-সালাম পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করতে অধিক স্বাচ্ছন্দবোধ করছে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংক কেনা-বেচা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ পরিচালনা করে থাকে।যা প্রচলিত সুদী ব্যাংকের প্লেজ ও হাইপোথিকেশনের মতো মনে হয়। উল্লেখ্য প্লেজ ও হাইপোথিকেশন দুটি জায়েজ পদ্ধতি। ফলে প্রচলিত ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য সহজে বুঝা যায়।
সুদ : সুদ হারাম। কারণ এটি একটি শোষণের হাতিয়ার। সুদ মানুষকে বিভিন্নভাবে খারাপ কাজে ঠেলে দেয়। কার্পণ্য, হৃদয়হীনতা, স্বার্থপরতা ও নিষ্ঠুরতার অসৎ গুণাবলী সৃষ্টি করে। তাই কুরআন ও হাদীসে এটিকে ধ্বংসাত্মক উপাদান বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সুদের সংজ্ঞা : সুদের আরবী শব্দ রিবা যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া। পারিভার্ষিক অর্থে ‘নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ঋণ দেওয়ার পর তার উপর একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে অতিরিক্ত কিছু অর্থ আদায় করলে এ অতিরিক্ত অর্থই সুদ। তদ্রæপ একই প্রজাতির খাদ্যশস্য কম পরিমাণের বিনিময়ে বেশি পরিমাণ নিলে এ বেশিটুকুই সুদ। প্রথমটি রিবা নাসিয়া এবং শেষোক্তটি রিবা ফদল।
রিবা নাসিয়া হলো : ঋণ নগদ অর্থে অথবা দ্রব্য-সামগ্রীর আকারে যেভাবেই হোক তার উপর সময়ের ভিত্তিতে পূর্ব নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত কিছু আদায় করা হলে সেই অতিরিক্ত অর্থবা দ্রব্যকে নাসিয়া সুদ বলা হয়।
রিবা ফদল ঃ একই প্রজাতির খাদ্যশস্য নগদ বিনিময়ের ক্ষেত্রে একপক্ষ যদি অতিরিক্ত কিছু দেয় তবে তাকে রিবা ফদল বলা হয়। যেমন দুই কেজি নিম্নমানের খেজুরের সাথে এক কেজি ভালো খেজুরের বিনিময় করা। রসুলুল্লাহস. এ ধরনের লেনদেনকে হারাম গণ্য করতেন।
রিবা সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের ফয়সালা নিম্নরূপ :
আল-কুরআন : ‘যে সুদ তোমরা দিয়ে থাকো, যাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না। আর যে যাকাত তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকো তা প্রদানকারী আসলে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে। ‘আল-কুরআন, সূরা রুম আয়াত-৩৯১।’ ‘তাদের সুদ গ্রহণ করার জন্য যা গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। ‘আল-কুরআন, সূরা আন্ নিসা, আয়াত-১৬১।’ হে ঈমানদারগণ! এ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া বন্ধ করো। এবং আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। ‘আল-কুরআন, সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১৩০।’
যারা নিজেদের ধন সম্পদ দিনরাত গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের কোন ভয় ও দুঃখ নেই। কিন্তু যারা সুদ খায়, তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলে: ব্যবসা তো সুদেরই মতো। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই উপদেশ পৌঁছে যায় এবং সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়ে ফেলেছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপরটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে। আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে থাকবে চিরকাল। আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত ও বিকশিত করেন। আল্লাহ অকৃতজ্ঞ দুস্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না। ‘আল-কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৫-২৭৬।’ ‘ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি যথার্থই তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকে। কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। কিন্তু যদি তোমরা তওবা করো, তাহলে তোমরা নিজের মূলধনের অধিকারী হবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। ‘আল-কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৮ ও ২৭৯।’
রসুলুল্লাহ স. এর হাদীস : হযরত আবু হোরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ স. বলেছেন, সুদের গুণাহর সত্তরটি স্তর রয়েছ। এর সর্বনিম্ন স্তর হলো নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবার সমতুল্য। ‘ইবনে মাজাহ।’ আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন