বাংলাদেশ দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় চলছে বললে বোধ হয় বাড়িয়ে বলা হবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটো বৃহৎ রাজনৈতিক দল পালাক্রমে দেশ শাসন করছে। ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়। নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। বেগম জিয়া ৯ বছর রাজপথে থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এদেশের জনগণ তার প্রতিদান স্বরূপ বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসান। ৯৫/৯৬ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকার আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও করে ১৭৩ দিন হরতাল করে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামাত দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদ ধবংস করে। এক সময় আওয়ামী লীগ সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। বিএনপি প্রথম দিকে তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থার বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও শেষদিকে ব্যবস্থাটির যৌক্তিকতা অনুধাবন করে। কিন্তু বিল পাস করার মত নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এবং এক মাসের মাথায় তত্ত¡াবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিল সংসদে পাস করে সংসদ ভেঙ্গে দেয়। ঐ সালেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে জাতীয় পার্টির সহায়তা নিয়ে সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে একই পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপি নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। লগি-বৈঠার আন্দোলনের ফলে ২০০৭ সালে ১/১১ সামরিক বাহিনী সমর্থিত মঈনউদ্দীন-ফখরুদ্দীনের সরকার গঠিত হয়। তারা দু’বছর জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ’৯১ সাল থেকে শুরু করে পর পর ৩টি নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনটি তত্ত¡াবধায়ক না হলেও মঈনউদ্দীন-ফখরুদ্দীনের সরকার দলীয় সরকার ছিল না। সে নির্বাচনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল বলে অনেকে মনে করেন। যাহোক আমার কথা হলো, নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধীপক্ষ জয়লাভ করেছে।
বিপত্তি ঘটেছে ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন প্রতিদ্ব›দ্বীহীন একদলীয় নির্বাচন নিয়ে। এ নির্বাচনে দেশের বৃহত্তম দল বিএনপি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতি না মানায় তারা নির্বাচন বয়কট করে। ৪২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের জোটবদ্ধ ১২টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। বিরোধীদল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে প্রতিরোধের ডাক দেয়। জনগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত হয়। ১৪৬টি আসনে নামমাত্র ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। বহু কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। কেন্দ্রগুলোতে কুকুর বেড়াল শুয়ে শুয়ে অলস সময় কাটায়। ভোট কেটে বাক্স ভরাটের হার ৪০%-৪৫% দেখানো হয়। বিদেশি পর্যবেক্ষক ছাড়াই অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে নানাভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে গ্রহণযোগ্য করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। দেশ-বিদেশে নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়। একে তামাসার নির্বাচন, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, কলংকজনক নির্বাচন প্রভৃতি বিশেষণে ভূষিত করা হয়। সরকার অবশ্য এরূপ প্রশ্নবিদ্ধ ও একতরফা নির্বাচনকে সাফল্য হিসাবে বিবেচনা করে।
বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো নির্বাচনকে বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেবার তাগিদ দিতে থাকে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর দেয় ওয়াদার কথা বার বার স্মরণ করে দিয়ে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে বলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের কথায় এতটুকু সাড়া না দিয়ে কঠোর হাতে আন্দোলন দমনের ঘোষণা দেন। নির্বাচনের পর প্রায় একবছর সময় দিয়ে বেগম জিয়া আন্দোলনের ডাক দেন। অবরোধ শুরু হয়। সে আন্দোলন অনেকদিন চলে। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে অনেক সম্পদ ও প্রাণহানি ঘটে। সরকার নির্মম ও নিষ্ঠুর উপায়ে আন্দোলন দমন করে। জ্বালাও-পোড়াও কারা করেছে এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় নি। সরকার ও বিরোধীদল একে অপরকে দোষারূপ করে থাকে। তৃতীয় মাত্রায় এক অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম সত্য উদঘাটনের জন্য জাতিসংঘের তত্ত¡াবধানে তদন্ত করা হোক। বিশেষ করে যেসব জায়গায় পেট্রোল বোমা মেরে মানুষকে দগ্ধ করা হয়েছে সেসব ঘটনার একটি নিরপেক্ষ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য তদন্ত হলে আসল অপরাধী বের হয়ে আসবে। আমার বিরোধী বন্ধু বলেছিলেন তদন্ত লাগবে কেন? বিএনপি-জামাতের অপরাধীরা ইতোমধ্যে ধরা পড়েছে। আমি সবিনয়ে বলেছিলাম ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেকে পেট্রোল বোমা তৈরিতে ধরা পড়েছে। কিভাবে বিচার করবেন কারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে? ঘটনাস্থল থেকে কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি। অনুমান নির্ভর হাজার হাজার বেনামী আসামী করে মামলা-হামলা ও গ্রেফতার বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে।
সরকারি দলের নেতানেত্রীরা প্রায়ই বলে থাকেন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে আলোচনার জন্য টেলিফোন করেছিলেন। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনটি ছিল সাজানো নাটক। মিডিয়াকে প্রস্তুত রেখে টেলিফোন করার অশুভ উদ্দেশ্য সহজেই অনুমান করা যায়। সে সময় বিরোধীদলের হরতাল ছিল। ২০ দলের ডাকা হরতালের মধ্যে বেগম জিয়া সাড়া দিতে পারেন নি। তাঁর নিজের ডাকা কর্মসূচীকে তিনি অবজ্ঞা না করে পরবর্তী যেকোন সময় আলোচনায় রাজী ছিলেন। হবু চন্দ্রের মত নিজের আইন নিজে ভেঙ্গে জনতার আদালতে আসামী হতে চাননি। ফলে সে ডাকে বেগম জিয়া সাড়া না দিলেও কখনোই সাড়া দেবেন না এমন ভাবার কোন কারণ নাই। বেগম জিয়া তথা বিরোধী দল বার বার সংলাপ আয়োজনের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারী দল সংলাপ আহŸানে সাড়া দিয়ে বিরোধীদলের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিএনপি একটি ভদ্র ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। গায়ের জোরে তারা কোনকিছু না করে আলাপ-আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। বেগম জিয়ার মূল শক্তি হলো দেশের জনগণ। তারা কি চান ভাবতে হবে। এদেশের আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা, সুশীল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক সকলে বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের একটি সুষ্ঠু সমাধান চান। প্রশ্ন হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সমস্যা সংকটকে সংকট মনে করেন কি না। তিনি যদি একে রাজনৈতিক সংকট মনে করেন সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমাধানই কাম্য। সংকট সমাধানে আন্দোলন সংগ্রামের বদলে আলাপ আলোচনা করে সুন্দর একটি সমাধান বের করা যায়। দেশের মানুষ আন্দোলন সংগ্রামের বদলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সুন্দর সুষ্ঠু সমাধান চায়।
সরকারি দল বলছে, নির্বাচন হবার আগে কারচুপির অভিযোগ আঁচ অনুমান করা উচিত নয়। নির্বাচনে কারচুপি হলে দেশ-বিদেশের মানুষ, পর্যবেক্ষক, অসংখ্য মিডিয়া চোখ-কান খোলা রেখেছে। এতগুলো চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু করতে গেলে ধরা পড়বে। কথা হলো, ’১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন বাদে আওয়ামী লীগের অধিনে অসংখ্য স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে যার কোনটিই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। ব্যাপক কারচুপি, জালিয়াতি ও চুরির মহোৎসব চলেছে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুটি ধাপ মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে। পরের ধাপগুলোতে এমন ব্যাপক কারচুপি হয়েছে যে, প্রথম দু’ধাপে বিএনপি এগিয়ে থাকলেও পরবর্তী ধাপগুলোতে অনেক পিছিয়ে পড়ে। পৌরসভা, ইউপি প্রভৃতি নির্বাচনে সরকারী দলের তান্ডবের কাছে বিরোধীদল দাঁড়াতেই পারে নি। সমতল খেলার মাঠ না পাওয়ায় বিরোধীদল কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এসব নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টির খোঁজ নাই বললেই চলে। স্থানীয় নির্বাচনে নিরপেক্ষতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় বিরোধীদল সরকারী দলের উপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করতে পারছে না। স্থানীয় নির্বাচনে যারা লোভ সংবরণ করতে পারে নি, জাতীয় নির্বাচনে নিরপেক্ষ থেকে নিজেদের ভরাডুবি নিশ্চিত করবে এমন ভাবা যায় না। বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে বিরোধী দল ব্যাপক কারচুপি প্রত্যক্ষ করে সরকারের অধীনে নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। মিডিয়া ও দেশ বিদেশের মানুষ স্থানীয় নির্বাচনে ভোট ডাকাতী ও বিরোধীদলের উপর জুলুম-অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছে যা পত্রিকায় ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনের পর একটু হৈ চৈ হবার পর ধীরে ধীরে উত্তেজনা স্তিমিত হয়ে পড়ে। ঢাকা-চিটাগাং এ দুটি সিটি কর্পোরেশনে ব্যাপক সন্ত্রাস ও ভোটডাকাতী দেখে বিএনপি ভোট বর্জন করতে বাধ্য হয়। বিদেশি কূটনীতিকরা তামাসা ও সন্ত্রাস কবলিত ভোট ডাকাতী প্রত্যক্ষ করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহŸান জানান। কোথায় তদন্ত আর কোথায় জবাবদিহিতা? একবার ফলাফল পক্ষে আনতে পারলে আর যায় কোথায়! হাজার চোখ ও মিডিয়া যতই তামাশার নির্বাচন বলুক তাতে সরকারের কিছু যাবে আসবে না। বহাল তবিয়তে বন্দুকের নল দিয়ে আবার পাঁচ বছর দুর্দান্ত প্রতাপে দেশ শাসন করবে যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো ৫ জানুয়ারির ভোটার বিহিন, প্রতিদ্ব›দ্বীতাহীন একপক্ষীয় নির্বাচন। তামাশার নির্বাচন করে যেভাবে ৫ বছর টিকে আছে, প্রতিদ্ব›দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন হলে কোন কথাই নাই। যে যাই বলুক, ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে সরকার দেশ পরিচালনা করবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আন্দোলন করতে গেলে হাজার হাজার মামলা-হামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন, রিমান্ড, হাজার হাজার বেনামী আসামী প্রভৃতি খড়গ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর নেমে আসবে। তারা মামলা, হামলা ও গ্রেফতার বাণিজ্যের মোকাবেলা করবে, না কারচুপির নির্বাচন বাতিলের আন্দোলন করবে?
বলা হয়, সহায়ক সরকারের রূপরেখা বিএনপি দেয় নি। কিসের উপর আলোচনা হবে? প্রশ্ন হলো আলোচনায় বসার ইচ্ছাই যেখানে নেই সেখানে রূপরেখা দিয়ে লাভ কী? রূপরেখা দিতে খুব বেশী সময় লাগবে বলে মনে হয় না। বিএনপির নেতানেত্রীরা ইতোমধ্যে সম্ভবত রূপরেখা তৈরি করে ফেলেছেন। আর যদি তৈরি না হয় সেক্ষেত্রে কাঠামো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার উপর রূপরেখা তৈরীতে সময় লাগার কথা নয়। আসল কথা, সরকারের সদিচ্ছা আছে কি নেই? সরকার যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে রাজী থাকে তাহলে বিএনপি সেই সরকারের রূপরেখা দিতে বাধ্য। সরকারি নেতানেত্রীরা যেখানে সহায়ক সরকার ব্যবস্থার ঘোরতর বিরোধী, সেক্ষেত্রে রূপরেখা দেওয়া ও না দেওয়া একই কথা। রূপরেখা দেবার সাথে সাথে সরকারি তরফ থেকে হেঁসে উড়িয়ে দিয়ে বিএনপির প্রতি উপহাস করবে, এটা স্পষ্টত বোঝা যায়। বিভিন্ন সময়ে সরকারি দলের নেতানেত্রীরা সহায়ক সরকার নিয়ে যেসব কটু কাটব্য ও টিপ্পনী কেটেছেন তাতে তাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি সহজেই অনুমান করা যায়। সদিচ্ছা থাকলে সরকার কিছুতেই তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করত না। সংবিধান সংশোধন কমিটি, এমিকাস কিউরী, সুশীল সমাজÑ সকল তরফ থেকে তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতি রাখার পক্ষে মত দেয়া হয়। এমন কি তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল করার পরেও পর্যবেক্ষণে আর ও দু-টার্ম এই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে পক্ষে মত দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হলে আরও দু-টার্ম তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থা রাখতে পারতেন। সংসদ তার আজ্ঞাবহ অর্থাৎ তার সদিচ্ছাই তত্ত¡াবধায়ক পদ্ধতি বহাল রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল। সকল পক্ষ যেখানে এই পদ্ধতির পক্ষে ছিল, কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রীর অনিচ্ছা পদ্ধতিটি বাতিল করায় অসংখ্য জীবন ও সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। এই অবস্থা প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে এড়াতে পারতেন। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও ভবিষ্যত রাজনৈতিক অঙ্গন সহনীয় রাখতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ও সদিচ্ছা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। একবার ডেকে সাড়া পাওয়া যায় নি বলে আর আলোচনাই করা যাবে না, এটি রাজনৈতিক ভাষা নয়। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। দেশ ও দেশের মানুষের প্রত্যাশা ও প্রয়োজনকে বিবেচনায় নিয়ে আলাপ আলোচনার পথ প্রসস্থ করার বিকল্প নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মত আর কোন নির্বাচন মানুষ দেখতে চায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চান না। আর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন না চাইলে সরকারকে সংলাপ আয়োজন করতে হবে। আমরা আশা করি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু সমাধান বেরিয়ে আসবে। ২০১৮ সালে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দেশের মানুষের সাথে আন্তর্জাতিক মহলও খুশী হবে। ৫ জানুয়ারির কলংকজনক ইতিহাস ঢাকা পড়ে এক উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ জেগে উঠবে। মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। রাজনীতিকদের প্রশংসায় জনগণ পঞ্চমুখ হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে অনাগ্রহ যেন কথার কথা না হয়। মানুষ প্রধানমন্ত্রীর নিকট সদিচ্ছাপ্রসূত কর্মকান্ড প্রত্যাশা করে।
লেখক: প্রফেসর (অব.), দর্শন বিভাগ ও সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন