বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

হাথুরুর বাংলাদেশ বধ

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ : ২৪ ওভারে ৮২
শ্রীলঙ্কা : ১১.৫ ওভারে ৮৩/০
ফল : বাংলাদেশ ১০ উইকেটে পরাজিত
ইমরান মাহমুদ : এ যেন বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের সেই বাংলাদেশ! একের পর এক ভুল শট খেলে প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দেয়ার সেই মিছিল। চার বছর পর একশ রানের মধ্যে অল আউট বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা লক্ষ্যের ৮৩ রান পেরিয়ে যায় ১০ উইকেট আর ২২৯ বল হাতে রেখেই। বলের ব্যবধানে যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে হার। ২০০৭ সালে ২৬৪ বল হাতে রেখে বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডেতে এ নিয়ে দ্বাদশবারের মতো ১০ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার কাছে এ নিয়ে তৃতীয়বার এমন লজ্জায় পড়ল মাশরাফির দল। তাও আবার এমন একটা সময়, যখন জিম্বাবুয়ের কাছেও সিরিজ হারে এই শ্রীলঙ্কা! তিন ম্যাচে বড় জয় আর বোনাস পয়েন্ট নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে। অথচ সেই দলটিরই গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে এমন হার! দুই দলের প্রথম দেখায় বাংলাদেশ পেয়েছিল ওয়ানডেতে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয় (১৬৩ রানে)। ১০ উইকেটের জয়ে তার বদলা নিয়ে ফাইনালে পৌঁছাল শ্রীলঙ্কা।
ঘরের মাঠে চার বছর আগে একশ রানের নিচে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে সেদিনের পিচও ছিল পেস বান্ধব। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাটিং স্বর্গে উইকেট বিলিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে গুটিয়ে গেছে ৮২ রানে। আগের তিন ম্যাচে দাপটের সঙ্গে জেতার পর হঠাৎ এমন দশা বেশ অবাক করারই মতো। নিজেদের ইতিহাসে একশো রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার এটি ১৬তম ঘটনা, অষ্ঠম সর্বনিম্ন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ২০০২ সালে কলম্বোতে একবার ৭৬ রানে অল আউট হয়েছিল, লঙ্কানদের বিপক্ষে তিন অঙ্কের নিচে থামার ঘটনা এই নিয়ে দ্বিতীয়বার।
গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের ষষ্ঠ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৪ ওভারে মাত্র ৮২ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন মুশফিকুর রহিম। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাব্বির রহমানের ১০ রান ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছুতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার হয়ে সুরাঙ্গা লাকমাল ২১ রানে নেন ৩ উইকেট, দুসমন্ত চামিরা, থিসরা পেরেরা ও সান্দাকান নেন ২টি করে। জবাবে শুরুর জুটি ১১.৫ ওভারে জয় এনে দেয় শ্রীলঙ্কাকে। উপুল থারাঙ্গা অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। দানুশকা গুনাথিলকা ৪০ রানে। ২২৯ বল বাকি রেখে জিতল শ্রীলঙ্কা। দুই দল মিলিয়ে ম্যাচ স্থায়ী হল ৩৫.৫ ওভার।
একদিকে বাংলাদেশের আগেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় ‘আত্বতুষ্টির’ কালো থাবা, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার সামনে ‘জিততেই হবে’ ধরণের মনোভাবÑদুইয়ে মিলে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ।
স্কোর কার্ড দেখে মনে হতে পারে উইকেটে বুঝি ছিল কোন জুজু। তবে বাংলাদেশে ব্যাটিং দেখলে সে ভ্রান্তি থাকার কথা নয়। এনামুল হককে নিয়ে আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। দৃষ্টিকটু সব আউট হওয়া তার প্যাশনে পরিণত হয়েছে। এবারও তার বত্যয় ঘটেনি। ৬ বল খেলে শূণ্য রানে লাকমালের বলে বোল্ড! কিন্তু সিরিজে দুর্দান্ত খেলতে থাকা সাকিবের কাছে কি তার রান আউটের কোন ব্যাখ্যা আছে? কিংবা টানা তিন ফিফটির পর শর্ট বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ৫ রান করা তামিমের ক্যাচ? ১৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর এদিন মাহমুদউল্লার কাছে ভক্তদের একটা চাওয়া ছিল। তিনিও ফেরেন শট বলে ক্যাচ দিয়ে। আত্মাহুতির মিছিলের বীপরিতে কিছুটা ঠান্ডা মাথায় খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। তার ধৈর্য্যশীল ৫৬ বলে ২৬ রানের ইনিংসটি দীর্ঘ হতে দেননি চামিরা।
এরপর যখন ঠান্ডা মাথায় বড় জুটির দিকে নজর দেয়া দরকার তখন বাজে শট নিয়ে আউট হন সাব্বির। এই সময়ও ১০ রানের ইনিংসে তার দুটি চার প্রমাণ করে, কতটা অস্থির ছিলেন তিনিও। সুযোগ পাওয়া আরেকজন নাসির হোসেনও দিতে পারেন নি নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান। মাত্র ৩ রানে সাজঘরে ফেরা এই অলরাউন্ডারের সিরিজে ৪ ম্যাচে সাকুল্য রান ২০, সর্বোচ্চ ১৫ (প্রথম ম্যাচে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে)। রেকর্ড দিয়ে আন্তর্জাতকি ক্রিকেটে আলো ছড়ানো সেই আবুল হাসান রাজুও তাদের কাতারে। সানজামুল ইসলামের জায়গায় সিরিজে প্রথমবারের মত সুযোগ পাওয়া এই পেস অল-রাউন্ডারের প্রায় তিন বছর পর জাতীয় দলের জার্সিতে ফেরাটা হয়নি সুখকর। ৭ বলে এক চারে ৭ রান। ফল? বাংলাদেশ ৮২ রানে অল আউট!
মনে হয় বাংলাদেশের দুর্বল জায়গাগুলো চান্দিমালদের সফলভাবে বাৎলে দিতে পেরেছেন কোচ হাথুরুসিংহে। সেই মন্ত্রেই বাংলাদেশকেও আরেকবার লজ্জায় ডোবাতে পারল লঙ্কানরা। আরেকবার প্রমাণ হল, পর পর দুই ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারে না শ্রীলঙ্কা। আগামীকাল এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই মিরপুরেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলবে মাশরাফির দল।

 

স্কোর কার্ড
ত্রিদেশীয় সিরিজ, ষষ্ঠ ম্যাচ
বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা, মিরপুর
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম ক গুনাথিলাকা ব লাকমল ৫ ১৪ ০ ০
এনামুল ব লাকমল ০ ৬ ০ ০
সাকিব রান আউ (গুনাথিলাকা) ৮ ৮ ২ ০
মুশফিক ক মেন্ডিস ব চামিরা ২৬ ৫৬ ১ ০
মাহমুদুল্লাহ ক চামিরা ব লাকমল ৭ ২০ ১ ০
সাব্বির ক বদলি (মাদুশনকা) ব পেরেরা ১০ ১২ ২ ০
আবুল হাসান ক ডিকভেলা ব পেরেরা ৭ ৭ ১ ০
নাসির ক ডিকভেলা ব চামিরা ৩ ১৩ ০ ০
মাশরাফি ব সান্দাকান ১ ৪ ০ ০
রুবেল ক থারাঙ্গা ব সান্দাকান ০ ২ ০ ০
মুস্তাফিজ অপরাজিত ১ ২ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৪, ও ১০) ১৪
মোট (২৪ ওভার, অল আউট) ৮২
উইকেট পতন : ১-৫ (এনামুল), ২-১৫ (সাকিব), ৩-১৬ (তামিম), ৪-৩৪ (মাহমুদুল্লাহ), ৫-৫৭ (সাব্বির), ৬-৭১ (আবুল হাসান), ৭-৭৯ (মুশফিক), ৮-৮০ (নাসির), ৯-৮১ (মাশরাফি), ১০-৮২ (রুবেল)।
বোলিং : লাকমল ৭-১-২১-৩, চামিরা ৫-১-৬-২, পেরেরা ৬-০-২৭-২, সান্দাকান ৬-০-২৪-২।
শ্রীলঙ্কা (লক্ষ্য ৫০ ওভারে ৮৩ রান) রান বল ৪ ৬
গুনাথিলাকা অপরাজিত ৩৫ ৩৫ ৩ ২
থারাঙ্গা অপরাজিত ৩৯ ৩৭ ১ ৩
অতিরিক্ত (নো ব ১, ও ৮) ৯
মোট (১১.৫ ওভারে বিনা উইকেটে) ৮৩
বোলিং : মাশরাফি ২-০-১৫-০, আবুল হাসান ৪-০-২৫-০, নাসির ৩-০-১৯-০, মুস্তাফিজ ১.৫-০-১৪-০, সাকিব ১-০-১০-০।
ফল : শ্রীলঙ্কা ১০ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : সুরঙ্গা লাকমল

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন