শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সম্প্রসারণে ধীরগতিতে জনদুর্ভোগ

কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়ক

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু ছয়লেন ও চারলেন সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে খুব ধীরগতিতে। তীব্র যানজটে আটকা পড়ছে সারি সারি যানবাহন। দুর্ভোগের শিকার পর্যটনের এই ভরা মওসুমে পর্যটকসহ হাজারো যাত্রী। উন্নয়নের ধুলায় ধুসর পুরো এলাকা। বাড়ছে রোগ বালাই। স্থানীয়দের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের উপক্রম হয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি তীব্রজটে অচল থাকছে পুরো এলাকা। বন্দরনগরী থেকে ছেড়ে যাওয়া যানবাহন কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত পৌঁছাতেই পার হয়ে যাচ্ছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। ভাঙাচোরা ও কেটে-খুঁড়ে ক্ষতবিক্ষত এবড়ো-থেবড়ো সড়কের ওপর দিয়ে উথাল-পাতাল করে চলছে বাস-কোচ, মিনিবাসসহ সবধরনের যানবাহন। দুর্বিষহ এই ভ্রমণে যাত্রীদের হাড্ডি-মাংস যেন একাকার হয়ে যায়! পথেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বিশেষত বৃদ্ধ, শিশুসহ অনেক যাত্রী। যানজটে পড়ছে চট্টগ্রাম নগরমুখী শত শত যানবাহন। সবমিলে জনদুর্ভোগ এখন চরমে উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ কাজের যে গতি তাতে নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর তাতে জনদুর্ভোগ আরও প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে প্রকল্প পরিচালকের দাবি কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে। কুয়েত ফান্ডের সহায়তায় ২৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। কর্ণফুলী সেতুর দুই পাশে ৮ কিলোমিটার মিটার সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। নগরীর বহদ্দারহাট থেকে সেতুর উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত ছয় লেন এবং সেতুর ওপার থেকে ওয়াই জংশন পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এটি চট্টগ্রাম মহানগরীতে কোনো সড়কের ছয় লেনে উন্নীতকরণের প্রথম প্রকল্প। গত মার্চে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০১৯ সালের জুনে। তবে কাজের উদ্বোধনকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলেছিলেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কাজ চলছে শম্ভুক গতিতে। সম্প্রসারণ কাজে জন্য সড়কের প্রায় পুরোটা দখল করে নেয়া হয়েছে। দুই পাশের দু’টি খুবই সরুপথে যানবাহন চলাচল করছে। আবার সেই সরুপথেও আছে নানা জঞ্জাল। ফলে যানজট লেগেই আছে। রাহাত্তার পুল এলাকায় বিকল্প সড়কটি এত সরু যে সেখানে বড় যানবাহন চলতে গিয়ে নির্মাণ কাজের জন্য দেয়া ঘেরার সাথে আটকে যাচ্ছে। আবার ওই সড়কে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ সামগ্রী। একই অবস্থা রাজখালী এলাকাতেও। যানবাহন চলাচলের জন্য দুইপাশে ছেড়ে দেয়া অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে আটকে যাচ্ছে যানবাহন।
একজন বাস চালক বলেন, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার পার হয়ে সড়কে নামতেই জটে আটকা পড়তে হয়। ওই সড়কে কোন শৃঙ্খলা নেই। যেখানে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কাজেও কোন সমন্বয় নেই। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। নগরী থেকে কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং বান্দরবানমুখি যানবাহন ওই এলাকা পার হতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। সেতুর দুই পাড়ে চলছে কাজ। এরফলে সেতুতে আসা-যাওয়ার সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকজন গাড়ি চালক বলেন, কাজে সমন্বয় এবং সড়কে শৃঙ্খলা আনা গেলে দুর্ভোগ কমানো যায়। ওই সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধেও কাজে অবহেলার অভিযোগ করেন চালকেরা।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর মূল কাজ হয় বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে। সেতু নির্মাণকালেই বহদ্দারহাট থেকে সংযোগ সড়কটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা জটিলতার কারণে তা আর হয়নি। সেতুটি চালু হলেও সংযোগ সড়কটি সম্প্রসারণ না হওয়ায় সেতুর দুই অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হয় এই অঞ্চলের মানুষ। চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারের সাথে সড়ক যোগাযোগের মূল সেতুবন্ধন রচনা হয়েছে এই সেতুকে ঘিরে। সেতুটির উপযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উভয় পাশে ৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার জন্য ২০১২ সালে ১৩ জুন দাতা সংস্থা কেএফএইডি এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চলমান চুক্তির আওতায় একটি সংশোধিত ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বহদ্দারহাট ইন্টারসেকশন হতে কর্ণফুলী সেতুর উত্তর প্রান্তের সংযোগ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে সার্ভিস সড়কসহ ছয় লেনে উন্নীতকরণ, কর্ণফুলী সেতুর দক্ষিণ সংযোগ থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, চারটি ব্রিজ, আটটি কালভার্ট এবং দু’টি আন্ডারপাস (কালামিয়া বাজার ও রাহাত্তারপুল) নির্মাণ। গত বছরের ৬ মার্চ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডবিøউএমসিজি-মীর আক্তার-সাদিম আল কুয়েত জেভির সাথে কাজ সম্পাদনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জানা গেছে, ৬ লেনের মধ্যে সড়কের উভয় প্রান্তের এক লেন করে সার্ভিস রুট থাকবে। সার্ভিস রুট দিয়ে চলাচল করবে স্থানীয় যানবাহন এবং মাঝের ৪ লেন হবে ডেডিকেটেড রুট। সাড়ে ৪ মিটার গভীরতার ৩.৬৫ মিটার প্রশস্ত আন্ডারপাস দু’টি দিয়ে উভয় প্রান্তের সার্ভিস রুটে যাতায়াতের সুযোগ থাকবে। ডেডিকেটেড ৪ লেন সড়ক দিয়ে বহদ্দারহাট থেকে সরাসরি শাহ আমানত সেতু এলাকা ছাড়া মাঝে অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। ফলে মাত্র ৫ মিনিটেই ৫ কিলোমিটার পথ পার হওয়া যাবে। আট কিলোমিটার এ সংযোগ সড়কটি স¤প্রাসারিত হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে সাথে সংযোগ স্থাপন করবে। সড়কটি চট্টগ্রাসহ দেশের অন্যান্য জেলার সাথে কক্সবাজারের যোগাযোগ আরও সহজ ও গতিশীল হবে। সড়কটি দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্প নগরী স্থাপন ও উন্নয়নে সহায়ক হবে।
প্রকল্প পরিচালক সড়ক বিভাগের প্রকৌশলী আবু হেনা মোঃ তারেক ইকবাল বৃহস্পতিবার ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে। গত মার্চে মূলকাজ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত হলে তার আগে কাজ শেষ করা যাবে। কাজের জন্য এলাকায় যানজট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে সকল রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন