বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যন্ত্রণার আরেক নাম কাঁচপুর সেতু - ৪

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে আরেক যন্ত্রণার নাম কাঁচপুর সেতু। যাত্রাপথে মেঘনা ও গোমতী সেতুর আগে-পরে এ আরেক বিষফোঁড়া। যাত্রী ও গাড়ির চালকরা সর্বদা আতঙ্কে থাকেন এই সেতুর ভয়াবহ যানজট নিয়ে। ভুক্তভোগিদের মতে, মেঘনা -গোমতী সেতুর ভোগান্তি পেরিয়ে কাঁচপুর সেতু অতিক্রম করতে কতো সময় লাগবে তা কেউ বলতে পারে না। একইভাবে কাঁচপুর সেতুর যানজট ঠেলে মেঘনা-গোমতী সেতুতে কতো কখনও যানজটে আটকে থাকতে হবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা থাকেই। হাইওয়ে পুলিশের মতে, মেঘনা- গোমতী সেতুর গাড়ির চাপ এসে পড়ে কাঁচপুর সেতুর উপর। সেই সাথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চাপ তো আছেই। সবদিক সামাল দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে লেজেগোবরে অবস্থা হয়ে যায়। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঢাকার আসার পথে এখন নতুন করে যানজটের কবলে পড়তে হয় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠতে গিয়ে। যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার সময় গাড়িগুলো এলোপাথারিভাবে চলার কারনে এখন প্রতিদিনই এখানে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট হয়। অথচ এখানে রাতদিন পুলিশ থাকে না। ফ্লাইওভারের কর্মীরা ফ্লাইওভারের মুখে লোকাল বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারনে যানজটর প্রায়ই ভয়াবহ আকার ধারন করে।
সরেজমিনে কাঁচপুর সেতুর দুই পাড়ে গিয় দেখা গেছে, ঢাকা থেকে বের হওয়ার সময় গাড়িগুলো সেতুর আগেই সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড নামক বাস স্ট্যান্ডের কাছে এলোপাথারিভাবে দাঁড়ায়। এখানে বাসের জন্য পৃথক বে থাকার পরেও বাসগুলো মূল মহাসড়কের উপরেই দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। আবার দুপাশের বাম দিকের লেনে স্থায়ীভাবে কিছু গাড়ি দাঁড় করানো থাকে। এতে করে এই অঞ্চলে কয়েক কিলোমিটার ৮ লেনের মধ্যে চার লেনও ঠিকমতো গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকে না। আর সেতুর ওপাড়ে শিমরাইলে মহাসড়কের উপরেই রয়েছে ট্রাক, বাস, সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পু স্ট্যান্ড। সাথে রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোতো আছেই। শিমরাইল থেকে মদনপুর পর্যন্ত মহাসড়কের বেশিরভাগ অংশ বেদখল হয়ে যাওয়ায় গাড়িগুলো ঠিকমতো চলতে পারে। এর সাথে সেতুর মুখে যুক্ত হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পিকআওয়ারে পুলিশ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানবাহন সেতুর ওঠানোর সিগনাল দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহনকে আটকে রাখে। এতে করে ওই মহাসড়কে প্রায়ই লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার ঢাকা-সিলেট মহসাড়ক বন্ধ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহনকে সেতুতে ওঠার সুযোগ করে দিতে গিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাবধানে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। কখনও কখনও এই যানজট মেঘনা সেতু পর্যন্ত লম্বা হয়। তখন যানজট ক্রমে বাড়তে থাকে। পুলিশের আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। জানতে চাইলে শিমরাইল এলাকায় কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশ জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চাপ কমাতে সিলেট মহাসড়ক বন্ধ রাখতে গিয়েও বিপাকে পড়তে হয়। আবার মেঘনা-গোমতী সেতুর যানজটের প্রভাবে কাঁচপুর সেতুর শিমরাইল অংশে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ওই পুলিশ সদস্য বলেন, একদিকে চার লেন অন্যদিকে দুই লেনের মহাসড়ক ধরে আসা গাড়িগুলোর জন্য কাঁচপুর সেতু একেবারে দুর্বল মাধ্যম। এর বিকল্প ছাড়া যানজট এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে যতোদিন বিকল্প সেতু না হবে ততোদিন অপেক্ষা করতে হবে।
অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ৮ লেন। এই ৮ লেন মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ২ কিলোমিটার। এটি একদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে। শিমরাইলে যুক্ত হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাথে। মহাসড়কটি রাজধানীর সাথে দেশের ১৮টি জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আট লেনের মহাসড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা সিলেট মহাসড়কে প্রবেশ-বহির্গমনের প্রধান করিডোর। ২০১১ সালে চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। আট লেনের এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। অথচ উদ্বোধনের এক বছর যেতে না যেতেই ৮ লেনের বেহাল অবস্থা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮ লেনের সড়কটির সুফল পেতে রাস্তার দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা, পার্কিং ও দোকানপাটমুক্ত রাখা জরুরী ছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন মোড়ে ওভারব্রিজ বা ওভারপাস নির্মাণ করা উচিত ছিল। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট উদ্বোধনের আগেও মহাসড়কের দুপাশ থেকে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। যেগুলোর সিংহভাগই ছিল সরকার দলীয়দের। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আগের সেই চিত্র ফিরে এসেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্থানে একদিকের চার লেনের মধ্যে দুই লেন দখল করে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। আবার কোনো কোনো স্থানে এক লেনে গাড়ির স্থায়ী পার্কিং বানানো হয়েছে। যা উদ্বোধনের আগেও ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড এলাকায় মহাসড়কের দুপাশেই আগের মতোই অবৈধ দোকানপাট তোলা হয়েছে। শনিরআখড়ায় মহাসড়কের দুই দিকেই আবার আগের মতোই দোকান পাট বসানো হয়েছে। এর সাথে ট্যাক্সক্যাব, সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পু স্ট্যান্ডতো আছেই। আলাপকালে দুরপাল্লার বাস চালকরা জানান, ৮ লেনের কারনে যে সুবিধা তারা পাবেন বলে ভেবেছিলেন তা তারা পাচ্ছেন না। মহাসড়কের উপর দোকান-পাট, বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ডের কারনে কোনো গাড়িই নির্ধারিত গতিতে চলতে পারে না। আবার মহাসড়কের উল্টোদিকে রিকশা ও ভ্যান চলে হরদম। শুধু তাই নয়, শনিরআখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত উল্টোপথে বাস, ট্রাকও চলে। দখলমুক্ত না করায় ৮ লেনের মহাসড়কেও প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন