চীনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তের বিস্তৃতি ও দুর্গমতার কারণে সিরিয়া ও ইরাক থেকে কত সংখ্যক যুদ্ধাভিজ্ঞ উইঘুর যোদ্ধা জিনজিয়াংয়ে ফিরে এসেছে তা বলা কঠিন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়েদার পশ্চাদপসরণের পর থেকে স্বায়ত্তশাসিত জিনজিয়াং অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা কর্তৃপক্ষও সে বিষয়ে কিছু প্রকাশ করেনি। এদিকে সন্ত্রাসের বিস্তৃতির কালে অবশ্যই উইঘুরদের অসন্তোষ দূর করার প্রচেষ্টা নেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
চীনা কর্মকর্তারা গত বছর সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টাকালে বাধার সম্মুখীন জিহাদিদের সংখ্যা দশগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলেছেন। তবে তাদের হুমকি শুধু চীনের ক্ষেত্রেই সীমিত নয়, বিদেশে চীনা নাগরিক ও স্বার্থের উপর হামলা প্রমাণ করে যে এ সমস্যা মোকাবেলায় জটিল কৌশল প্রয়োজন।
সিরীয় কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, দেশের গৃহযুদ্ধ ও খিলাফত প্রতিষ্ঠার আইএসের চেষ্টায় সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার বিদেশী যোদ্ধার মধ্যে ৫ হাজার উইঘুর যোদ্ধা ছিল। যুদ্ধ শেষ হয়ে আসার পর্যায়ে এবং আইএসের পরাজয়ের প্রেক্ষিতে তাদের কিছু যোদ্ধার নিপীড়নের প্রতিশোধ গ্রহণ বা বিচ্ছিন্নতাবাদের নামে তাদের যুদ্ধ ও অস্ত্রের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে স্বদেশে ফিরে যাওয়া অনিবার্য হয়ে ওঠে।
কিছু উইঘুর বলেছেন, তাদের উপর নিপীড়নের জন্য বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে অস্ত্রের অভিজ্ঞতা লাভ ও কৌশল জ্ঞাত হওয়ার লক্ষ্যে তারা সুদূর রণাঙ্গনের উদ্দেশ্যে জিনজিয়াং ত্যাগ করেন। উইঘুর প্রবাসী ও পশ্চিমা মানবাধিকার গ্রæপগুলো জিনজিয়াংয়ে কঠিন নিরাপত্তা দমন অভিযানের শিকার হচ্ছেন যা অসন্তোষ সৃষ্টি ও স্বাধীন স্বদেশ ভ‚মির দাবি জোরদার করেছে।
২০০৯ সাল থেকে উগ্রপন্থীদের হামলায় শত শত, এমনকি হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে এর পিছনে রয়েছে ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট। বেইজিং বলেছে, এ গ্রæপটি ২০১৬ সালে কিরঘিজস্তানে চীনা দূতাবাসে আত্মঘাতী বোমা হামলায় জড়িত ছিল। ২০১৫ সালে ব্যাংককে একটি মন্দিরে বোমা হামলার জন্য উইঘুররা দায়ী। এতে ২১ জন পর্যটক নিহত হয় যার মধ্যে ৬জন ছিল চীনা।
২০১৫ সালে আইএস মধ্য ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চীন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করে। মে মাসে আইএস পাকিস্তানের কোয়েটা শহরে ২ চীনা নাগরিককে অপহরণ ও হত্যা করে। চীনের বাণিজ্য কৌশল বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে পাকিসÍান।
গত মাসে ইসলামাবাদে বেইজিং দূতাবাস চীনা নাগরিকদের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে।
মধ্যপ্রচ্য থেকে ফিরে আসা উগ্রপন্থীদের কারণে যে কয়েক ডজন দেশ সন্ত্রাসের হুমকির শিকার চীন তাদের মধ্যে একটি। জোরদার সীমান্ত নজরদারি , সন্ত্রাস দমন সহযোগিতার অগ্রগতি এবং অন্য দেশগুলো সহযোগিতার প্রতি বেইজিং ইতোমধ্যেই অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। কিন্ত অর্থনৈতিক সমতার উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে উইঘুরদের অসন্তোষের শিকড়ে পৌঁছানোর বৃহ্ত্তর প্রচেষ্টা নিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন