ইনকিলাব রিপোর্ট : জন্ম যেখানে, বেড়ে ওঠাও একই স্থানে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ তিনি যেন এক অচেনা মানুষ। অতিথি হিসেবে এসেছেন তার শৈশব-কৈশরের স্মৃতিঘেরা লোকালয়ে। ডান-বাম-সামনে-পেছনের সবগুলো মুখই তার চেনা। তবুও যেন এক অচেনা অতিথি। কিন্তু পার্থক্য এক নিমিষেই ঘুচিয়ে দিয়ে বললেন, আপনারা সবাই আমার অতিপরিচিত, একান্ত আপনজন। আমার সবই জানা, তবু আপনাদের মুখে শুনতে এসেছি আপনাদের নানা সমস্যার কথা। এসব সমাধানের জন্যই আপনারা আমাকে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন।
বলছিলাম পুরনো ঢাকার কৃতী সন্তান, ঢাকাবাসীর গর্ব মরহুম মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সুযোগ্য ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের কথা। বুধবার ডিএসসিসির ৩৪নং ওয়ার্ডের আয়োজনে এলাকাবাসীর অভাব-অভিযোগ শুনতে হাজির হন পুরনো ঢাকার সুরিটোলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। মেয়র সাঈদ খোকনের পৈতৃক বাড়িও এই ওয়ার্ডের নাজির বাজার মিঠাই গলিতে।
স্থানীয় কাউন্সিলর আলহাজ মীর সমিরসহ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন পুর্লিশের লালবাগ জোনের ডিসি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, সিদ্দিক বাজার, আলু বাজার, নাজির বাজার, বাংলা দুয়ার ও সুরিটোলা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। ছিলেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও ঢাকা ওয়াসার কোনো প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে আসেননি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে সাথে অসন্তোষ প্রকাশ করেন খোদ মেয়রও। অথচ মেয়রকে কাছে পেয়ে তার আপনজনসহ এলাকাবাসীর অভিযোগের সিংহভাগ ছিল জলাবদ্ধতা, পানি সঙ্কট এবং পয়োনিষ্কাশন নিয়ে।
নির্বাচিত হবার ৩৪০ দিনের মাথায় ডিএসসিসি মেয়রকে কাছে পেয়ে আবেগ ঢেলে দেন শৈশবের খেলার সাথী মনির হোসেন মিন্টু। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি থেকে আয় হয় ৩০ শতাংশ আর খরচ হয় ৭০ শতাংশ। এর বিপরীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি থেকে আয় আসে ৭০ শতাংশ অথচ খরচ করা হয় মাত্র ৩০ শতাংশ। যারা ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভক্তিতে ভূমিকা রেখেছেন তিনি তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। জনাব মিন্টু বলেন, একটি সিটিতে যতগুলো প্রতিষ্ঠান সেবা প্রদান করে তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্টের জন্য মরহুম মেয়র মোহাম্মদ হানিফের আকুলতার কথা উল্লেখ করেন।
৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাজিমুদ্দীন, ওমর ফারুক, হাজী মোঃ ইয়াকুব, এস এম আকাশ, আলী ভাইসহ প্রায় সব বক্তা জলাবদ্ধতা, গ্যাস সঙ্কট, পয়োনিষ্কাশন, পানি সঙ্কট, মাদক সমস্যা, টয়লেট সঙ্কট এবং বর্জ্য অপসারণ জণিত বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ তাৎক্ষণিক এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। সোর্স নামধারী ব্যক্তিরা এলাকায় মাদক ব্যবসার হোতা বলে খোদ মেয়র অভিযোগ উত্থাপন করলে উপস্থিত নগরবাসী করতালি দিয়ে তার সাথে একাত্মতা জানান। মেয়রের তাৎক্ষণিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি তার এলাকাকে ১৫ দিনের মধ্যে মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দেন। মেয়রকে কাছে পেয়ে স্থানীয় জনৈকা দুস্থ মহিলা তার অভাবের কথা জানালে মেয়র তাকে আবেদন জমা দিতে বলে তার অভাব দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দেন।
কয়েকজন বক্তা সিক্কাটুলি পার্কের ভেতর বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন তৈরির ব্যাপারে তাদের আপত্তি উত্থাপন করে বলেন, প্রস্তাবিত বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনের মাত্র ২০ গজের মধ্যে নাজির বাজার জামে মসজিদ ছাড়াও রয়েছে তাওহীদ ইনস্টিটিউট ও মাদরাসাতুল হাদীস নামের দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পার্কের পাশের ভাগাড় থেকে প্রতিদিন বর্জ্য অপসারণকালে দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা কঠিন হয়ে পড়ে। দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর ডাম্পিং স্টেশন তৈরি হলে ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। মসজিদ ও মাদরাসার দরজা জানালা বন্ধ করে ইবাদাত ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে বলে জানান অভিযোগকারীরা। তারা আরো বলেন, পার্কের ভেতরে বিশে^র কোথাও বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন আছে কিনা আমাদের জানা নেই।
মেয়র অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে সবার কথা শোনেন এবং সবগুলো সমস্যা আশু সমাধানের আশ^াস দেন। তিনি বলেন, ২ কোটি ঢাকাবাসীর সমস্যার অন্ত নেই। এ নগরীকে পরিচ্ছন্ন করে গড়ে তুলতে তিনি প্রত্যেককে মেয়রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এলাকায় বর্জ্য অপসারণ এক বড় সমস্যা। তিনি ১৫ দিনের মধ্যে এলাকায় ১শ’টি ডাস্টবিন স্থাপনের ঘোষণা দেন যাতে জনগণ রাস্তায় কোন কাগজ, ফলের খোসা না ফেলে সেই ডাস্টবিনে ফেলতে পারেন। তিনি ঘন ঘন এই ধরনের মতবিনিময় সভা করে জনগণের সব সমস্যা সরাসরি শুনে এবং সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে তা সমাধানের আশ^াস দেন। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন