নিজের শহর বলে কিছু নেই
স ম তুহিন
তিন ঢোঁকে একটু আধটু পা টলে
দু এক পা হাটলে আরো দু ঢোঁক, তারপর... আর না।
কবিতার কসম কবিতা তখনো আমায় ছেড়ে যায় না
তখনও আমার মনে থাকে
‘মোড় বেঁকানোর সময়, মোটরগাড়ি একটু আস্তে চালানো উচিত’
তখনও আমার মনে পড়ে, ভাস্কর চক্রবর্তী যেদিন মরে গেলো
সেদিন আমার বয়স কত? ফাঁকা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম,
‘আমাদের স্বর্গ নেই স্যারিডন আছে’
বলেছিলাম, ‘আমি শালা ভিখারির চেয়েও ভিখারি’ আর
‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব’
কোনো কোনো দিন দিনটা হেসে ওঠে,
সেরকম দিনে অসতর্ক হলেও কিছু এসে যায় না!
তেমনি এক দিনে ঝাঁপিতে আটকে ছিলো অন্ধকার আর সবুজ ঘাস
আমি সেই সবুজ ঘাসে রোদ লাগাতে চেয়েছিলামÑ
কৃষ্ণচূড়ার রঙে আঁকা ভোরের আকাশে
প্রজাপতি উড়ছে আর বলছে, তোমার নিজের শহর বলে কিছু নেইÑ
প্রতিদিন বসন্ত
আবু ইসহাক হোসেন
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে বিবর্ণ বাগান
সুরভোলা কচি-পল্লবিত শাখে বাজে আনন্দ-কোকিলের গান।
আচমকা বিষণœ সময়ের শরীরে ভরা যৌবনের লাবণ্য-জোয়ার
ঊষার খোয়াড় ভেঙে হু হু খুলে যায় স্বর্ণ-কিশোরী-আলোর দুয়ার।
মুকুল-গর্ভা আমের পাতায় দুলে ওঠে সফল আগামীর স্বপ্ন
রোদের চিবুকে চুমো খেয়ে যায় তরুণ দখিনা বাতাস
সংসারি হয়ে ওঠে বাউলের একতারা ভেঙে তপ-ধ্যান-মগ্ন
সাধক ওলি খুঁজে ফেরে কামনায় ষোড়শী ফুলের সুবাস।
বসন্ত আল্লাদে কবির অধর-কাঁপা কবিতা-রক্তে জাগে দোলা
শব্দে-চিন্তায় ভরে উঠে কাব্যের উর্বর সুজলা মধুর বীজতলা
কার মনে কতোটা বসন্ত জাগে কে রাখে তার খবর তেমন করে
থাকে কি বসন্ত রক্তে, শব্দে, চিন্তায় ফাগুন ঋতুর পরে?
আমার বসন্ত নয় শুধু ফাগুনের ফুলেল সময়ে
প্রকৃতির খেয়ালি বর্ণিল লাবণ্য ত্বকে অর্থ-পূর্ণ
গ্রীষ্ম অথবা বর্ষা কিংবা শরতের শিউলি শূন্য
দিনেও আসতে পারে অপ্সরি বসন্ত তুমিময়।
প্রকৃতির এতো আয়োজন বিফল তোমা ভিন্ন পলাশ-শিমুল অর্থহীন
ফাগুন-চৈত্র লাগে না, তুমি থাকলে পাশে আমার বসন্ত প্রতিদিন।
অভিমানী ফিরে এসো
শাহরিয়ার সোহেল
অভিমানী-ফিরে এসো এই নক্ষত্রময় বুকের গভীরে
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, কুহকিনী শীত পার হয়ে এলো
লিলুয়া বাতাসে দোলায়িত বসন্ত
সব পাখি ফিরে এলো ঘরে
অভিমানী-মাধবী আমার, তুমি তো এলে না
রুক্ষ দুঃসময়ে দুঃখের দ্রাঘিমা পার হয়ে
এতটুকু শান্তির অন্বেষণে প্রবল প্রতীক্ষা
তুমি কি মসৃণ মোলায়েম হেলেন
ধ্বংস করে দিতে চাও আমার ট্রয়
ভেঙো না বন্ধু, উঠিয়ো না ঝড় তুমুল আকাশে
ফিরে এসো খোলা জানালায় ঠিকরে পড়া
প্রাণ জাগানিয়া জ্বলন্ত জোসনার মতো
নক্ষত্রময় বুকের গভীরে...
এই বসন্তে
তানি হক
ফিরে এসেছে বসন্ত!
হারিয়ে যাওয়া পাখীদের পালক
তবে থাক, সুপ্রিয় অম্বর !
তোমার সাথে বোঝাপড়া।
আমি প্রবচন কুড়িয়ে নিই
ওপাশের কাঠ-কয়লা, অবাঞ্ছিত ঝরাপাতা
নৈশব্দের লাল চিঠি।
আজ পাশ কেটে যাক, ঝড়ের আশঙ্কা
ছায়া উল্টে দিক, অপ্রিয় বিষণœতা
এখন বন্ধ তবে সকল অবশিষ্টের গান
চলো, মিলিয়ে নিই এই বসন্তে
সৌভাগ্যের সব ক’টি ঋতু।
শুভ্র আহমেদ
বসন্তের বিলাপ
মৃত্যু যদি হয় আমার কোনো এক
এমন মধুক্ষরা বসন্তে, কফিনে
কিছু বেশি ফুল দিও।
বসন্তের অঢেল ফুলÑকিবা করবে
আমিবিহীন সেই বসন্ত, বসন্তের রঙিন সাজ
পূর্ণিমায় আলোকিত কলাভূতের রাত
রাতদুপুরে কালের সাক্ষী ভুতুম পেঁচার বয়ান
সহ¯্র বর্ষের ইতিপুরাণে যা কিছু অগ্রন্থিত
তার সবটাই, কেবল বসন্ত হবে সেদিন।
আজকের এইসব জটিলতায়, সম্পর্কের ভাঁজ
মানবিক গ্রন্থিল ভেঙেÑবেরিয়ে কি আসতে
পারি, না পারলে এই বসন্তে আর কবে,
কোনোদিন... তারও পর ঠাঁই নাড়া হবে স্মৃতির দুপুর।
নানান রঙে বর্ণিল, গন্ধব্যাকুল নুনবাতাসে
ইতিহাসসিদ্ধ সামাজিক ধারায় আমাদের
সকল কথা-কাহিনী হবে বসন্তে বসন্তে।
মৃত্যু যদি হয় আমার কোনো এক
এমন মধুক্ষরা বসন্তে, কফিনে
কিছু বেশি ফুল দিও।
বসন্তবিলয়
ইদ্রিস আলী মেহেদী
ধূসর মলিন অকর্ষিত মনঃপ্রকৃৃতিতে
এখন বসন্ত নেই
কোকিলের দুষ্প্রাপ্যতা ভয়ঙ্কর কিছু
চৈত্রদাহে ঋজুপ্রায় কুসুম কোরক;
কোথা পাব এত জল!
কোথা পাব প্রপাতের স্রোতস্বিনী...
সুকণ্ঠী গায়িকা অর্থমোহে গৃহত্যাগী
সুর-ঝংকারে নামে মড়কের ঢল
বসন্তবিহীন খরাশেষে।
তৃষ্ণাধিক্যে চেয়ে আছি দিগন্তের শেষ সীমানায়
ভুল করে যদি শুনি কুহুধ্বনি
মর্মমূলে ঢালে যদি শীতল পরশ
যদি মিটে প্রচ- ক্ষুধার তীব্রানল।
বসন্ত
আমির হোসেন মিলন
শুকনো গাছের পাতায় পাতায়
এখন লেগে আছে যৌবন
বিকেলের ঠৌঁটভর্তি বসন্তের নরম হাওয়া
ফুটন্ত যৌবনে মেঘ ভেঙে ঝড় তোলে
নির্লজ্জ উলঙ্গ সূর্যের তাপ মেখে
দুপুরের তেজস্বী যৌবন বেসামাল নারীর ডাকে
খুঁজে বেড়ায় বিবসনা রাতের নগ্ন শরীর
অন্ধরাতে ভেজানো দরজা খুলে
শতকোটি বছরের বিকেল পেরিয়ে
তুমি এলে আমার সবুজ পলিভূমি রাঙাতে
রৌদ্রের পাহাড় ঠেলে ঘরে পাখির মতো
জীবনের ময়লা মলাটে বসন্তের ছাপ
বাহ্্, কি আনন্দ আমি শিহরিত হই
ওপাড়ার যুবকদের মতো
বিধবা বাতাসের প্রাচীর টপকিয়ে ফিরে আসা বসন্ত
আমার শব্দের পাঠশালা রাঙায়
আমার জীবনাকাশের মেঘ তাড়িয়ে
একবার ভালোবেসে দেখ
পৃথিবীর সব বাধা পেরিয়ে আমি তোমার হয়ে যাবো
বসন্তের ছোঁয়ায়
শেখ হামিদুল হক
শীতের আঁচল থেকে অবমুক্ত হয়ে
আড়মোড়া ভেঙে আয়েশি মেজাজে
নতুন রূপে নতুন সাজে রূপসী প্রকৃতি,
ঋতুরাজ বসন্তের ছোঁয়ায় অপরূপ অঙ্গ
সজ্জায়, আহা-দৃষ্টিতে শীতলতা আনে
গাছের শাখায় নবীন পাতার চনমনে চমক।
বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে বাহারী ফুলের সুগন্ধী,
মনের একতারায় খেয়ালি বাঁশির সুর
উন্মাদনায় দোল খায় ইথারের বুকে।
ফাগুনের আগুনঝরা শ্বেত ভালুক রোদের
আঙিনায় শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার আবির
মাখা উচ্ছ্বসিত হাসি দোল খায় বিহঙ্গ বাতাসে,
মধুকরের গুঞ্জন পাখিদের কলতানে অনুভূতির
চৌকাঠে জাগে বৈপ্লবিক শিহরণ।
ভাবনার আলো জ্বেলে বসে আছি নিবিড়
সমীকরণের প্রতীক্ষায়।
বসন্তের ছোঁয়ায় ফুল ফুটেছে নাকি বসন্তের
আগমনী উন্মাদনায় প্রকৃতির এই বাহারী সাজ?
পাতা জাগার গান
পঞ্চানন মল্লিক
আমি বসে আছি তোমার নিঃশ্বাসের মুখোমুখি,
আদি কাব্যের পিতা-প্রপিতাসহ
তুমুল শব্দ প্রাস আর বসন্তের স্ট্রবেরি লনে।
দ্যাখ, ঝরা পাতারা আবার গজাবে এখন।
স্বর্ণচাঁপা রোদ
এ.কে. আজাদ
খুব সহজে স্বল্পতা নিয়ে খুশি হয়
আমার অবাধ্য মনÑ
বাস্তবে থাকে শুধু প্রবল বিদ্রোহ জেগে
মধ্যরাতের শীত খুলে নেয়
উত্তাল নদীর সমূহ সম্ভ্রম
সনাতনী যৌবনের ঝুল বারান্দার
নিঃসঙ্গতার দেয়ালে লেগে আছে
অক্ষমতার আক্রোশ
বিকশিত আলোর বাগানে
গোলাপী সকালে স্বর্ণচাঁপা রোদ
বসন্তের কোকিলের মতো
মিষ্টি সুরে গান গায় কবিতার বিকেল
নির্ভীক কবিÑ
তার কবিতার শব্দমালা কাঁচের বাক্সে রেখে
চেনা-জানা পৃথিবীর মাঝে
খুঁজে ফেরে কাক্সিক্ষত আলোর বসতি
বুকের জমিনে স্মৃতিবৃক্ষের
নিদ্রাহীন রাত কাটে শুকনো নদীর নিয়তি নিয়ে,
যৌবনা নদীর বুকে
প্রতিনিয়ত ভেসে চলে
পথহারা নাবিকের দল।
বসন্তবেলার গান
আনোয়ারুল ইসলাম
শীর্ণ শাখার কিশলয়ে নতুন দিনের গন্ধ
ফুল পাপিয়ার হৃদয় যে তাই প্রেম সোহাগে অন্ধ।
আজ নবীনের জয়ধ্বনি পুরানো দিন মিথ্যে
বসন্তদিন সমারোহে জাগায় আশা চিত্তে।
ফুটছে কুসুম বনে তো নয়, মন-জানালায় ছন্দে
টগবগে খুন উঠছে নেচে সৃষ্টি-মহানন্দে।
রূপালী রাত বাসর সাজায় তন্দ্রাতে রয় মগ্ন
উদাসী মন যায় হারিয়ে এই বুঝি তার লগ্ন।
একটু পরশ দোলায় দোদুল সোনালি দিন আনতে
মন মহুয়ার স্বপ্নকে আর কে চায় বলো জানতে!
যে তুমি হও মুখ ফুটে কও কি চাও বলো আজকে
সরাও নেকাব সঙ্গোপনে দাও মুছে সব লাজকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন